নিহত তাবরেজ আনসারি ও তাঁর স্ত্রী। —ফাইল চিত্র
‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় গণপিটুনিতে প্রাণ দিতে হয়েছিল ঝাড়খণ্ডের তাবরেজ আনসারিকে। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের (৩০২)ধারার বদলে অনিচ্ছাকৃত খুনের (৩০৪) ধারায় চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে শুধু প্রতিবাদ নয়, ফের খুনের ধারা না জুড়লে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনেই আত্মহত্যার হুমকি দিলেন তাবরেজের স্ত্রী শাহিস্তা পরভিন।
গত ১৭ জুন গণপিটুনির শিকার হন ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোঁয়া জেলার বাসিন্দা তাবরেজ আনসারি। ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় তাঁকে একটি পিলারের সঙ্গে বেঁধে বাঁশ, লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। মাথা-সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর চোট পান তিনি। ২২ জুন হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাবরেজের। সেই ঘটনা সংবাদমাধ্যমে ছড়াতেই গোটা দেশে তোলপাড় শুরু হয় সেই সময়। ওই গণপিটুনির ঘটনায় ৩০২ ধারায় সরাসরি খুনের অভিযোগেই মামলা দায়ের হয়েছিল। কিন্তু সেই মামলায় অভিযুক্ত ১৩ জনের মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধে ৩০৪ ধারায় চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। ফলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা লঘু হয়ে যায়।
তারইপ্রতিবাদেসোমবারজেলাশাসকেরসঙ্গেদেখাকরতেযানপরভিন।সঙ্গেছিলেনতাঁরমাএবংশ্বশুর। দীর্ঘক্ষণঅপেক্ষারপরতাঁরা জেলাশাসকেরসাক্ষাৎপান বলে অভিযোগ। সেখানেই জেলাশাসককেপরভিন স্পষ্ট জানিয়ে আসেন, ফের ৩০২ ধারা যোগ না করলে তিনি আত্মহত্যা করবেন এবং সেটা জেলাশাসকের দফতরের সামনেই।পরেপরভিন বলেন, ‘‘সারা বিশ্ব আমার স্বামীকে খুন হতে দেখেছে। তার পরেও জেলা প্রশাসন খুনিদের রক্ষা করছে। খুনিদের বিরুদ্ধে খুনের ধারা ফের না জুড়লে জেলাশাসকের দফতরের সামনেই আমি আত্মহত্যা করব।’’
কিন্তু পুলিশ কেন অপেক্ষাকৃত লঘু ধারা দিল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে? সম্প্রতি তাবরেজের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে। সেখানে জানা যায়, তাবরেজের মৃত্যু হয়েছিল স্ট্রোক বা হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে। জেলার পুলিশ সুপার কার্তিক এস বলেন, ‘‘ময়নাতদন্ত এবং ফরেন্সিক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছিল তাবরেজের। সেই কারণেই অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল।’’যেখানে তারবেজের ময়নাতদন্ত হয়েছিলসেই জামশেদপুর মেডিক্যাল কলেজের পাঁচ বিভাগীয় প্রধানের সই করা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে পরে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, স্ট্রোকের কারণ, মাথায় গভীর ক্ষত এবং শরীরে একাধিক জায়গায় অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ।
আরও পডু়ন: রাজীবকে ‘খুঁজে পাচ্ছে না’ নবান্নও, সিবিআইকে জবাব ডিজি-র, সাহায্যে বিমুখ রাজ্য?
আরও পডু়ন: বুধবার মোদী-মমতা বৈঠক দিল্লিতে, কালই রাজধানী যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী
এই রিপোর্ট সামনে আসার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুনের ধারা দেওয়ার দাবি জোরদার হয়েছে। তাবরেজের স্ত্রীও জেলাশাসককে সেই দাবিই জানিয়ে এসেছেন সোমবার। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় সরাসরি খুন এবং ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুনের ধারার মধ্যে শাস্তির পার্থক্য রয়েছে। ৩০২ ধারায় ফাঁসি এবং যাবজ্জীবনের বিধান রয়েছে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত খুনের ক্ষেত্রে শাস্তির মেয়াদ ১০ বছর বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
গণপিটুনিতে তাবরেজের মৃত্যুর মাস দুয়েক আগেই বছর চব্বিশের পরভিনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাবরেজের মৃত্যুর দু’দিন পর পরভিন জানতে পারেন তিনি সন্তানসম্ভবা। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর আকষ্মিক ধাক্কায় গর্ভপাত হয়ে যায় তাঁর। তার পরও গণপটুনিতে অভিযুক্তদের শাস্তির জন্য এখনও লড়াই ছাড়েননি পরভিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy