ছবি: পিটিআই।
গত কাল মস্কোয় আলোচনার টেবিলে বসে সীমান্ত সংক্রান্ত পাঁচটি বিষয়ে একমত হয়েছে ভারত ও চিন। দু’দেশের যৌথ বিবৃতিতে তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। কিন্তু সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর সম্মেলনের ফাঁকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টার দৌত্য লাদাখের রণক্ষেত্রে শান্তি আনতে পারবে কিনা, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় থেকে গেল কূটনৈতিক শিবিরে।
বৈঠকের পর চিনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে যে বিবৃতিটি দেওয়া হয়েছে, তাতে স্পষ্ট, কিছু মতান্তর এখনও রয়ে গিয়েছে। সাউথ ব্লকের অবশ্য দাবি, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যে যুদ্ধকালীন তাপমাত্রায় পৌঁছে গিয়েছিল, মস্কোর বৈঠক তা এক ধাক্কায় অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। চিনের তরফে খানিকটা হলেও ইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিত আজই মিলেছে। অরুণাচলপ্রদেশের নিখোঁজ পাঁচ বাসিন্দাকে চিনা সেনা কাল ফিরিয়ে দেবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তবে লাদাখের সেনা-প্রস্তুতিতে তে এখনই কোনও মিল দেওয়া হচ্ছে না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছে ভারতের সেনা-সূত্র।
জয়শঙ্কর এবং ওয়াং ই-র বৈঠকের পর যে পাঁচটি বিষয় ভারত-চিন যৌথ বিবৃতিতে জায়গা করে নিয়েছে সেগুলি হল:
● দীর্ঘ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওঠাপড়া থেকে শিক্ষা নিয়ে মতবিরোধকে সংঘাতে পরিণত না-করা।
● দু'পক্ষের সেনাদের মধ্যে আলোচনা বাড়ানো এবং দ্রুত সেনা সরিয়ে তাদের মধ্যে যথার্থ দূরত্ব তৈরি করা। যাতে উত্তেজনা কমে।
● ভারত-চিন সীমান্ত সংক্রান্ত অতীতের সমস্ত চুক্তি এবং প্রোটোকল মেনে চলা। সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি এবং সুস্থিতি বজায় রাখা। উত্তেজনা বাড়তে পারে এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকা।
● সীমান্ত সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি পর্যায়ে দু'দেশের মধ্যে যোগাযোগ বহাল রাখা। সীমান্ত সংক্রান্ত মেকানিজমটিও (ডবলিউএমসিসি) চালু রাখা।
● পরিস্থিতি শান্ত হলেই নতুন আস্থাবর্ধক পদক্ষেপগুলির কাজ দ্রুত শেষ করা।
আরও পড়ুন: ভরসা ডিজিটাল, পুজোর আগেই কি লোকাল ট্রেন?
আরও পড়ুন: রদবদল কংগ্রেসে, রাহুলের ইচ্ছে মেনেই
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, চিনের বিদেশমন্ত্রীকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সীমান্ত সমস্যা মেটাতে সময় এবং উদ্যোগ প্রয়োজন। সেখানে শান্তি এবং সুস্থিতি বজায় না-রাখতে পারলে ভবিষ্যতে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। পূর্ব লাদাখের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তাই দু’দেশের স্বার্থেই দ্রুত জট ছাড়ানো প্রয়োজন।
সাউথ ব্লক সূত্রের বক্তব্য, চিনা সেনা যে ভাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে, তা নিয়ে বৈঠকে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। ওই বিপুল সেনা জমায়েত ১৯৯৩ এবং ১৯৯৬ সালের দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত চুক্তিকে বিঘ্নিত করছে এবং সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি করছে।
চিনা কর্তৃপক্ষ এখনও সেনা সমাবেশের প্রকৃত কোনও কারণ দেখায়নি। বরং তাদের সামনের সারির সেনাবাহিনীর উস্কানিমূলক আচরণের কারণেই সংঘাত হয়েছে। একতরফা ভাবে সীমান্তের স্থিতাবস্থা ভঙ্গ করার পদক্ষেপ (যা চিন করেছে) ভারতের পক্ষে যে মানা সম্ভব নয় তা-ও চিনা বিদেশমন্ত্রীকে জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। ভারতীয় সেনা যে সমস্ত সীমান্ত চুক্তি এবং প্রোটোকল অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছে সেই বার্তাও গত কাল বেজিং-কে দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের বক্তব্য, অবিলম্বে সংঘর্ষের ক্ষেত্রগুলি থেকে সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হোক। একমাত্র তা হলেই ভবিষ্যতে অনভিপ্রেত ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, লাদাখে এই কূটনৈতিক নীল নকশা কত দ্রুত বাস্তবায়িত হয়, এ বার সেটাই দেখার।
চিন দূতাবাস-সূত্রে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অবশ্য ভারতীয় অবস্থানের উল্টো সুরই দেখা যাচ্ছে। জয়শঙ্কর মস্কো রওনা হওয়ার আগে দিল্লিতে তাঁর একটি বই প্রকাশিত হয়। সেখানে স্পষ্ট বলা হয় যে, ভারত-চিন সীমান্তে শান্তি এবং সুস্থিতির সঙ্গে দু'দেশের সামগ্রিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক (অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক) যুক্ত। আজ চিনা দূতাবাস সূত্রের বক্তব্য, ‘ভারতই মনে করে দু'দেশের সীমান্ত সমস্যার সমাধানের সঙ্গে সামগ্রিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জড়িত। জয়শঙ্কর নিজেই গত কালের বৈঠকে জানিয়েছেন যে ভারতের চিন-নীতিতে কোনও বদল আসেনি।’ ভারত এবং চিনের সম্পর্ক আরও একবার মুখোমুখি সংঘাতের জায়গায় এসে পৌঁছেছে এ কথা উল্লেখ করে চিনা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ওয়াং ই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে সীমান্ত এলকায় অবিলম্বে উস্কানিমূলক আচরণ, গুলি চালানো বন্ধ করতে হবে।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy