ছবি: সংগৃহীত।
মালগাড়ি মালপত্র বহন করে। কিন্তু তার সময়ের হিসেব কার্যত থাকে না বলেই ওই ব্যবস্থায় পচনশীল পণ্য বহনে ঝুঁকি থাকে। তা ছাড়া তাতে বহন করা হয় লোহা, কয়লার মতো ভারী পণ্য। এ বার সময় নির্দিষ্ট করে পার্সেল ট্রেনে ফল, মাছ থেকে শুরু করে ওষুধপত্র পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে রেল। এ ভাবেই সড়কপথে ট্রাকে ওই সব পণ্য পরিবহণে ভাগ বসিয়ে নতুন বাজার ধরতে চাইছে তারা।
যাত্রী পরিবহণে আয়ের ঘাটতি কমিয়ে আনতে রেলকর্তারা আপাতত এটাকেই হাতিয়ার করছেন। তাঁদের বক্তব্য, এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। প্রথমত, পণ্য পরিবহণে নতুন দিশা পেয়ে যাচ্ছে রেল। দ্বিতীয়ত, যাত্রী-ট্রেনে আয়ের ঘাটতি এই ব্যবস্থায় পুষিয়ে যাবে অনেকটাই।
করোনা আবহে যাত্রিবাহী বহু ট্রেন এখনও চলাচল শুরু করেনি। যাত্রী-ভাড়া খাতে চলতি অর্থবর্ষে তেমন আয়ও হয়নি রেলের। এই আর্থিক বছরের শেষে যাত্রী-ভাড়া খাতে রেলের ঘাটতি প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে কর্তাদের অনুমান। সেই সমস্যা মেটাতে ঘড়ি ধরে পার্সেল ট্রেন চালানোর উপরে জোর দেওয়া হয়েছে রেলের সব জ়োনেই। পণ্য পরিবহণের এই নতুন ব্যবস্থার দৌলতে চলতি অর্থবর্ষে পণ্য পরিবহণে রেলের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে যাওয়া যাবে বলে আশা করছেন রেলকর্তারা। তাঁদের ধারণা, এতে যাত্রী পরিবহণ খাতে ক্ষতির বোঝা কিছুটা কমতেও পারে।
সারা দেশেই ডিসেম্বরে রেলে পণ্য পরিবহণের হার গত বছরের তুলনায় ৯% বৃদ্ধি পেয়েছে। পার্সেল ট্রেন থেকে আয়ের দরজা খুলেছে পূর্ব রেলও। গত ডিসেম্বরে পাঁচটি গন্তব্যে ৩৫টি পার্সেল ট্রেন চালিয়ে ৬৫২৫ টন পণ্য বহন করেছে তারা। এক মাসে আয় হয়েছে ২.১৮ কোটি টাকা। রেলকর্তারা জানান, ‘টাইম টেবলড পার্সেল’ বা ঘড়ি ধরে চলা পার্সেল ট্রেন ছুটছে যাত্রিবাহী ট্রেনের গতিতে। ফলে ওই ট্রেনের ছেড়ে যাওয়া এবং গন্তব্যে পৌঁছনোর সময় নির্দিষ্ট। মালগাড়ির মতো পথে ওই ট্রেনকে অকারণে আটকে রাখার বালাইও নেই। ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ওই ট্রেন পাড়ি দিচ্ছে গড়পড়তা ২০০০ কিলোমিটার পথ। স্থলপথে যা প্রায় অসম্ভব বলে জানাচ্ছেন রেলকর্তারা।
সময় বাঁচানোর মন্ত্রেই তাই ব্যবসা বাড়ছে রেলের। কাঁচা আনাজ, ফল, মাছ, পান, পাতিলেবু, ঘি, টাটকা ফুল, চারাগাছ থেকে জামাকাপড়, ওষুধ, পিপিই কিট, এমনকি ই-কমার্স সংস্থার পণ্যও পাড়ি দিচ্ছে পার্সেল ট্রেনে। পঞ্চাশ শতাংশের বেশি সময় সাশ্রয় তো হচ্ছেই। পার্সেল ভাড়াতেও ৩০% পর্যন্ত সাশ্রয় হচ্ছে ব্যবহারকারীদের। ‘‘পার্সেল ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা ছোট ব্যবসায়ীদের খরচ বাঁচিয়ে দিচ্ছে। দ্রুত পণ্য পৌঁছে যাওয়ায় পচনশীল পণ্যে লোকসান এড়ানো যাচ্ছে,’’ বলেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কমল দেও দাস।
পূর্ব রেলের হাওড়া, শিয়ালদহ ও কলকাতা স্টেশন থেকে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে গুয়াহাটি, আগরতলা, অমৃতসর, নয়াদিল্লি, গোরক্ষপুরের উদ্দেশে ছাড়ছে পার্সেল ট্রেন। দক্ষিণ ভারত ছাড়াও এ রাজ্যের চিংড়ি, বেশ কিছু মাছ কলকাতা হয়ে পার্সেল ট্রেনে উত্তর ভারতে পাড়ি দিচ্ছে। উত্তর-পূর্বের রাজ্য থেকে আসা বিভিন্ন ফল এবং ফুলের চারাগাছ কলকাতা ছুঁয়ে পৌঁছে যাচ্ছে রাজস্থান-সহ পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন শহরে।
সময় আর অর্থ সাশ্রয় করেই সড়ক পরিবহণে ট্রাকের বাজার ধরছে রেল। অতিমারিতে বহু ছোট পরিবহণ সংস্থা এখন বন্ধ। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে বাড়তি খরচ বহন করতে পারছেন না অনেকেই। সেখানেই এগিয়ে যাচ্ছে রেল। তবে ভবিষ্যতে যাত্রিবাহী ট্রেনের সংখ্যা বাড়লে পার্সেল ট্রেনের সংখ্যা ফের কমে আসার আশঙ্কাও আছে। কারণ, তখন এতটা সময় ধরে রেললাইন খালি না-ও মিলতে পারে বলে মনে করছেন অনেক রেলকর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy