ফাইল চিত্র।
মন্দার ছায়া অর্থনীতিতে। কমছে শিল্পোৎপাদন। তাল মিলিয়ে হ্রাস পাচ্ছে কাঁচামালের চাহিদাও। সার্বিক ভাবে যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রেলের পণ্য পরিবহণে। যা মূলত এত দিন নাগালে রেখেছিল রেলের যাত্রী ভাড়াকে। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে পণ্য পরিবহণে আয় এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে যাওয়ায় এ বার যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর ইঙ্গিত দিলেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ভি কে যাদব। তবে তাঁর দাবি, ‘‘বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই সব দিক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’ পণ্য পরিবহণের মাসুলেও সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল বোর্ড।
যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর প্রশ্নে রেল-কর্তারা কার্যত শাঁখের করাতে। যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর তিনটি জায়গা রয়েছে আপাত ভাবে। এক, দূরপাল্লার ট্রেনে বাতানুকূল কামরায়। দুই, দূরপাল্লার ট্রেনে স্লিপার ক্লাসে। তিন, লোকাল ট্রেনে। যাত্রী ভাড়ার ক্ষেত্রে রেলের প্রায় ২৬ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয় ফি বছর। এর একটি বড় কারণ বাতানুকূল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি। এই দুই শ্রেণিতে বর্তমানে ভর্তুকির পরিমাণ টাকা প্রতি ৭১ পয়সা ও ২৬ পয়সা। রেল মন্ত্রক নীতিগত ভাবে এসি ফার্স্ট ক্লাসে ভর্তুকি কমানো তথা ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সমস্যা এসি সেকেন্ড ক্লাস নিয়ে। রেল বোর্ডের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘বর্তমান সময়ে অধিকাংশ ট্রেনেই ফ্লেক্সি ফেয়ার পদ্ধতি চালু রয়েছে। তার ফলে অনেক ট্রেনে বাতানুকূল শ্রেণিতে ভাড়া বিমান ভাড়ার চেয়ে বেশি। ফলে বিমানের কাছে দ্রুত যাত্রী হারাচ্ছে রেল। অনেক আসন খালি যাচ্ছে প্রথম ও দ্বিতীয় বাতানুকূল শ্রেণিতে।’’ ভাড়া বাড়লে এই দুই শ্রেণিতে আরও যাত্রী হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
বিকল্প পথ তবে কী?
সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতিটি দূরপাল্লার ট্রেনে বাতানুকূল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কামরা কমিয়ে বাতানুকূল তৃতীয় শ্রেণির কামরা বাড়ানো হবে। কারণ, একমাত্র বাতানুকূল তৃতীয় শ্রেণিই রেলকে কিছুটা হলেও বাড়তি টাকা ঘরে ফিরিয়ে দিচ্ছে। ভাড়া বৃদ্ধির প্রশ্নে বাতানুকূল তৃতীয় শ্রেণিকে না ছোঁয়ারই পক্ষপাতী রেল-কর্তাদের একাংশ। তাতে যাত্রীরা আরও বেশি করে বিমানে যেতে পছন্দ করবেন।
লোকাল ট্রেন আর স্লিপার ক্লাসে?
রেল বোর্ডের বক্তব্য, লোকাল ট্রেন চালাতে গিয়ে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয় রেলের। আর স্লিপার ক্লাসে প্রতি টাকায় ৩৭ পয়সা ভর্তুকি দিতে হয় রেলকে। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে ওই শ্রেণিতে গত এক দশকে সে ভাবে বড় মাপের ভাড়া বৃদ্ধি হয়নি। স্লিপার ক্লাসে ভাড়া বাড়লে আঁচ পড়বে মূলত নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির উপরে। তাতে যে সরকারকে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়তে হবে, সেটা বিলক্ষণ জানেন রেল-কর্তারা। স্লিপার ক্লাসে ভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ তাই ঝুলে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। রেলের একাধিক কমিটিও শহর ও শহরতলির লোকাল ট্রেনে ভাড়া বাড়ানোর সুপারিশ করে আসছে। রেল-কর্তাদের অনেকেই এই খাতে ভর্তুকি কিছুটা কমানোর পক্ষে।
দেখার বিষয়, মাসুল ও ভাড়া সংস্কারে এই সব কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে কি না নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy