Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

আত্মঘাতী ছাত্রের কল্পনায় খোঁচা সমকালকে

আইআইটি হায়দরাবাদের ডিজাইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পড়ুয়া মার্ক কেন আত্মঘাতী হলেন, তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু স্নাতকোত্তর ডিগ্রির শেষে কোর্সের কাজের অঙ্গ হিসেবে যে ‘গ্রাফিক নভেল’ জমা দেওয়ার পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন, তাতে রয়েছে সমকালীন ভারতীয় রাজনীতির করুণ চিত্র।

‘সুপারহিরো’: মার্কের কল্পনায় ‘বিষঋষি’ এবং দুই বিদ্রোহী।

‘সুপারহিরো’: মার্কের কল্পনায় ‘বিষঋষি’ এবং দুই বিদ্রোহী।

সংবাদ সংস্থা
হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০১:৪৬
Share: Save:

আত্মহত্যার আগে আট পাতার সুইসাইড নোট লিখেছিলেন মার্ক অ্যান্ড্রু চার্লস। বলেছিলেন, ‘‘আমি ব্যর্থ....দু’বছর বাড়ির বাইরে থেকে সব চেয়ে ভাল প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছি। আমার চারপাশে দারুণ সব মানুষ রয়েছেন। কিন্তু এই সুযোগ নষ্ট করেছি।’’

আইআইটি হায়দরাবাদের ডিজাইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পড়ুয়া মার্ক কেন আত্মঘাতী হলেন, তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু স্নাতকোত্তর ডিগ্রির শেষে কোর্সের কাজের অঙ্গ হিসেবে যে ‘গ্রাফিক নভেল’ জমা দেওয়ার পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন, তাতে রয়েছে সমকালীন ভারতীয় রাজনীতির করুণ চিত্র।

আদতে বারাণসীর বাসিন্দা মার্ক। ‘গ্রাফিক নভেল’-এর পটভূমিও বারাণসী। মার্কের কল্পনায় সেই শহর দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ অফিসার ইনস্পেক্টর বিশ্বাস ঠাকুর আর দাগি নেতা বটুক পাণ্ডে ‘কড়ক’-এর দখলে। এই দু’জনের উপরে রয়েছে এক ভয়ানক ‘সাধু’। সেই ‘বিষঋষি’-র মুখ ঢাকা রয়েছে কুকুরের করোটিতে। তাতে লাগানো গ্যাস ফিল্টার ক্যানিস্টার।

মার্কের ‘সুপারহিরো জার্নালস’-এ বারাণসীতে এই ত্রয়ীর অপশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় চার কিশোর-কিশোরী। ঋষব কুমার ওরফে শর্টজ্যাম, রবি মিশ্র ওরফে ওমেগা, ইশান ওরফে মেটাশক এবং বিশাখা সিংহ ওরফে ভায়োলেট। মার্শাল আর্টে দক্ষ এই চার কিশোর-কিশোরীর উপরে অচিরেই বিষদৃষ্টি পড়ে বিষঋষি আর তার শাগরেদদের। তাদের ‘দেশদ্রোহী’ তকমা দেয় বিষঋষির প্রশাসন।

যোগী আদিত্যনাথ ও নরেন্দ্র মোদী জমানার উত্তরপ্রদেশ তথা ভারতের চিত্রের একটি ঝলক যে মার্ক নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তাতে সন্দেহ নেই কারও। যোগীর জমানায় উত্তরপ্রদেশে পুলিশি বাড়াবাড়ি থেকে গেরুয়া শিবিরের তাণ্ডব স্থান পেয়েছে ‘গ্রাফিক নভেল’-এ। স্থান পেয়েছে জেএনইউ-র পড়ুয়াদের ‘দেশদ্রোহী’ তকমা দেওয়ার ঘটনাও।

ক্যাম্পাসিং-এর মাধ্যমে চাকরি না-পাওয়াও মার্কের আত্মহত্যার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে কি এমন সৃজনশীলতার দাম নেই আইআইটি ক্যাম্পাসে বাছাই করা পড়ুয়াদের খোঁজে আসা সংস্থাগুলির কাছে? সরাসরি জবাব দিতে নারাজ মার্কের সতীর্থেরা। প্রয়াত সতীর্থের ‘গ্রাফিক নভেল’ প্রকাশ করতেও উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা।

সাঙ্গারেড্ডি জেলার পুলিশ সুপার পি শ্রীধর রেড্ডি জানিয়েছেন, মার্কের বাবা আব্রিয়ান ডেভিড চার্লস ও মা নির্মান্য চৌধুরি আইআইটি হায়দরাবাদের দিকে আঙুল তুলেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ডিএসএলআর ক্যামেরা ব্যবহার করতে না পারার মতো সামান্য বিষয় নিয়েও শিক্ষকেরা মার্ককে অপমান করতেন বলে জবানবন্দিতে দাবি করেছেন তাঁর বাবা-মা। কিন্তু এর কোনও প্রমাণ এখনও মেলেনি। মার্কের সুইসাইড নোটে আইআইটি-র বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য নেই বলে দাবি তদন্তকারীদের। এই বিষয়ে আইআইটি হায়দরাবাদের বক্তব্য জানা যায়নি। ‘রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত্যু’র অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

নির্মান্য ও আব্রিয়ান জানাচ্ছেন, তাঁদের সন্তান মার্ক বরাবরই মেধাবী ছিলেন। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজাইন নিয়ে স্নাতক স্তরের ডিগ্রি করেছিলেন। পাশাপাশি বারাণসী ও হায়দরাবাদ, দুই ক্যাম্পাসেই গিটার বাজানো থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে রীতিমতো ‘ফ্যান ফলোয়িং’ ছিল তাঁর। কিন্তু অকালেই ঝরে গেল এমন প্রতিভা। কিন্তু কেন? সেই প্রশ্নের জবাব এখনও মেলেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Mark Andrew Charles IIT student IIT hyderabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy