ফাইল চিত্র।
ক্ষোভের আগুন জ্বলছে শ্রীলঙ্কায়। কিন্তু হাওয়া কোন দিকে গড়ায় বুঝে না নিয়ে হাত পোড়াতে চায় না ভারত। আপাতত শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতিতে নিজেদের ভূমিকা নিয়ে এক কথায় এটাই বলছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক সূত্র।
এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ডামাডোল এবং পট পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে কলম্বো। এই পরিস্থিতিতে ভারতের প্রথম অগ্রাধিকার হল, এমন বার্তা দেওয়া যাতে মনে না হয় ক্ষোভের কেন্দ্রে থাকা রাজাপক্ষে পরিবার তথা বর্তমান সরকারকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বুধবার সকালেই কলম্বোয় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে টুইট করে জানিয়েছে, “বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে, ভারত নাকি গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে দেশের বাইরে চলে যেতে সাহায্য করেছে। আমরা সুনির্দিষ্ট ভাবে এই সব ভিত্তিহীন, আন্দাজে ঢিল ছোড়া খবর অস্বীকার করছি। ভারত শ্রীলঙ্কার মানুষকে সমর্থন করে চলেছে।” আরও একটি টুইটে বলা হয়েছে, “শ্রীলঙ্কার মানুষ সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ছুঁতে চায় গণতান্ত্রিক পথে। সংবিধানের প্রচলিত কাঠামো মেনেই।”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এর আগেই বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে একই ভাবে সে দেশের সরকার নয়, মানুষের পাশে থাকারই ডাক দিয়েছিল। ইঙ্গিত স্পষ্ট, রাজনীতিতে না জড়িয়ে মানবিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তাই করে যাওয়া হবে শ্রীলঙ্কাকে। আরসামরিক হস্তক্ষেপের তো কোনও প্রশ্নই উঠছে না।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, পরিবর্তিত ভূকৌশলগত পরিস্থিতিতে কলম্বোর রাজনৈতিক ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে, তা ঘোর অনিশ্চিত। তাই এখন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে চাইছে সাউথ ব্লক। শ্রীলঙ্কায় নির্বাচন পরিচালনা করে সে দেশের নির্বাচন কমিশন। পরিস্থিতি এখন কমিশনের হাতের বাইরে। তাই আপাতত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতেই চাইছে সাউথ ব্লক।
বিদেশ মন্ত্রকের এক সূত্রের মতে, “কলম্বোর নিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সঙ্গে ভারতের স্বার্থ অনেকটাই জড়িয়ে। তার কারণ এশিয়ার যে কোনও বড় শক্তির তুলনায় ভারত শ্রীলঙ্কার নিকটতম দেশই শুধু নয়, তার সঙ্গে নয়াদিল্লির ভূকৌশলগত এবং সভ্যতাগত সংযোগ সবচেয়ে বেশি। তাই নয়াদিল্লি এখনও পর্যন্ত খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধ দিয়ে যে ভাবে লঙ্কাবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে ভারত সম্পর্কে সেখানকার মানুষের কিছুটা ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি হয়েছে। সেটা আমরা নষ্ট করতে চাইছি না।”
এটা ঘটনা যে, শ্রীলঙ্কায় এখনও এমন বহু গোষ্ঠী, নেতা এবং সংগঠন রয়েছে, যারা ভারত-বিরোধিতায় এককাট্টা। সাম্প্রতিক অতীতে তারা বারবার এমন নানা বিষয় প্রচার করেছে, যা ভারতের জন্য অস্বস্তিকর। যেমন তারা দাবি করেছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী আদানি শিল্পগোষ্ঠীকে দিয়ে শ্রীলঙ্কায় বিভিন্ন প্রকল্প গড়ছেন নিজেদের সুবিধার্থে, ভারতীয় সেনা নাকি পাঠানো হয়েছে রাজাপক্ষে পরিবারকে বাঁচানোর জন্য, লঙ্কার রাজনীতিতে ঘুরিয়ে নাক গলাচ্ছে ভারত!
কূটনৈতিক শিবির বলছে, এই সব প্রচার সম্পর্কে সতর্ক থেকে আরও একটি বিষয়কে কাজে লাগাতে চাওয়া হচ্ছে। তা হল, এই প্রথম বারের জন্য সে দেশে চিনের বিরুদ্ধেও জনমানসে ক্ষোভ তৈরি হতে শুরু করেছে। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক অতীতে বড় কাঁটা হয়ে থেকেছে চিনের অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত সম্প্রসারণবাদ। কিন্তু এ বার চিনের ঋণের জালই যে শ্রীলঙ্কার এইবিপদের অন্যতম কারণ, সেটা শ্রীলঙ্কাবাসী বুঝতে পারছেন বলে বিদেশ মন্ত্রকের গোয়েন্দা দফতরের কাছে খবর। এই পরিস্থিতিকেযতটা সম্ভব কাজে লাগানোই দীর্ঘমেয়াদি বিচক্ষণতার পরিচয় বলে মনে করা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন, ‘হাউ চায়না লেন্ডস: আ রেয়ার লুক ইনটু হান্ড্রেড ডেট কন্ট্রাক্টস উইথ ফরেন গভর্নমেন্টস’-কে তুলে আনছে ভারতীয় কূটনৈতিক মহল। যেখানে ২৪টি দেশের সঙ্গে চিনের রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর করা ১০০টি ঋণচুক্তির বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, চিনের ঋণচুক্তি অন্য যে কোনও দেশের তুলনায় কতটা কঠোর এবং গোপনীয়তার শর্তসাপেক্ষ। বিনিময়ে অনেক বেশি সুযোগ তাদের দিতে হয়, দরকার হলে নিজের শয়নকক্ষের দরজাও হাট করে খুলে দিতে হতে পারে।
এ কথাও উঠে আসছে যে বর্তমান বিশ্বে চিনের পরিচিতি অনেকটা ঋণ দেওয়া সেই মহাজনের মতো, যে কিনা জমি বন্ধক নিয়ে ঋণ দেয় আর ওৎ পেতে থাকে ঋণ খেলাফ হলেই সম্পত্তি গ্রাস করতে। ফলে চিন বিরোধিতার এই আবহ কলম্বোতে যত বাড়বে, ততই সে দেশের মানুষের পাশে থাকার উদ্যোগ বাড়াবে নয়াদিল্লি। আর সেখানে যাতে গণতান্ত্রিক পথে শান্তি ফিরে আসে, নতুন শক্তিশালী সরকার তৈরি হয়, তার জন্য অপেক্ষা আর প্রয়াসও চালানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy