প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট ৭.২ শতাংশ বাড়াল চিন। যার অর্থ সেনাবাহিনীতে ব্যয়ের পরিমাণ ২৪,৫০০ কোটি ডলার ছাড়াবে। ভারতের প্রায় তিন গুণ। বৃহস্পতিবার চিন সরকারের বার্ষিক সম্মেলন ‘ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস’-এ এই ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় ক্রমেই বাড়াচ্ছে চিন। শতকরার হিসেবে দেখলে গত বছর যা বেড়েছিল, এ বারেও তাই রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে অবশ্য, খরচের আসল বহর সরকারি ভাবে যা ঘোষণা করা হচ্ছে তার থেকে আরও অন্তত ৪০ শতাংশ বেশি। বেশ কিছু জিনিসই লোকচক্ষুর আড়ালে রাখা হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। কিন্তু তাতেও সরকারি ঘোষণাটুকু যদি অনুসরণ করা হয়, তা হলেও ভারত অনেক পিছিয়ে। এ দেশে বার্ষিক প্রতিরক্ষা বাজেট ৭,৯০০ কোটি ডলার। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ব্যয়ের নিরিখে চিনের স্থান এখন গোটা পৃথিবীতে দ্বিতীয়। আমেরিকার ঠিক পরেই। চলতি বছরে আমেরিকার বাজেট বরাদ্দ ৯০,০০০ কোটি ডলার।
গোটা বিশ্বেই এখন যুদ্ধের দামামা বাজছে। আমেরিকা, তাইওয়ান, জাপান— একাধিক দেশের সঙ্গে বিবাদমান চিন। পাশাপাশি দক্ষিণ চিন সাগর কার, সে নিয়েও দ্বন্দ্ব তুঙ্গে। এই অবস্থায় সামরিক বাহিনীতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন ও বিপুল ব্যয় দেখে চিনের মতিগতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে অনেকেই। শোনা যাচ্ছে, নিজেদের শক্তিশালী পরমাণু অস্ত্রভান্ডার তৈরির লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর বেজিং। সেই সঙ্গে অন্যান্য অত্যাধুনিক অস্ত্রও তৈরি করা হচ্ছে। যুদ্ধবিমানের বহরও বাড়ানো হচ্ছে। একটি সূত্রের দাবি, চিনের নৌবহর নাকি বর্তমানে আমেরিকার থেকেও বড়। ৩৭০টি যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোজাহাজ রয়েছে তাদের।
সাম্প্রতিক কালে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও বদল হয়নি। সামরিক ক্ষেত্রে ব্যয়ের জন্য জিডিপি-র ১.৯ শতাংশ বরাদ্দ। সেনাবাহিনীর এক শীর্ষস্থানীয় কর্তার মতে, প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় আরও বাড়ানো উচিত সরকারের। বিশেষ করে চিন ও পাকিস্তানের কথা মাথায় রেখেই জিডিপি-র অন্তত ২.৫ শতাংশ সেনাবাহিনীতে ব্যয় করা উচিত। যদিও ১৪ লক্ষ সেনার বেতন, অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন, বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণেই বিপুল খরচ হয়ে যায়। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে মাত্র ৩০টি ফাইটার স্কোয়াড্রন রয়েছে, যা অনুমোদিত ক্ষমতার থেকেও কম। দেশজ ফোর্থ জেনারেশন তেজস যুদ্ধবিমান তৈরিতেই হিমশিম খাচ্ছে ভারত, চিন সেখানে ফিফথ জেনারেশন জে-২০ যুদ্ধবিমান নিয়ে হাজির। এমনকি আরও উন্নত সিক্সথ জেনারেশন বিমানের নকশাও তৈরি করে ফেলেছে তারা। নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি তারা পাকিস্তানকেও অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, অন্তত ৪০টি জে-৩৫এ ফিফ্থ জেনারেশন যুদ্ধবিমান ইসলামাবাদকে পাঠাতে চলেছে বেজিং। পরমাণু অস্ত্রের কথা ধরলেও ভারত ও পাকিস্তানের ভান্ডার মোটামুটি একই রকম। ১৬০ থেকে ১৭০টি পরমাণু যুদ্ধাস্ত্র। চিনের ভান্ডারে রয়েছে ৬০০-রও বেশি পরমাণু অস্ত্র। ২০৩৫ সালের মধ্যে যা ১০০০ ছাড়ানোর চ্যালেঞ্জনিয়েছে তারা। সংবাদ সংস্থা
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)