ছবি: সংগৃহীত।
ভারতকে বাদ দিয়েই চিন-সহ এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলি আবার বাণিজ্য চুক্তি ‘আরসিইপি’-তে সই করে ফেলায় প্রশ্নের মুখে পড়ল মোদী সরকার। মোদী সরকার কি বাণিজ্য চুক্তি করতে গিয়ে অর্থনীতির বাস্তব দিকটি নিয়ে ভাবছে? নাকি সেখানে রাজনৈতিক লাভক্ষতির প্রশ্নই বড় হয়ে উঠছে? অবাধ বাণিজ্য চুক্তি থেকে মুখ ফিরিয়ে থেকে মোদী সরকার ক্রমশ ‘রক্ষণশীল’ বাণিজ্যিক নীতিকেই আঁকড়ে ধরছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
কংগ্রেস নেতা তথা মনমোহন-সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার অভিযোগ, ‘‘ভারতেরই রণকৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য চুক্তিতে অংশ নেওয়াটা জরুরি ছিল। কিন্তু আরসিইপি-র বাইরে থাকাটা পিছনের দিকে হাঁটা হয়ে গেল।’’ প্রাক্তন অর্থসচিব অরবিন্দ মায়ারামের মতে, ‘‘২০১৪ পর্যন্ত আর্থিক বিষয়ক দফতর ও বাণিজ্য মন্ত্রকই বাণিজ্য নীতিতে প্রধান ভূমিকা নিত। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, এই দুই মন্ত্রক এখন অপেক্ষাকৃত কম প্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক ছড়ি ঘোরাচ্ছে। তার ফল হল, কঠিন অর্থনৈতিক বাস্তব বিবেচনা না-করে রাজনৈতিক লাভ-লোকসানের বিচারই বড় হয়ে উঠছে।”
কী সেই রাজনৈতিক বিবেচনা? বিরোধীদের জবাব, চিন। কূটনৈতিক সূত্রও মানছে, আরসিইপি-তে সই না-করার ক্ষেত্রে এখন সাউথ ব্লকের কাছে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক বিবেচনার বদলে চিনের প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে। একে ‘রাজনৈতিক লাভক্ষতির বিচার’ না বলে ‘রণকৌশলের প্রশ্ন’ বলে দাবি করছেন কূটনীতিকরা।
নয়াদিল্লি গত বছরই আরসিইপি নিয়ে আলোচনা থেকে সরে এসেছিল। মোদী সরকারের প্রধান আশঙ্কা ছিল, এই চুক্তির জেরে চিনের কম দামি পণ্য কোনও শুল্ক ছাড়াই ভারতের বাজারে ঢুকবে। লাটে উঠবে দেশীয় শিল্প। সঙ্ঘ পরিবারের নেতারাও এই চুক্তির প্রবল বিরোধী ছিলেন। আলোচনা থেকে সরে আসার পরে ভারতের অবস্থান ছিল, চুক্তিতে সই করার বিষয়ে পরে ভাবনাচিন্তা হবে। কিন্তু অতিমারি শুরুর পর থেকেই চিনের সঙ্গে আস্থার সম্পর্কে ঘাটতি বাড়তে বাড়তে এখন তা রীতিমতো সংঘাতের জায়গায় পৌঁছেছে। চিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বানিজ্যিক সম্পর্কেও তার ছায়া পড়ছে। এই অবস্থায় চিনের নেতৃত্বাধীন কোনও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিতে নাম লেখানোর অবস্থায় নয়াদিল্লি নেই। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আরসিইপি নিয়ে গত এক বছরে তাঁর বক্তব্য যে ভাবে বদলেছেন, তা থেকেই এ কথা স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
চলতি বছরের গোড়ায় রাইজিনা সংলাপে জয়শঙ্কর বলেছিলেন, ‘‘আরসিইপি-র জন্য দরজা পুরোপুরি বন্ধ করছে না ভারত। এ বিষয়ে লাভ-ক্ষতির অঙ্ক যাচাই করে দেখা হচ্ছে।’’ কিন্তু তার পর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে দ্রুত অধোগতি ঘটে। পূর্ব-লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন ভূখণ্ড দখল করে বসে আছে চিনা সেনা। জুন মাসে গলওয়ানে মারা যান ২০ জন ভারতীয় সেনা। এ বার ১৫টি দেশ আরসিইপি-তে সই করে ফেলার পরে জয়শঙ্কর যুক্তি দিয়েছেন, এমন কোনও চুক্তিতে ভারত সই করবে না, যা আদতে চিনের সঙ্গে অলিখিত বাণিজ্য চুক্তি। তাঁর দাবি, অতীতে অনেক বাণিজ্য চুক্তির ফলে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জয়শঙ্করের মুখে এমন ‘রক্ষণশীল নীতি’-র কথা শুনে অর্থ মন্ত্রক, বাণিজ্য মন্ত্রকের প্রাক্তন আমলারা বলছেন, মোদী সরকার সাম্প্রতিক অতীতে যে ভাবে একের পর এক আমদানি শুল্ক চাপিয়েছে, যে ভাবে দেশের কারখানায় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য উৎসাহ ভাতা ঘোষণা করেছে, তাতে ভবিষ্যতে কোনও বাণিজ্য চুক্তিতে সই করাটা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। মোদী সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে সঙ্ঘ পরিবারের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কেন আমরা অন্য দেশের সস্তার পণ্য বেচার জন্য বাজার খুলে দেব? কেন নিজেদের জন্য নিজেরাই উৎপাদন করব না? কেন দেশে কর্মসংস্থান তৈরি করব না?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy