আমেরিকার সঙ্গে শুল্ক নিয়ে দর কষাকষির ক্ষেত্রে ভারত ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ ও ‘বিকশিত ভারত’-এর নীতি নিয়ে এগোবে বলে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল জানালেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতের উপরে পাল্টা চড়া শুল্ক বসানোর হুঁশিয়ারির মধ্যেই গত সপ্তাহে বাণিজ্যমন্ত্রী আমেরিকায় গিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছিলেন। যদিও এ বিষয়ে মোদী সরকারের কেউই এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেননি। আজ প্রথম এই বিষয়ে মুখ খুলে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিরের ভবিষ্যৎমুখী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে ভারত ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’, ‘বিকশিত ভারত’-এর পাশপাাশি সার্বিক রণকৌশলগত বোঝাপড়ার নীতি মেনে চলবে বলে গয়াল বোঝাতে চেয়েছেন, দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক শুধু বাণিজ্যিক নয়। তার মধ্যে রণকৌশলগত বোঝাপড়াও রয়েছে। আমেরিকার বাণিজ্যসচিব হাওয়ার্ড লুটকিনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল কি না, বা হলেও কী নিয়ে কথা হয়েছে সে বিষয়ে পীযূষ গয়াল নীরব থেকেছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল যখন আমেরিকায়, সে সময়েই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট একতরফা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, ভারত শুল্ক কমাতে রাজি হয়েছে। তাঁর বক্তব্য ছিল, ভারত আমেরিকা থেকে আমদানি করা পণ্যে বিপুল পরিমাণে শুল্ক চাপায়। আমেরিকাও ২ এপ্রিল থেকে পাল্টা চড়া শুল্ক চাপাবে। তবে ভারত শুল্ক কমাতে রাজি হয়েছে। ট্রাম্পের এই দাবি নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুললেও মোদী সরকার তা প্রকাশ্যে খারিজ করেনি। শুধুমাত্র বাণিজ্যসচিব সুনীল বার্থওয়াল বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে জানিয়েছিলেন, ভারত কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
আমেরিকা ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যে চড়া শুল্ক চাপালে কী হবে, তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই দেশের রফতানিকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার রাতে রফতানিকারীদের সঙ্গে বৈঠকে সেই আতঙ্ক দূর করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, বাণিজ্য মন্ত্রক নিশ্চিত যে ২০২৫-২৬-এ ভারতের রফতানি ৯০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছে যাবে। বাণিজ্যমন্ত্রীর যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক আমেরিকা সফরে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যে দর কষাকষি হবে, তাতে ভারতের স্বার্থ বজায় থাকবে।
উল্টো দিকে, রফতানিকারীদেরও রক্ষণশীল মনোভাব ছেড়ে ডাকাবুকো মনোভাব নিয়ে, নিজেদের জোরালো জায়গাগুলি চিহ্নিত করে রফতানির বাজার ধরার লড়াইয়ে নামতে হবে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে দর কষাকষির সময় মোদী সরকার কী কী দাবি করবে, তা-ও রফতানিকারীদের থেকে জানতে চেয়েছেন পীযূষ। বাণিজ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, ভারত শুধু আমেরিকার সঙ্গে নয়, একাধিক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা বলছে। এর মধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির দর কষাকষি চূড়ান্ত পর্যায়ে। চুক্তি হয়ে গেলে রফতানিকারীদের জন্য বাজার আরও বাড়বে।
শিল্প মহলের আশঙ্কা, আমেরিকা যে ভাবে চড়া শুল্ক চাপাতে চাইছে, তাতে চিন আরও সস্তায় ইস্পাত, প্লাস্টিক, রাসায়নিক পণ্য রফতানি করতে পারে। আমেরিকা ইতিমধ্যেই ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়ামের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে। ভারত বছরে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার মূল্যের ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রফতানি করে। প্রায় ১০০ কোটি ডলারের পণ্য এখন জাহাজে রয়েছে। ভারত থেকে আমেরিকায় জাহাজে চেপে পণ্য পৌঁছতে প্রায় ৬০ দিন সময় লাগে। এই সব পণ্যের উপরে চড়া শুল্ক চাপতে চলেছে। ছোট-মাঝারি শিল্পের রফতানিকারীরা চিন্তায় রয়েছেন। এমনিতেই নভেম্বর থেকে জানুয়ারি, টানা তিন মাস ভারতের পণ্য রফতানি কমেছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)