হাতেগোনা দলের নামে রয়েছে ‘ভারত’। অনেক এগিয়ে ‘ইন্ডিয়া’। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
শেক্সপিয়র বলেছিলেন, ‘নামে কি যায়-আসে’! কিন্তু নাম যে একটা বড় বিষয়, তা যে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতিকে এতখানি আন্দোলিত করতে পারে, গত ২৪ ঘণ্টায় তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দেশের নাম ‘বদলের’ জল্পনা নিয়ে আকচাআকচি তুঙ্গে উঠেছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। কেউ বলছেন, ‘ইন্ডিয়া’ নয়, ‘ভারত’ই হোক দেশের নাম। কারও দাবি, সংবিধানকে ভুলুণ্ঠিত করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কারও বক্তব্য, বিজেপি বিরোধী জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ হওয়ার কারণেই মোদী সরকার দেশের ‘ইন্ডিয়া’ নাম বদলে দিতে চাইছে। আবার কেউ এমনও বলছেন যে, বেকারত্ব, কর্মহীনতা, মূল্যবৃদ্ধি থেকে নজর ঘোরাতেই এই বিতর্ক ‘পরিকল্পিত’ ভাবে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু যে রাজনৈতিক দলগুলি যুক্তি-পাল্টা যুক্তিতে রাজনীতির ময়দান তপ্ত করছে, তাদের নামে কে এগিয়ে? ‘ভারত’ না ‘ইন্ডিয়া’?
জাতীয় নির্বাচন কমিশন স্বীকৃত এবং কমিশনে নথিভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলির নাম দেখলে স্পষ্ট যে, ‘ইন্ডিয়া’র থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে ‘ভারত’। নির্বাচন কমিশন সর্বশেষ যে জাতীয় দলের তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতেও পিছিয়ে ‘ভারত’। একমাত্র বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি)-র নামেই ‘ভারত’ শব্দটি ভিন্ন আকারে জুড়ে রয়েছে। অথচ দু’টি দলের নামে রয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি। কংগ্রেস (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস) এবং সিপিএম (কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া মার্ক্সসিস্ট)।
কিন্তু এত বিরাট দেশের বিবিধ রাজ্যে অসংখ্য ছোট ছোট দল রয়েছে। রয়েছে আঞ্চলিক দলও। একাধিক রাজ্যে তারা সরকারও চালায়। সেগুলির মধ্যে আবার কোনও কোনও দল আগে জাতীয় দল ছিল। কিন্তু এখন নেই। যেমন বাংলার শাসকদল তৃণমূল। নির্বাচন কমিশনে তৃণমূলের নাম ‘অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস’ (এআইটিসি)। এমনকি, বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ-তেও শরিক দলগুলির নামে ‘ইন্ডিয়া’ এগিয়ে। এনডিএ-তে বিজেপি ছাড়া আর একটি দলের নামে ‘ভারত’ রয়েছে। সেটি কেরলের দল ‘ভারত ধর্ম জনসেনা’। সেই জোটে তিনটি এমন দল রয়েছে, যাদের নামের মধ্যে রয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি। তামিলনাড়ুর একদা শাসকদল এআইএডিএমকে (অল ইন্ডিয়া দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাঝাগাম), রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়া এবং অল ইন্ডিয়া এনআর কংগ্রেস।
বামপন্থী দল ফরওয়ার্ড ব্লকের পুরো নামের মধ্যেও রয়েছে ‘ইন্ডিয়া’— অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক (এআইএফবি)। আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দলের নামেও জ্বলজ্বল করছে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি। হায়দরাবাদের সাংসদের দলকে সংক্ষেপে ‘মিম’ বলা হলেও তাদের পুরো নাম অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন। অসমের একটি ছোট রাজনৈতিক দল রয়েছে, যার নাম অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কেসি চন্দ্রশেখর রাও আবার গত বছরই তাঁর দলের নাম টিআরএস (তেলঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি) থেকে বিআরএস (ভারত রাষ্ট্র সমিতি) করেছেন।
দেশের প্রথম কমিউনিস্ট পার্টি সিপিআই-এর নামেও রয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ (কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া)। হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌতালার দলের নাম ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোকদল। কেরলে মুসলিম লিগের যে অংশটি সক্রিয়, তাদের নামও ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ।
নির্বাচন কমিশনে নথিভুক্ত রয়েছে, এমন ছোট ছোট দলের নামের মধ্যেও ভারতের চেয়ে ইন্ডিয়ার সংখ্যাই বেশি। নামে ‘ভারত’ থাকা দলগুলির মধ্যে রয়েছে স্বামী চক্রপাণির অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা, ভারতীয় মাইনরিটিজ সুরক্ষা মহাসঙ্ঘ। আর নামে ‘ইন্ডিয়া’ থাকা দলগুলির মধ্যে রয়েছে নওশাদ সিদ্দিকিদের ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট, প্রভাস ঘোষদের সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অফ ইন্ডিয়া (কমিউনিস্ট), অল ইন্ডিয়া হিন্দুস্থান কংগ্রেস পার্টি, অল ইন্ডিয়া মহিলা এমপাওয়ারমেন্ট পার্টি, ইন্ডিয়ান গান্ধীয়ান পার্টি। এর মধ্যে অনেক দলই অবশ্য কার্যক্ষেত্রে অস্তিত্বহীন। আবার কারও কারও কোনও কোনও রাজ্যের নির্দিষ্ট অংশে প্রভাব রয়েছে। প্রশ্ন হল, দেশের নাম বদলালে কি এই সব দলের নামেও পরিবর্তন আনতে হবে? সম্ভবত না। কারণ, যে দলগুলির নামের সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি রয়েছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই নীতি এবং আদর্শের দিক থেকে বিজেপির বিরোধী। তারা বরং উল্টোটাই আরও বেশি করে করতে পারে। কারণ, ‘ইন্ডিয়া’ এবং ‘ভারত’ এখন রাজনৈতিক বৃত্তে ঢুকে পড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy