Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
G 20

ইউক্রেন-কথা কম, রাশিয়ায় নরম জি২০

মস্কোকে সঙ্গে নিয়ে এ হেন ঘোষণাপত্রের জন্য আয়োজক দেশ হিসেবে সেই সময়ে বিশ্বের বড় অংশের প্রশংসা কুড়িয়েছিল মোদী সরকার।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:৩৪
Share: Save:

গত বছর নয়াদিল্লির ভারতমণ্ডপমে জি২০ ঘোষণাপত্রে ৭টি অনুচ্ছেদ ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নিন্দা করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সতর্কবার্তাটি হুবহু তুলে বলা হয়েছিল, ‘এই কালখণ্ড যুদ্ধের নয়’। মস্কোকে সঙ্গে নিয়ে এ হেন ঘোষণাপত্রের জন্য আয়োজক দেশ হিসেবে সেই সময়ে বিশ্বের বড় অংশের প্রশংসা কুড়িয়েছিল মোদী সরকার।

আজ ব্রাজিলের রিয়ো ডি জেনিরোতে এ বারের জি২০ সম্মেলন শেষে প্রকাশিত ঘোষণাপত্রে দেখা গেল, রাশিয়া সম্পর্কে সেটির অবস্থান তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই নরম। সাতটি দূরস্থান, মাত্র একটি অনুচ্ছেদ বরাদ্দ হয়েছে ইউক্রেনের বিভীষিকা নিয়ে। ‘যুদ্ধের সময় নয়’ কথাটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধের কুফল, মানুষের দুর্দশা নিয়ে সাধারণ সামাজিক দৃষ্টিকোণে বক্তব্য রয়েছে, কিন্তু ইউক্রেন আক্রমণের জন্য রাশিয়ার বিন্দুমাত্র সমালোচনা করা হয়নি ঘোষণাপত্রে। সব মিলিয়ে এই যৌথ বিবৃতিতে ইউক্রেনের উল্লেখ নামমাত্র।

কী রাখা হয়েছে রিয়ো ঘোষণাপত্রে? ইউক্রেন প্রসঙ্গ টানা হয়েছে গত বছরের দিল্লি সম্মেলন থেকে। বলা হয়েছে, ‘নয়াদিল্লিতে গত বছরে মানবিক দুর্দশা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছিল, তার সূত্র ধরে বলা যাচ্ছে যে, বিষয়টির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তায়।’ বলা হয়েছে, ‘সমস্ত রাষ্ট্রের মধ্যে ভাল, বন্ধুত্বপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক তৈরির জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদে নির্দিষ্ট নীতিগুলিকে তুলে ধরতে এবং স্থায়ী, সামগ্রিক, ন্যায্য শান্তির পরিবেশ গড়তে সাহায্যকারী সমস্ত গঠনমূলক আলোচনা ও পরামর্শকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।’

গত কালই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি ডিক্রিতে সই করে নতুন ভাবে পরমাণু আক্রমণের হুমকি দিয়েছেন, যার প্রথম লক্ষ্য ইউক্রেন। ওই ডিক্রিতে বলা হয়েছে, পরমাণু শক্তিধর নয় এমন রাষ্ট্র যদি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের সাহায্য পায়, তা হলে আত্মরক্ষার্থে তার উপরেও পারমাণবিক আক্রমণ চালাতে পারবে মস্কো। এমন মারাত্মক একটি ডিক্রি নিয়েও একটি শব্দ নেই রিয়ো বিবৃতিতে। সূত্রের খবর, পশ্চিমের দেশগুলি রাশিয়া সম্পর্কে এই নরম নীতি নেওয়ার বিরোধিতা করেছিল বৈঠকে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিবৃতির ভাষা নিয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় এই বিবৃতিতেই তারা সন্তুষ্ট থেকেছে। তবে বাইরে ব্রিটেন জার্মানি, কানাডার মতো অনেক দেশের নেতাই স্বর তুলেছেন বিবৃতির বিরুদ্ধে।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, গত এক বছরে দু’বার মস্কো সফর করেছেন মোদী। যুদ্ধ বন্ধে ভূমিকা নেওয়ার জন্য এবং কূটনীতি ও সংলাপে ফেরার জন্য ক্যামেরার সামনে ও একান্ত আলোচনায় তিনি বার বার অনুরোধ করেছেন পুতিনকে। গত বছর দিল্লি ঘোষণাপত্রে ইউক্রেনের দুর্দশা এবং হিংসার বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেওয়ার পিছনে ভারতের ভূমিকা অনস্বীকার্য ছিল। কিন্তু এ বছর রিয়ো ঘোষণাপত্রের পরে সাউথ ব্লকের কোনও স্তর থেকেই কোনও স্বর শোনা যায়নি। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, রাশিয়া এবং আমেরিকা, এই দুই বড় শক্তির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলা নয়াদিল্লির কাছে এই মুহূর্তে আগ বাড়িয়ে কোনও পক্ষ না নেওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। তার মূল কারণ ওয়াশিংটনে ক্ষমতা বদল।

ইউক্রেনকে সামরিক এবং নৈতিক সমর্থন দিয়ে আমেরিকার যে ডেমোক্র্যাট সরকার এত দিন পাশে ছিল, তারা ক্ষমতা থেকে সরে যাবে কয়েক সপ্তাহ পরেই। নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাথাব্যথা নেই ইউক্রেনের জন্য, বরং তিনি রাশিয়াকে এ ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে বিনিময়ে বড় কোনও সমঝোতা করতে বেশি আগ্রহী। সেই ছায়া বা গতিমুখ আজকের বিবৃতিতে দেখা গিয়েছে বলেই ভারত তাতে সই করেছে কি না, তা নিয়ে চর্চা চলেছে। রিয়ো ঘোষণাপত্রে অবশ্য গাজ়ার যুদ্ধ নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রয়েছে। সেখানে সামগ্রিক সংঘর্ষ বিরতির দাবি এবং মানবিক সাহায্যের কথা বলা হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Ukraine Russia India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy