সঞ্জীব সান্যাল
শিকড় কলকাতায়। পড়াশোনা এই শহরের সেন্ট জ়েভিয়ার্স স্কুল, সেন্ট জেমস স্কুলে। এর পরে দিল্লির শ্রীরাম কলেজ হয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এক সময়ে কাজ করেছেন ডয়েশ ব্যাঙ্কের গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিস্ট এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে। এখন মোদী সরকারের প্রিন্সিপাল আর্থিক উপদেষ্টা। বাজেট নিয়ে সেই সঞ্জীব সান্যালের সঙ্গে কথা বললেন প্রেমাংশু চৌধুরী।
প্রশ্ন: এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটে বেসরকারিকরণে অনেকখানি জোর দেওয়া হয়েছে। আর্থিক সংস্কারের পথে হেঁটে (পণ্য উৎপাদন ও পরিষেবা প্রদানের) সিংহভাগ ক্ষেত্র থেকেই সরকার বেরিয়ে আসতে চাইছে। আসল তাগিদ কি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে সরকারের আয় বাড়ানো?
উত্তর: অবশ্যই সরকারের অর্থ দরকার। কিন্তু একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, (অনেক সময়ই) রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিপুল সম্পত্তি কোনও কাজে লাগে না। আর্থিক লাভ হয় না। উল্টে অনেক সংস্থার লোকসানের জন্য মূল্য চোকাতে হয়। এই বিষয়টিও কিন্তু ভাবা প্রয়োজন। যে সমস্ত ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার দরকার নেই, সেখানে বেসরকারিকরণ হচ্ছে। উল্টো দিকে, উন্নয়নে টাকা জোগানোর মতো নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান (ডেভেলপমেন্ট ফিনান্স ইনস্টিটিউট) তৈরি হচ্ছে।
আমরা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছি না। হ্যালকে বিরাট অঙ্কের বরাত দেওয়া হয়েছে। যেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দরকার, সেখানে তা থাকবে। সেগুলি মজবুতও করা হবে। কিন্তু যেখানে তার প্রয়োজন কোনও দিন ছিল না, কিংবা আগে ছিল কিন্তু এখন নেই— এই সমস্ত ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ হচ্ছে। যেমন, বিমান পরিবহণ, হোটেল ইত্যাদি।
প্রশ্ন: সরকারের মতে, কড়া লকডাউনের কারণে অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে। আবার তেমনই লকডাউনের দরুন দেশে কোভিডে মৃত্যুর হারও কম। কিন্তু প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের (আইএমএফ) পরিসংখ্যান তুলে দেখিয়েছেন, দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে কোভিডে মৃত্যুর হারে ভারত উপরের দিকে। অর্থনীতির সঙ্কোচনের হারের বিচারেও তা-ই। কী বলবেন?
উত্তর: আইএমএফের পরিসংখ্যান কিন্তু বলছে, উনি যে দেশের বাসিন্দা, সেখানে কোভিডে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। করোনা নিয়ন্ত্রণে ভারত খুবই ভাল কাজ করেছে। লকডাউনের জেরে সঙ্কোচন হয়েছে। কিন্তু তেমনই মৃত্যুর হারও অনেক কম। যে দেশগুলির সঙ্গে তুলনা করলে ‘সুবিধা’ হয়, শুধু তাদের সঙ্গে তুলনা করলে তো চলবে না। ভারতের বিপুল জনসংখ্যাও খেয়াল রাখতে হবে।
প্রশ্ন: চলতি বছরের প্রকৃত খরচের তুলনায় নতুন অর্থবর্ষে বাজেটে বহু ক্ষেত্রেই বরাদ্দ কমানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াই কি আগেভাগে কিছুটা তুলে নেওয়া হল না?
উত্তর: অবশ্যই অনেক খরচ কাটছাঁট করা হয়েছে। সে সব খরচের আর প্রয়োজন হবে না। কারণ, আর লকডাউন করতে হবে না বলেই আশা। তবে পরিকাঠামোয় বরাদ্দ অভূতপূর্ব ভাবে বেড়েছে। ইতিমধ্যেই অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দাওয়াই প্রয়োগ শুরু হয়েছে। অক্টোবরে সরকারি খরচ আগের বছরের তুলনায় ১২৯% বেশি। নভেম্বরে তা ২৪৯%, ডিসেম্বরে ৬২%। অর্থনীতিতে তার প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। গাড়ি বিক্রি কিংবা উৎপাদনের সূচকে তা স্পষ্ট।
আমার ধারণা, অর্থনীতির এই গতি বজায় থাকবে। কারণ, আগামী বছরের ৬.৮% রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা দু’দিকে ভারসাম্য রেখেই স্থির হয়েছে। চলতি বছরের ৯.৫% থেকে তা অনেক কম। তেমনই আবার এতটাও কম নয় যে, খরচে রাশ টানতে হয়।
প্রশ্ন: অনেকের আশঙ্কা, এই বাজেটের দরুন মূল্যবৃদ্ধির হার আরও বাড়বে। আপনার মত?
উত্তর: লকডাউনের জেরে বাজারে জোগানে সমস্যা ছিল বলে মূল্যবৃদ্ধির হার মাথাচাড়া দিয়েছে। বিশেষত খাদ্যপণ্যে। কিন্তু এখন তা কমে এসেছে। আমরা জোগান বাড়াতে পদক্ষেপ করেছি। যদি অর্থনীতির চোখে পড়ার মতো উন্নতি হয় এবং তার সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির হারও অনেকখানি বেড়ে যায়, তা হলে অবশ্যই আমরা পদক্ষেপ করব। কিন্তু তেমনই সে ক্ষেত্রে তো মানুষের আয়, কর্মসংস্থানও বাড়বে।
প্রশ্ন: জিডিপি কমলেও, শেয়ার বাজার প্রচুর ফুলেফেঁপে রয়েছে বলে অনেকের ধারণা। এটা কি ঠিক?
উত্তর: এ নিয়ে মন্তব্য করব না। শেয়ার বাজার নিজের গতিতে চলবে। সেখানে সরকারের নাক গলানো উচিত নয়। সরকার শুধু দেখবে, তা মসৃণ ভাবে চলছে কি না এবং সেখানে রিগিং (নিয়ম ভাঙা) হচ্ছে কি না।
প্রশ্ন: বিভিন্ন রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের অভিযোগ, কেন্দ্র নানা শুল্ক কমিয়ে, তার বদলে সেস বসিয়ে পুরো আয় নিজের ঘরে তুলছে। যাতে করের মতো সেসের আয় রাজ্যগুলির সঙ্গে ভাগ করতে না হয়। এটি কি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী নয়?
উত্তর: এই অভিযোগ ঠিক নয়। পেট্রল-ডিজেলে যে অতিরিক্ত উৎপাদন শুল্ক কমানো হয়েছে, তার পুরো আয়ও কেন্দ্রের ঘরেই আসত। এখন তার বদলে বসানো সেস বাবদ আয় শুধু কৃষি পরিকাঠামো তহবিলের নির্দিষ্ট খাতে যাবে। (তা ছাড়া) আমদানি শুল্ক বাড়ানোয় রক্ষণশীল নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছিল। তখন তো কই বলা হয়নি যে, এর ফলে রাজ্যগুলিরও আয় বাড়বে।
প্রশ্ন: কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দু’মাস ধরে কৃষকদের আন্দোলন চলছে। এতে লগ্নিকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে না?
উত্তর: প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি, বিদেশি সংস্থাগুলির লগ্নির খতিয়ান কিন্তু সে কথা বলছে না। এমন কোনও অর্থনীতিবিদ নেই, যিনি নিজের কেরিয়ারে কখনও এই কৃষি সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করেননি। (সংস্কার কার্যকর হলে) ছোট-প্রান্তিক চাষিরা সব থেকে বেশি লাভবান হবেন। হতে পারে, (বিক্ষোভে) একটা আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের অসুবিধা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy