ছেঁটে ফেলতে হবে গাছের শুকনো ডাল। রূপক বলা হোক বা সঙ্কেত, বছর চারেক আগে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এমনই এক নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল রেলকে। এত দিন সেই ছেঁটে ফেলার কাজটা সে-ভাবে হয়নি। কিন্তু এ বার তার উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোন আধিকারিক বা কর্মী কেমন কাজ করছেন, তা নিয়ে রেলে রিপোর্ট তৈরির রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। এ বার এমন ভাবে সেই রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে আধিকারিকদের কাজে সন্তুষ্ট হতে না-পারলে তাঁদের অবসর নিতে বাধ্য করাতে পারে রেল।
এই নির্দেশের দু’রকম প্রতিক্রিয়া হয়েছে রেল মহলে। রেলকর্তাদের একাংশের মতে, সংস্থা পরিচালনায় দক্ষতা আনতে গেলে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা জরুরি। রেলের এক পদস্থ কর্তার বক্তব্য, সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজের ব্যবস্থা চালু করে কর্মসংস্কৃতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। দায়বদ্ধ করে তোলার জন্য কঠোর কিছু ব্যবস্থা চাই। আধিকারিকদের অন্য অংশ অবশ্য এই উদ্যোগের পিছনে কর্মী কমানোর পরিকল্পনা দেখছেন। কর্মী কমাতে এর আগে আয়কর বিভাগ ও শুল্ক দফতরে একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ।
আধিকারিকদের কে কেমন কাজ করছেন, সেই বিষয়ে খোঁজখবর করতে চলতি মাসেই রেলের সব জ়োনকে সময় ধরে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চালু করা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১১ জুন সব জ়োনে পাঠানো নির্দেশে বলা হয়েছে, গাফিলতির কী ধরনের অভিযোগ থাকলে কোনও অফিসারকে অবসর নিতে বাধ্য করানো যায়, তা মাথায় রেখেই মূল্যায়ন করতে হবে। এবং সেটা শেষ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।
প্রথম পর্বে রেলে কর্মরত গেজেটেড অফিসার পদমর্যাদার আধিকারিকদের এই মূল্যায়নের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। পরের ধাপে বিভিন্ন বিভাগে তত্ত্বাবধান এবং সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদেরও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার অধীনে আনতে হবে। রেল সূত্রের খবর, মূলত ‘গ্রুপ এ’ এবং ‘গ্রুপ বি’-র আধিকারিকেরা এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার আওতায় আসছেন।
যে-সব কারণে এক জন আধিকারিককে অবসর নিতে বাধ্য করানো যায়, তা আগেই নির্দিষ্ট ছিল বলে রেল সূত্রের খবর। তার মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি নির্দেশ না-মানা, ‘সার্ভিস রেকর্ড’ বা চাকরির নথিতে শৃঙ্খলাভঙ্গ বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া নথিভুক্তি, নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন, আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ, আচরণবিধি মেনে না-চলা ইত্যাদি।
রেলের বিভিন্ন বিভাগ বা শাখার প্রধানদের কাছ থেকে সময়ভিত্তিক মূল্যায়ন রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রেলের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, আধিকারিক ও কর্মীদের কে কেমন কাজ করছেন, তা নিয়ে রিপোর্ট তৈরির চল আগেও ছিল। তবে খুব গুরুতর অপরাধ বা কর্তব্যে গাফিলতি না-থাকলে পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্টের আশঙ্কায় সাধারণত কেউই অধস্তন কর্মীদের নেতিবাচক মূল্যায়ন করতেন না। মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার একটি অংশ দেখার সুযোগ পেতেন সংশ্লিষ্ট কর্মীও। কিন্তু এ বার মূল্যায়নের রিপোর্ট দিতে হবে নিশ্ছিদ্র গোপনীয়তা রক্ষা করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy