Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪

চাপ বাড়াতে একজোট দিল্লি-কাবুল

এ-ও এক অভিযান। তবে সামরিক নয়, কূটনৈতিক। চিন্তা যেখানে সেই পাকিস্তান। লক্ষ্য যেখানে তিন দফা। এক, ইসলামাবাদকে কার্যত ডেকে সামনে বসিয়ে, সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে তাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিচ্ছিন্ন করা।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:০৮
Share: Save:

এ-ও এক অভিযান। তবে সামরিক নয়, কূটনৈতিক। চিন্তা যেখানে সেই পাকিস্তান। লক্ষ্য যেখানে তিন দফা।

এক, ইসলামাবাদকে কার্যত ডেকে সামনে বসিয়ে, সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে তাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিচ্ছিন্ন করা। দুই, সন্ত্রাস-বিরোধী পদক্ষেপের প্রশ্নে নিজেদের শর্তেই তাদের রাজি করানো। তিন, বহুপাক্ষিক (যার মধ্যে একটি পক্ষ খোদ পাকিস্তান) ঘোষণাপত্রে সীমান্তপারের সন্ত্রাসের তীব্র সমালোচনা করা।

উরি এবং নাগরোটা-পরবর্তী পর্যায়ে এমনই এক কূটনৈতিক অভিযানে নামতে চলেছে সাউথ ব্লক। এই মুহূর্তে নোট কাণ্ডে জেরবার মোদী সরকারের পাক-বিরোধিতার এই প্রয়াস কতদূর সফল হবে, সে বিষয়ে অবশ্য সন্দেহও প্রকাশ করছে কূটনৈতিক শিবির। তা সত্ত্বেও কাবুলকে পাশে নিয়ে এই লক্ষ্যেই ঝাঁপানোর জন্য সংশ্লিষ্ট নেতা-কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আগামী ৩ এবং ৪ তারিখ অমৃতসরে আফগানিস্তানের উন্নয়নকল্পে ৪০টি দেশ নিয়ে গঠিত ‘হার্ট অব এশিয়া’ আন্তর্জাতিক সম্মেলন। প্রথম দিন দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠক করবেন মোদী এবং আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। দ্বিতীয় দিন মন্ত্রীদের বৈঠক। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের অসুস্থতার জন্য সম্মেলনে যোগ দেবেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জোরালো বার্তা দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন জেটলি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তারা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই সম্মেলনে অন্যতম প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন পাক প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ। তাঁর সঙ্গে ভারতের কোনও নেতার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কোনও সম্ভাবনা এখনও পর্যন্ত নেই। কিন্তু সম্মেলনের কেন্দ্রীয় বিষয় যখন আফগানিস্তান-পরিস্থিতি, তখন তাদের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া রাষ্ট্র পাকিস্তানের মতামতকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা কারওই নেই বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। তা ছাড়া, যে কোনও বহুপাক্ষিক বিবৃতিতেই প্রতিনিধি সবক’টি দেশের সিলমোহর প্রয়োজন হয়। এই পরিস্থিতিতে পাক-বিরোধিতার তাসটি কৌশলী ভাবে ব্যবহার না করলে দিল্লির পরিকল্পনা মাঠে মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কূটনীতিকদের একাংশ। তাঁদের হুঁশিয়ারি, উরি হামলার পরে ব্রিকস সম্মেলনে তড়িঘড়ি এই তাস খেলতে গিয়েছিল ভারত। আদপে পাশে পায়নি কাউকেই। উল্টে ব্রিকসের মঞ্চকে বৃহত্তর উদ্দেশ্যে কাজেই লাগানো যায়নি।

আজ অবশ্য দিল্লিতে ভারত এবং আফগানিস্তানের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উষ্মাই ছিল প্রবল। ভারতে নিযুক্ত আফগান রাষ্ট্রদূত মহম্মদ আবদালি নাম না করে এবং বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ নাম করেই পাকিস্তানকেই সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত করেন। বোঝানো হয়েছে যে অমৃতসরের ঘোষণাপত্রে যাতে সীমান্তপারের সন্ত্রাস বন্ধ করার বিষয়টি অগ্রাধিকার পায়, তার জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়বে দিল্লি-কাবুল। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘সন্ত্রাস রফতানিতে ইসলামাবাদ নিজেদের এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে, যার ফলে কাবুলেরও এখন পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরি করাটা আবশ্যক হয়ে পড়েছে।’’

কী রাখা হতে পারে অমৃতসরের ঘোষণাপত্রে? বিদেশ মন্ত্রকের পাকিস্তান বিষয়ক যুগ্মসচিব গোপাল ওয়াগলের কথায়, ‘‘গোটা অঞ্চলের শান্তি এবং সুস্থিতি নষ্টের পিছনে রয়েছে সন্ত্রাসবাদ। এতে কারা মদত দিচ্ছে, আমরা সবাই জানি। ঘোষণাপত্রে এই বিষয়টির সরাসরি মোকাবিলা করার কথা বলা হবে। জঙ্গিদের মহৎ করে দেখানোর প্রচেষ্টাকে কী ভাবে বন্ধ করা যায়, সন্ত্রাস পরিকাঠামো কী ভাবে নির্মূল করা যায়, তার পদক্ষেপের হদিস দেওয়া হবে।’’ আফগান রাষ্ট্রদূত আবদানির কথায়, ‘‘পাকিস্তান নিজেও সন্ত্রাসবাদের অন্যতম শিকার। এমন ভাবে খসড়াটি করা হচ্ছে, যা না-মেনে পাকিস্তানের উপায় থাকবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Heart of Asia Summit India-Afghanistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy