যাত্রীদের সব তথ্যই রেল মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা আইআরসিটিসি-র কাছে জমা থাকছে। ফাইল চিত্র।
আপনি দুর্গাপুজোর সময় সপরিবার কাশ্মীর বেড়াতে যাবেন বলে ট্রেনের টিকিট কাটলেন। আইআরসিটি-র পোর্টালে পরিবারের সকলের নাম, বয়স জমা পড়ল। কোন ব্যাঙ্কের ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডে টিকিটের টাকা জমা করলেন, সে তথ্যও জমা হয়ে রইল। পরিবারের সঙ্গে অফিসের সহকর্মী বা পাড়ার বন্ধুরা থাকলে সে তথ্যও জমা হয়ে গেল।
রেলযাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া এই সব তথ্য বেচেই এ বার আইআরসিটিসি এক হাজার কোটি টাকা ঘরে তুলতে চাইছে। তার পথ খুঁজতে উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে রেল মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা আইআরসিটিসি। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এ দেশে এখনও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন তৈরি হয়নি। তার আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বেচে টাকা আয় করতে চাইছে কেন? এর ফলে সাধারণ মানুষের নাম, ধাম, মোবাইল নম্বর থেকে অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য আর গোপনীয় থাকছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
কী ভাবে রেলের যাত্রীদের তথ্য বেচে টাকা ঘরে তোলা সম্ভব?
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, শুধু এ বারের দুর্গাপুজো নয়। প্রতি বছর আপনি ট্রেনে চেপে কোথায় যান, কত বার যান, থ্রি-টিয়ার না কি টু-টিয়ারের টিকিট কাটেন, তার সব তথ্যই জমা হতে থাকে আইআরসিটিসি-র পোর্টালে। প্রতিদিন দু’কোটি মানুষ ট্রেনে চাপছেন। তার মধ্যে এক কোটি যাত্রী দূরপাল্লার ট্রেনে চড়ছেন। এঁদের সত্তর থেকে আশি ভাগ লোকই টিকিট কাউন্টারের বদলে অনলাইনে আইআরসিটিসি-র পোর্টালে টিকিট কাটছেন। তাঁদের সব তথ্যই রেল মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা আইআরসিটিসি-র কাছে জমা থাকছে। যাঁরা রেলের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণ করছেন বা পার্সেল পাঠাচ্ছেন, তাঁদের তথ্যও জড়ো হচ্ছে। পর্যটন থেকে পরিবহণ, অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসায় যুক্ত শিল্পমহলের কাছে এই সব তথ্য যথেষ্ট লোভনীয়। পর্যটন, হোটেল সংস্থাগুলি রেলের এই তথ্য দেখলেই বুঝে যাবে, কোন সময় মানুষ কোথায় বেশি বেড়াতে যান। যাঁরা বেড়াতে যাচ্ছেন, তাঁরা কেমন খরচ করেন, তাঁরা ট্রেনের কোন শ্রেণির টিকিট কাটছেন, এ সবই তথ্য দেখলে বোঝা সম্ভব।
আইআরসিটিসি যাত্রীদের তথ্য বেচার পরিকল্পনা ঘোষণা করতেই শেয়ার বাজারে সংস্থার শেয়ারের দর বেড়েছে। তথ্যের সুরক্ষার পক্ষে সওয়ালকারী সংস্থা ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন’-এর বক্তব্য, আইআরসিটিসি যে উপদেষ্টা সংস্থা নিয়োগ করবে, তারা যাত্রী, পণ্য পরিবহণের সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখবে কী ভাবে ও কাকে তা বেচা সম্ভব। নাম, ধাম, বয়স, মোবাইল নম্বর, ই-মেল আইডি, টাকা মেটানোর উপায়, লগইন আইডি, পাসওয়ার্ড থেকে কোন যাত্রী কত বার, কোথায়, কী ভাবে যাতায়াত করেন, তা-ও দেখা হবে।
এর আগে রেল মন্ত্রক তাদের কাছে সাধারণ মানুষের ১০০ টেট্রাবাইট তথ্য বেচে ঘরে টাকা তোলার পরিকল্পনা নিয়েছিল। ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশনে’র বক্তব্য, এর সবটাই হচ্ছে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের অনুপস্থিতিতে। সুপ্রিম কোর্ট ব্যক্তি পরিসরের অধিকারকে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে এ দেশে তথ্য সুরক্ষা আইনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। নরেন্দ্র মোদী সরকার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল সংসদে পেশ করলেও সম্প্রতি তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সংসদীয় কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে নতুন বিলের খসড়া তৈরি করে তা ফের সংসদে পেশ করা হবে। বিরোধীরা বলছেন, রেল মন্ত্রক কোভিডের পরে বয়স্কদের টিকিটে ছাড় তুলে দিয়েছে। কিন্তু যাত্রীদের তথ্য বেচে আয় করতে চাইছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy