বিবাদে জড়িয়ে পড়লেন বঙ্গ বিজেপির দুই সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ও দেবশ্রী চৌধুরী। ফাইল চিত্র।
রামনবমী শোভাযাত্রা বিতর্কে হিন্দু ভোট মেরুকরণের আশায় বিজেপি নেতৃত্ব বুক বাঁধলেও, রাজ্যের বিজেপি নেতাদের গোষ্ঠী কোন্দল থামার কোনও লক্ষণ নেই। যা ফের আজ এক বার প্রকাশ্যে এল দিল্লিতে বিজেপি সদর দফতরে, সাংবাদিক বৈঠকের মঞ্চে। সাংবাদিক বৈঠকে প্রচারের আলো কে বেশি শুষে নিয়েছেন তা নিয়ে কার্যত প্রকাশ্য বিবাদে জড়িয়ে পড়লেন বঙ্গ বিজেপির দুই সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ও দেবশ্রী চৌধুরী। ঘরোয়া রাজনীতিতে যাঁদের মধ্যে এক জন শুভেন্দু অধিকারী শিবিরের ও অন্য জন দিলীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠবলেই পরিচিত।
রামনবমীর দিন থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বিজেপির শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে অশান্তির সাক্ষী থেকেছেন রাজ্যবাসী। গত কাল শোভাযাত্রা ঘিরে অশান্ত হয়ে ওঠে রিষড়া অঞ্চল। আজ সামগ্রিক ভাবে সেই সব গন্ডগোলের পিছনে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকার সমালোচনা করা, জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে অশান্তির তদন্তের দাবি জানানোর উদ্দেশ্যে দলের সদর দফতর থেকে সাংবাদিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তড়িঘড়ি ডাকা সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়, দেবশ্রী চৌধুরী, খগেন মুর্মু এবং জগন্নাথ সরকার, বাংলার এই চার সাংসদ। রাজ্যের ওই নেতাদের জাতীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন দলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র প্রেম শুক্ল। ঘটনাচক্রে এ দিনের ৩৭ মিনিট ধরে চলা সাংবাদিক বৈঠকে চার সাংসদ নিজের নিজের এলাকায় রামনবমীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে অশান্তির কথা জানালেও, মূলত বক্তব্য রাখতে দেখা যায় লকেটকেই। সাংবাদিকদের অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর দেন তিনিই।
সাংবাদিক বৈঠক শেষ হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন দেবশ্রী। চেয়ার ছেড়ে উঠে প্রথমে প্রেম শুক্লর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তার পরে মঞ্চেই লকেটের সঙ্গে কার্যত কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। শোনা যায় দেবশ্রী লকেটের উদ্দেশে বলছেন, ‘‘ডালখোলার হিংসা নিয়ে কথা বলার জন্য এই সাংবাদিক বৈঠকের গোটা ব্যবস্থাই আমি করেছিলাম। কিন্তু তুমি হুগলি নিয়ে কথা বলে গেলে। আমি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।’’ এর পরেই লকেটের উদ্দেশে দেবশ্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এ ধরনের নোংরা রাজনীতি কোরো না।’’
দেবশ্রীর আচমকা বাক্যবাণে কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়েন লকেট। সাংবাদিকদের সামনে খোলা মঞ্চে এ ধরনের কথা কাটাকাটি অযথা বিতর্ক বাড়াবে বুঝে তিনি দেবশ্রীকে থামানোর চেষ্টা করেন। সূত্রের মতে, তিনি বলেন ঘরে গিয়ে যা বলার বলুন। পরে ঘনিষ্ঠ শিবিরে লকেট দাবি করেন, তাঁকেও অমিত মালব্য সকালে সাংবাদিক বৈঠক করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই তিনি বক্তব্য রেখেছিলেন। সূত্রের মতে, প্রেম শুক্লকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, লকেট হবেন প্রথম বক্তা। ওই বিতর্ক নিয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে দেবশ্রী চৌধুরী ফোন ধরেননি। আর লকেট বলেন, ‘‘কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এ নিয়ে অযথা বিতর্ক অনভিপ্রেত।’’ দলীয় নেতাদের প্রকাশ্য কোন্দলে ক্ষুব্ধ রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। দলের এক নেতার বক্তব্য, এলাকায় অশান্তি হচ্ছে অথচ সেখানে নেতাদের যাওয়ার নাম নেই। উল্টে নিজেদের মধ্যে প্রকাশ্যে অশান্তি করে দলীয় কর্মীদের ভুল বার্তা দিচ্ছেন।
তবে এই ধরনের শোভাযাত্রা আগামী হনুমান জয়ন্তীর দিন পর্যন্ত চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন সাংসদ দিলীপ ঘোষ। সূত্রের মতে, বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন রামনবমীর ওই শোভাযাত্রা ঘিরে ধারাবাহিক অশান্তিতে আখেরে তাঁদের লাভ হচ্ছে। মেরুকরণ হচ্ছে হিন্দু ভোটের। বিশেষত যে ভাবে বিজেপি পরিচালিত শোভাযাত্রাগুলিতে মহিলারা অংশ নিচ্ছেন তা তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতারা। আগামী দিনে ওই হিন্দু ভোটের মেরুকরণ বিজেপি প্রার্থীদের পক্ষে যাবে বলেই আশায় বুক বাঁধছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। তবে পাল্টা আশঙ্কাও রয়েছে। হিন্দু ভোটের ওই মেরুকরণ অন্য দিকে একজোট করছে মুসলিম ভোটকেও। সাগরদিঘি উপনির্বাচন স্পষ্ট করে দিয়েছিল মমতার মুসলিম ভোটে ভাগ বসিয়েছে কংগ্রেস-সিপিএম জোট। বহুপাক্ষিক লড়াই হলে হিন্দু ভোটের মেরুকরণে ফায়দা হবে বিজেপির। কিন্তু একজোট মুসলিম ভোট যদি ফের তৃণমূলের পিছনে গিয়ে দাঁড়ায় সে ক্ষেত্রে লড়াই ফের দ্বিপাক্ষিক হয়ে উঠবে। যাতে রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হবে তৃণমূল। বিজেপির দাবি, সেই কারণেই অশান্তিতে নিরন্তর মদত দিয়ে চলেছে শাসক শিবির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy