Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
India-Bangladesh Relation

তিস্তার জল সংরক্ষণে যাবে দিল্লির দল

কয়েক মাস আগেই ভারতের বিদেশ সচিব বিনয় কোয়াত্রা এবং শেখ হাসিনার বৈঠকের পরে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ নয়াদিল্লির ওই ‘প্রতিশ্রুতি’ ঘোষণা করেছিলেন।

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী। শনিবার নয়াদিল্লিতে।

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবিঃ পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪ ০৮:১৪
Share: Save:

নয়াদিল্লি-ঢাকা ‘সোনালি অধ্যায়’কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আজ হায়দরাবাদ হাউসে শীর্ষ বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আলোচনা হল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তার মধ্যে বাংলাদেশে তিস্তার জল সংরক্ষণ নিয়ে কিছুটা নিচু তারেই একটি বড় পদক্ষেপের সূচনা হল বলে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। বেজিং যাওয়ার আগে ভারত সফরকে জাতীয় স্বার্থে সফল ভাবে কাজে লাগালেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা। পাশাপাশি তিনি মোদীকে শীঘ্রই ঢাকায় যাওয়ার জন্য প্রকাশ্যেই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

দু’দেশেই নির্বাচনের পর প্রথম দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠকে প্রতিরক্ষা থেকে সন্ত্রাস মোকাবিলা, সীমান্ত সংযোগ থেকে শুরু করে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যৌথ অংশীদারি, সামগ্রিক অর্থনৈতিক অ‌ংশীদারি চুক্তি (সেপা) এগিয়ে নিয়ে যেতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সেনার আধুনিকীকরণে ভারত যে প্রশিক্ষণ, মহড়ায় নিবিড় সহযোগিতা করবে, তা-ও ‘ভিশন ডকুমেন্ট’-এ জানানো হয়েছে। মোদীর কথায়, “নয়াদিল্লির প্রতিবেশীই প্রথম নীতি, পুবে তাকাও নীতি, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দর্শন এবং সাগর নীতির কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশ।” হাসিনার বক্তব্য, “ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং আঞ্চলিক অংশীদার।”

আজকের বৈঠকের পরে নতুন সমঝোতাপত্র এবং পুরনো চুক্তির পুনর্নবীকরণের মাধ্যমে মোট দশটি চুক্তি সই হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সমুদ্র অর্থনীতি, পরিবেশ সংক্রান্ত অংশীদারি, ডিজিটাল অংশীদারি, নতুন রেল সংযোগ, সামরিক প্রশিক্ষণের মতো বিষয়। তবে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্র বলছে, আজকের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সবচেয়ে বড় দিক হল তিস্তা সংক্রান্ত একটি পদক্ষেপ, যা প্রধানমন্ত্রী খুবই সামান্য উল্লেখ করেছেন তাঁর বক্তৃতায়।

মোদীর কথায়, “আমরা সেপা নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য প্রস্তুত। ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি নদী প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ, এ ক্ষেত্রে আগাম সতর্কতা, পানীয় জলের প্রকল্পে যৌথ ভাবে কাজ করছি। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১৯৯৬ সালের গঙ্গা চুক্তির পুর্ননবীকরণের জন্য টেকনিক্যাল স্তরে আলোচনা শুরু করব।” এর পরেই তিনি বলেন, “বাংলাদেশের দিকের তিস্তার জলের সংরক্ষণ এবং পরিচালন পদ্ধতির উন্নয়নের জন্য খুব শীঘ্রই টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ যাবে।” আর ‘ভিশন ডকুমেন্ট’-এ ঢাকার তরফে বলা হয়েছে, ‘উন্নয়নে সহযোগিতার অঙ্গ হিসেবে বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তার জল সংরক্ষণে ভারতের সাহায্য নেওয়া হবে এবং তা হবে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে।’

ঘটনা হল, আগামী মাসেই চিন যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। বেজিং তিস্তা মহাপ্রকল্পে ভারতকে হটিয়ে নিজেদের অর্থ লগ্নির জন্য মরিয়া। তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি একটি দীর্ঘমেয়াদি বিতর্কিত বিষয়, যা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিতে বাস্তবায়িত হতে পারছে না। কিন্তু শুখা মরসুমে বাংলাদেশের দিকের তিস্তায় জলের সরবরাহ বজায় রাখার জন্য জলাধার গড়ার একটি মহাপ্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে ঢাকার, যার জন্য ভারতের কারিগরি দক্ষতা এবং অর্থ তাদের প্রয়োজন। সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে সহায়তার পূর্ণ আশ্বাস দিয়েছে ভারত এবং টেকনিক্যাল টিম পাঠানো তার সর্বপ্রথম ধাপ। এই সংরক্ষণ প্রকল্পের আনুমানিক খরচ ১০০ কোটি ডলার।

কয়েক মাস আগেই ভারতের বিদেশ সচিব বিনয় কোয়াত্রা এবং শেখ হাসিনার বৈঠকের পরে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ নয়াদিল্লির ওই ‘প্রতিশ্রুতি’ ঘোষণা করেছিলেন। বাংলাদেশ সূত্রের বক্তব্য, শুখা মরসুমে বর্ষার জল বিপুল ভাবে সংরক্ষণ করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ঢাকার পরিকল্পনা— ভারতের অর্থায়নে, ডালিয়ার চারপাশে এই জলাধার বা সংরক্ষণাগার তৈরি করা, যেখানে বাংলাদেশের একটি বাঁধ রয়েছে। দাবি, ভারতের দিক থেকে নৌ পরিবহণ শুল্ক বাড়ানো। বাংলাদেশের সরকারের মতে, ভারতের এই খরচ বহন করা উচিত। কারণ, ভারত নদীতে বাঁধ দেওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ গ্রীষ্মকালে যেমন সমস্যায় পড়ছেন, তেমনই বর্ষাকালেও সমস্যায় পড়ছেন। তাই ভারতেরই উচিত এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করা।

সিকিমে ভারত একাধিক বাঁধ তৈরি করেছে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য। ঢাকার অভিযোগ, প্রতিটি বাঁধের কারণে অন্তত পাঁচ শতাংশ করে জল কম আসছে বাংলাদেশে। এ ক্ষেত্রে চিনের তাস দেখানো হয়েছে ঢাকার পক্ষ থেকে। চিন যে এই প্রকল্পে এক কথায় রাজি, তা গোপন রাখা হয়নি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে। তাই হাসিনার চিনযাত্রার প্রাক্কালে মোদী তড়িঘড়ি টেকনিক্যাল টিম বাংলাদেশে পাঠাচ্ছেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।

আজ মোদীর কথায়, “আমরা গত এক বছরে দশ বার বৈঠকে মিলিত হয়েছি। তবে আজকের বৈঠকটি নিঃসন্দেহে বিশিষ্ট। কারণ, তৃতীয় বার আমাদের সরকার গঠিত হওয়ার পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই প্রথম রাষ্ট্রীয় অতিথি।” আর শেখ হাসিনার কথায়, “১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তৈরি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ সবসময়ই অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে মনে করে। আজকের বৈঠকেও পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মধ্যে রাজনীতি ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও সংযোগ, অভিন্ন নদীর জল বণ্টন, জ্বালানি ও শক্তি এবং আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছি।” নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে ঢাকা এবং দিল্লি নতুন ভাবে পথচলা শুরু করেছে, সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আমরা ‘রূপকল্প-২০৪১’-এর মাধ্যমে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা এবং পাশাপাশি ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’ নিশ্চিত করার জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sheikh Hasina PM Narendra Modi Teesta River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE