বিরোধীদের প্রবল আপত্তির মধ্যেই আজ লোকসভায় পেশ হল অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিক সংশোধনী বিল। শতাব্দীপ্রাচীন অভিবাসন আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে সেটির সরলীকরণ, জাতীয় নিরাপত্তা শক্তিশালী করা ও অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার লক্ষ্যেই ওই নতুন আইন আনা হচ্ছে বলে দাবি কেন্দ্রের। যদিও বিরোধীদের মতে, মূলত বাংলাদেশ থেকে এসে ভারতে থেকে যাওয়া মুসলিমদের ধরপাকড় করাই ওই আইনের প্রধান লক্ষ্য হতে চলেছে, যাতে আগামী বছর অসম, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে পূর্ব ভারতে হিন্দু মেরুকরণের হাওয়া তোলা সম্ভব হয়।
আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পরিবর্তে প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই বিলটি লোকসভায় পেশ করেন। ওই বিলটিকে সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী বলে দাবি করে সেটি পেশের বিরোধিতা করেন কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি। তাঁর কথায়, ‘‘বিলটি সর্বনাশা ও দমনমূলক। কোনও বিদেশি নাগরিক বা অনাবাসী ভারতীয়ের যদি সরকারের সমালোচনা করার ইতিহাস থাকে, সে ক্ষেত্রে তাঁর এ দেশে প্রবেশ নিশ্চিত ভাবে বন্ধ করতেই ওই আইন আনা হচ্ছে।’’ উদাহরণস্বরূপ মণীশ বলেন, কয়েক বছর আগে কৃষক আন্দোলনের সময়ে বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে যাঁরাই বিদেশ থেকে ভারতে আসছিলেন, সেই অনাবাসীদের অধিকাংশকে ভারতে নামার পরেই বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। বিলটিকে ঘিরে নানাবিধ বিতর্ক থাকায় সেটি যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানোর সুপারিশ করেন তিনি। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও ওই বিলের বিরোধিতা করে বলেন, ভারতে আসার প্রশ্নে কড়াকড়ি বাড়লে বিদেশি প্রতিভাবান যুবকদের আসা কমে যাবে। ক্ষতি হবে দেশবাসীর।
বর্তমানে দেশে বিদেশি নাগরিক আইন ১৯৪৬, অভিবাসন (পরিবহন সংস্থার দায়বদ্ধতা) আইন ২০০০, পাসপোর্ট আইন ১৯২০, রেজিস্ট্রেশন অব ফরেনার্স অ্যাক্ট ১৯৩৯— এই ধরনের একাধিক আইন রয়েছে। তার পরেও ওই বিলটি কেন প্রয়োজন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সৌগত। নিত্যানন্দ বলেন, বিষয়টিকে সরল করার লক্ষ্যেই চারটি আইনকে মিলিয়ে নতুন আইন আনা হচ্ছে। তাতে বলা হয়েছে, কোনও বিদেশি বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত হলে তাঁর এ দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারে অভিবাসন দফতর। ওই বিদেশিকে ফেরানোর দায় থাকবে না ভারতের। তিনি যে ভাবে বা যে সংস্থার মাধ্যমে (বিমান, জাহাজ, সড়ক-রেল) ভারতে এসেছিলেন, ফেরানোর দায় তাদেরই।
নতুন বিলে বিশ্ববিদ্যালয়-সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও বাড়ির মালিকদের তাঁদের সংস্পর্শে আসা বিদেশিদের সবিস্তার তথ্য প্রশাসনকে নিয়মিত দেওয়ার সুপারিশ রয়েছে। বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া ভারতে ধরা পড়লে পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি জরিমানা ও পাঁচ বছর জেলের সুপারিশ করা হয়েছে। ভুয়ো পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে ধরা পড়লে ১ থেকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং ২ থেকে ৭ বছরের জেলের সুপারিশ করা হয়েছে। সন্দেহভাজনকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতারের অধিকার দেওয়া হয়েছে অভিবাসন অফিসারকে। এতেও আপত্তি জানিয়েছেন বিরোধীরা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)