কাশ্মীর। —ফাইল চিত্র
‘অ-কাশ্মীরি, কাশ্মীর ছাড়ো!’
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের আগে থেকেই এই বার্তা দিতে শুরু করেছিল কোণঠাসা হয়ে পড়া জঙ্গি সংগঠনগুলি। হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার রিয়াজ নাইকু বিশেষ মর্যাদা লোপের আশঙ্কা করে হুমকি বার্তায় বলেছিল, সরকার কাশ্মীরে বড় মাপের কোনও পদক্ষেপ করলে বেছে বেছে হত্যা করা হবে অ-কাশ্মীরিদের।
গত সাত-আট দিনে অন্তত এক ডজন অ-কাশ্মীরি ব্যক্তির হত্যায় এক দিকে জঙ্গি গোষ্ঠীর হুমকির প্রতিফলন ঘটেছে। অন্য দিকে উপত্যকার সার্বিক নিরাপত্তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত এই ঘটনা নিয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি সরকার। অন্য সব রাজনৈতিক দল মুখ খুললেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব চুপ। তা নিয়েও নানা শিবিরে প্রশ্ন উঠছে। কংগ্রেসের লোকসভার নেতা ও বহরমপুরের সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘আমার কেন্দ্রের পাঁচ বাসিন্দার হত্যাকাণ্ড নিয়ে টুইটার-ব্যস্ত নরেন্দ্র মোদী এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতর মৌনব্রত নিয়েছেন। তাই এ নিয়ে তাঁরা কোনও টুইট করেননি।’’
রাত পোহালেই রাজ্যের মর্যাদা হারাবে জম্মু-কাশ্মীর। আত্মপ্রকাশ করবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে। তার আগে জঙ্গিদের একের পর এক হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আজ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে-ভাবে বেছে বেছে অ-কাশ্মীরিদের নিশানা বানানো হচ্ছে, তার মধ্যে নির্দিষ্ট যোগসূত্র রয়েছে। স্বরাষ্ট্র সূত্র জানিয়েছে, জঙ্গিরা এখন অপেক্ষাকৃত সহজ লক্ষ্যবস্তুকেই নিশানা করছে। গত সপ্তাহে শোপিয়ানের ট্রেন্জ এলাকায় একই কায়দায় হামলা চালায় জঙ্গিরা। আপেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দারা আক্রান্ত হন। অবিলম্বে তাদের কাশ্মীর ছাড়তে বলে জঙ্গিরা। মন্ত্রক মনে করছে, ভিন্ রাজ্যের লোকেরা যাতে কাশ্মীর ছাড়তে বাধ্য হয়, তার একটি প্রচেষ্টা চলছে কয়েক দিন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘ট্রাকচালক, আপেল বাগানের কর্মী, রাজমিস্ত্রির মতো ভিন্ রাজ্য থেকে আসা ব্যক্তিদের নিশানা করা হচ্ছে। লক্ষ্য হল অর্থনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি করা। এক বার তাতে সফল হলেই, গোটা দেশকে বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে বলেই মনে করছে জঙ্গিরা।’’ স্বরাষ্ট্র কর্তারা ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, সে-কাজে অনেকটাই সফল তারা। সরকারি ভাবে মেনে নেওয়া না হলেও স্বরাষ্ট্র কর্তারা স্বীকার করছেন, গত কয়েক দিনের ঘটনার পর থেকেই উপত্যকার বিভিন্ন অংশ ছেড়ে জম্মুর দিকে নেমে আসতে শুরু করেছেন ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দারা। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের পক্ষ থেকে অন্য রাজ্যের মানুষকে আপাতত উপত্যকা ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তেমনই ট্রাক চালকদের সেনা ছাউনি সংলগ্ন এলাকায় রাত কাটানোর পরামর্শ দিচ্ছে প্রশাসন। বিজেপি নেতা রাম মাধবের মতে, এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে মূলত ব্যবসায়ী ও শ্রমিক শ্রেণিকে ভয় দেখাতে চাইছে জঙ্গিরা।
তবে জঙ্গিদের এ ভাবে নিরীহ মানুষের উপরে হামলার অতীত ইতিহাস রয়েছে। নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীর প্রথম যখন অশান্ত হয়ে ওঠে, তখন কাশ্মীরি পণ্ডিতদের এ ভাবে বেছে বেছে হত্যা করে আতঙ্কের আবহ তৈরি করেছিল জঙ্গিরা। বাজপেয়ীর আমলে হিজবুলের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি ভাঙার ঠিক আগে ভিন্ রাজ্যর শ্রমিকদের খুন করা হয়েছিল। এমনকি অতীতে যখনই জঙ্গিদের পিঠ ঠেকে গিয়েছে, তখনই পর্যটকদের উপরে হামলা করতেও পিছপা হয়নি তারা। তবে গত কালের কুলগাম হামলার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পিডিপি সাংসদ মহম্মদ ফয়াজ়। ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও দায় স্বীকার করেনি কোনও জঙ্গি গোষ্ঠী। তাই কী ভাবে, কারা ওই হত্যাকাণ্ড ঘটাল, তার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি তুলেছেন ফয়াজ়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy