চন্দা কোছর। ছবি: রয়টার্স।
তাঁর উদ্যোগেই ফাঁস হয়েছে ৩ হাজার ২৫০ কোটির দুর্নীতি। আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে সিবিআই। মামলা দায়ের হয়েছে ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিইও চন্দা কোছরের বিরুদ্ধে। তবে তার কৃতিত্ব নিতে নারাজ অরবিন্দ গুপ্ত। তাঁর দাবি, ব্যাঙ্ক দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীরে। এত সহজে তা উপড়ে ফেলা সম্ভব নয়। বরং মাটি খুঁড়ে গভীরে পৌঁছতে হবে সরকারকে।পরিস্থিতি কতটা ভয়ঙ্কর, তাতেই ধরা পড়বে।
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে অরবিন্দ গুপ্ত বলেন, “সবে তদন্ত শুরু হয়েছে। জল অনেকদূর গড়াবে। দেশে তো বটেই, দেশের বাইরেও। সরকারের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। বিদেশ থেকে কোন সংস্থার ঘরে কত টাকা ঢুকছে, নজর রাখা উচিত সেদিকে। কোথা থেকে আসছে টাকা? চন্দা কোছরের নামে এফআইআর দায়ের হওয়ায় মাতামাতির কিছু নেই। সঠিক তদন্ত হলে ওঁর চেয়ে বড় রাঘব বোয়ালদের নাম সামনে আসবে। দেশের প্রতিটি ব্যাঙ্কে ছবিটা প্রায় একই। পক্ষপাতিত্ব এবং দুর্নীতির জেরে দেশের ব্যাঙ্কিং পরিষেবার এই হাল। শুধুমাত্র চন্দা কোছর নয়, আরও অনেকের বিরুদ্ধেই তদন্ত শুরু হওয়া উচিত। কাউকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।”
অরবিন্দের গুপ্তর হাত ধরেই আইসিআইসিআই দুর্নীতিকাণ্ড সামনে আসে। তাঁর বিনিয়োগ ছিল ভিডিয়োকন সংস্থায়। সেই সূত্রে চন্দা কোছরের স্বামী দীপক কোছরের নিউপাওয়ার রিনিউয়েবলস সংস্থার সঙ্গে লেনদেন সংক্রান্ত বেশকিছু নথিপত্র হাতে পান। তাতে দুই সংস্থার মধ্যে কোটি কোটি টাকার লেনদেন চোখে পড়ে। বিষয়টি সন্দেহজনক ঠোকায় নথিপত্র জোগাড় করতে শুরু করেন তিনি, ২০১৬ সালে যা প্রকাশিত হয় একটি ব্লগে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তত্কালীন গভর্নর এবং বিভিন্ন সরকারি আধিকারিকদের সেই নিয়ে চিঠিও লেখেন তিনি। দাবি করেন তদন্তের। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। কোনও জবাব আসেনি সরকারের তরফে।
আরও পড়ুন: ঋণ দুর্নীতির জের, মুম্বইয়ে ভিডিয়োকনের দফতর-সহ তিন জায়গায় সিবিআই হানা
তবে গতবছরের শুরুতে আচমকাই পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয়। অরবিন্দ গুপ্তের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুর্নীতির তদন্তে নামে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম।তাদের রিপোর্ট সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে যায় চারিদিকে। শুরু হয় সিবিআই তদন্ত। তাতে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন ২০টি ব্যাঙ্কের কনসর্টিয়াম থেকে মোট ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল ভিডিয়োকন সংস্থা। যার মধ্যে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক থেকে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা হাতে পেয়েছিল ২০১২ সালে। ঘুরপথে সেই টাকার কিছু অংশ গিয়ে পৌঁছয় চন্দা কোছরের স্বামী দীপক কোছর ও তাঁর দুই আত্মীয়ের প্রতিষ্ঠা করা নিউপাওয়ার সংস্থায়।
তদন্তে আরও জানা যায়, ২০১০ সালে নিজের একটি সংস্থার মাধ্যমে নিউপাওয়ার সংস্থায় ৬৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন ভিডিয়োকন কর্তা বেণুগোপাল ধূত। চন্দা কোছর ঋণ মঞ্জুর করলে, তার ছ’মাসের মধ্যে নিজের সংস্থার মালিকানা দীপক কোছরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দেন তিনি। তাও মাত্র ৯ লক্ষ টাকার বিনিময়ে। আবার নিউপাওয়ার সংস্থায় নিজের ৫০ শতাংশ মালিকানা মাত্র আড়াই লক্ষ টাকার বিনিময়ে দীপক কোছরকে ছেড়ে দেন তিনি। অন্যদিকে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণের টাকাও শোধ করেনি ভিডিয়োকন। ২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বাকি থাকতেই অনুৎপাদক সম্পদের আওতায় গত বছর বাতিল হয়ে যায় সেটি। তা নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিলে, প্রথমে চন্দার পক্ষ নেয় আইসিআইসিআই কর্তৃপক্ষ। সমালোচনার মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত তদন্তের নির্দেশ দিতে বাধ্য হয় তারা। যার জেরে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন চন্দা কোছর।
চন্দা কোছরের নেতৃত্বে আইসিআইসিআইয়ের দুর্নীতি এখানেই থামেনি। নিজের পরিবারকেও অন্যায়ভাবে সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। জয়প্রকাশ অ্যাসোসিয়েটস অ্যান্ড জয়প্রকাশ পাওয়ার সংস্থাকেও মোটা টাকার ঋণ পাইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সেই লেনদেনে মধ্যস্থতা করেছিলেন চন্দা কোছরের ভাশুর রাজীব কোছরের সংস্থা আভিস্টা অ্যাভাইসরি গ্রুপ। আভিস্টা অ্যাভাইসরি গ্রুপের মাধ্যমে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিল ভিডিয়োকন, জিটিএল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড সাজলন-সহ একাধিক সংস্থা। তবে সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, ভাশুর আত্মীয়ের মধ্যে পড়ে না। সে কারণেই নিজেদের সম্পর্ক চেপে যান বলে পরে সাফাই দেয় আইসিআইসিআই।
আরও পড়ুন: ভুবনেশ্বরে পৌঁছল শ্রীকান্ত, ২৪ কোটির খোঁজে গভীর রাতেও টানা জেরা
দক্ষিণ মুম্বইয়ের যে বাড়িতে এই মুহূর্তে বাস চন্দা ও তাঁর স্বামী দীপক কোছরের, সেটির সঙ্গেও ভিডিয়োকন সংস্থার যোগসূত্র মিলেছে। ১৯৯০ সালে মাঝামাঝি দাদা রাজীবের সঙ্গে মিলে ক্রেডেন্সিয়াল ফাইনান্স লিমিটেড নামের একটি অর্থনৈতিক পরিষেবা সংস্থা চালু করেন দীপক কোছর, যাদের সঙ্গে আবার লেনদেন জারি ছিল ভিডিয়োকন সংস্থার। এই ক্রেডেন্সিয়াল ফাইনান্স লিমিটেড-এর মাধ্যমেই বাড়িটি কেনেন চন্দা। শুধু তাই নয়, মধ্য মুম্বইয়ের প্রভাদেবীতে আইসিআইসিআই কর্মীদের ১৩ তলার আবাসন, রাধিকা অ্যাপার্টমেন্টটিকেও কম দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল ভিডিয়োকনকে।
সবকিছু খতিয়ে দেখে বৃহস্পতিবার চন্দা কোছর, তাঁর স্বামী দীপক কোছর এবং ভিডিয়োকন কর্ণধার বেণুগোপাল ধূতের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। তাঁদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও জালিয়াতির মামলা দায়ের হয়েছে। চন্দার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ভিডিয়োকনকে বেআইনিভাবে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার। এ ছাড়াও এফআইআরে নাম রয়েছে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের আধিকারিক সন্দীপ বক্সী, কে রামকুমার, সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়, জারিন দারুওয়ালা, রাজীব সাভরওয়াল, কেভি কামাত এবং হোমি খুরোখান। লেনদেনে তাঁদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy