বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে নয়াদিল্লি এবং ঢাকার কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। তবে বাণিজ্যের উপর তার বিশেষ প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশে রফতানিও। বাণিজ্য এবং শিল্প মন্ত্রকের হিসাব বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারির তুলনায় এ বছরের জানুয়ারি মাসে রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৭.২৭ শতাংশ। গত মাসে ভারত থেকে বাংলাদেশে রফতানি হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৩৭৪ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার (ভারতীয় মুদ্রা) পণ্য। গত অর্থবর্ষের জানুয়ারিতে প্রায় ৭ হাজার ৯৯৯ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকার পণ্য ভারত থেকে রফতানি হয়েছিল বাংলাদেশে।
শুধু জানুয়ারি মাসেই নয়, গত দশ মাসের হিসাব ধরলেও গত অর্থবর্ষের তুলনায় চলতি অর্থবর্ষে বাংলাদেশে রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবর্ষে (২০২৩-২৪) এপ্রিল থেকে জানুয়ারির তুলনায় চলতি অর্থবর্ষে (২০২৪-২৫) এপ্রিল থেকে জানুয়ারির মধ্যে ৬.৬০ শতাংশ বেশি রফতানি হয়েছে। এই দশ মাসের মধ্যে প্রথম চার মাস হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিলেন। তার পরে দায়িত্ব গ্রহণ করে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৩-২৪ সালের এপ্রিল থেকে জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ৭৬ হাজার ৭৯৬ কোটি ১৩ লক্ষ টাকার পণ্য রফতানি করেছে ভারত। চলতি অর্থবর্ষে ওই একই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে রফতানি হয়েছে প্রায় ৮১ হাজার ৮৯২ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকার পণ্য।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
চলতি অর্থবর্ষের জানুয়ারিতে যে দেশগুলিতে ভারতের রফতানি সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। কেন্দ্রের হিসাব বলছে, গত মাসে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য রফতানি হওয়া দেশগুলির মধ্যে প্রথম পাঁচের মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া রয়েছে আমেরিকা (৩৯.০২ শতাংশ), জাপান (৫৩.৫৩ শতাংশ), ব্রিটেন (১৪.৮৪ শতাংশ) এবং নেপালও (২০.৮৪ শতাংশ)। গত অর্থবর্ষের তুলনায় এ বছরের জানুয়ারিতে রফতানি কমেছে ইতালি (২৭.৯৭ শতাংশ), হংকং (৪০.২৮ শতাংশ), সিঙ্গাপুরের (৫৩.৫৪ শতাংশ) মতো দেশগুলিতে। ফ্রান্সেও রফতানি কমেছে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ।
বস্তুত, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গত কয়েক মাসে। গত বছরের অগস্টে হাসিনা সরকারের পতন হয়। ভারতে সাময়িক আশ্রয় নেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। তার পর থেকে দুই প্রতিবেশী দেশের চাপানউতর শুরু হয়। হাসিনাকে ফেরত চেয়ে দিল্লিতে কূটনৈতিক বার্তা পাঠায় মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। ওই বার্তার প্রাপ্তিস্বীকার করলেও দিল্লির তরফে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি, সে দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদেই রয়েছেন। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ পছন্দ নয় বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সুস্থির করতে দু’দেশই আগ্রহ দেখিয়েছে। গত বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছেন। সম্প্রতি ওমানের রাজধানী মাস্কাটে বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেখানেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে মসৃণ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে গত শনিবার জয়শঙ্কর জানান, ভাল সম্পর্ক রক্ষার কথা বলে যদি সব বিষয়ে ভারতকে দোষারোপ করা হয়, তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে না। এর পরেই আবার তৌহিদ দাবি করেন, ভারতে বসে হাসিনা যে সব কথাবার্তা বলছেন, তাতে ‘ক্ষতি’ হতে পারে দুই দেশের সম্পর্কের।