আর এক ছেলেকে নিয়ে আরিফ ও নাজিয়া। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
একরত্তি মহম্মদ জহান গত দেড় মাস ধরে রোজ রাতে তার মায়ের সঙ্গে শাহিন বাগ যেত। মিষ্টি বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যেত জমায়েতের মহিলাদের মধ্যে। কিন্তু এই কনকনে শীতে সারা রাত বাড়ির বাইরে থেকেই সম্ভবত ঠান্ডা লেগে যায় চার মাসের শিশুটির। গত ৩০ জানুয়ারি রাতে ঘুমের মধ্যেই মারা গিয়েছে মহম্মদ। ভেঙে পড়েছেন সন্তানহারা নাজিয়া। তবু অবিচল। আবার শাহিন বাগে যাবেনই। ‘‘ভবিষ্যতের জন্য, আমার অন্য ছেলেমেয়েগুলোর কথা ভেবেই আমাকে ফের প্রতিবাদে শামিল হতে হবে,’’ বললেন তরুণী।
নাজিয়া ও তাঁর স্বামী মহম্মদ আরিফ কয়েক বছর আগে উত্তরপ্রদেশের বরেলী থেকে দিল্লি এসেছেন। এখন থাকেন বাটলা হাউস এলাকার একটি বস্তির ছোট্ট ঘরে। অভাবের সংসারে মহম্মদ ছাড়া তাঁদের একটি পাঁচ বছরের মেয়ে ও একটি এক বছরের ছেলে রয়েছে। রিকশা চালান আরিফ। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে সেলাইয়ের কাজও করেন।
১১ ডিসেম্বরে শুরু হওয়া শাহিন বাগের আন্দোলন গতকাল ৫০ দিন পার করেছে। ১৮ ডিসেম্বর থেকে সেই আন্দোলনের শরিক নাজিয়া। তাঁর প্রতিবেশী সাজিয়া জানালেন, নাজিয়ার মা ও স্বামী তাঁকে শাহিন বাগে যেতে প্রায় রোজ বারণ করেছেন। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে ঝগড়া করেই প্রতি দিন দু’কিলোমিটার দূরের সমাবেশে যেতেন নাজিয়া। শুধু যে নিজে যেতেন, তা-ই নয়। গলির সব মহিলাকেও ডেকে ডেকে নিয়ে যেতেন।
আরিফ মাঝেমধ্যে তাঁদের রিকশা করে পৌঁছেও দিতেন বলে জানিয়েছেন সাজিয়া।
কী হয়েছিল সে দিন? নাজিয়া বললেন, ‘‘সে দিন রাত একটা নাগাদ আমি বাড়ি ফিরে ছেলেমেয়েদের ঘুম পাড়ালাম। মহম্মদও ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে উঠে দেখি, ওর কোনও সাড়া নেই। ওর যে এত মারাত্মক ঠান্ডা লেগে গিয়েছিল, সত্যিই আমি বুঝতে পারিনি।’’ তখনই শিশুটিকে কাছের আলশিফা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সন্তানের মৃত্যুর জন্য সিএএ-এনআরসিকেই দায়ী করছেন আরিফ। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার যদি এ রকম আইন না আনত, মহিলারা প্রতিবাদে নামত না, আর আমার স্ত্রী সেই বিক্ষোভে যোগ দিতেও যেত না। আমার ছেলে তা হলে আজ বেঁচে থাকত।’’
ছেলে মারা যাওয়ার পরে ফের তিনি শাহিন বাগে যেতে চান শুনে আশ্চর্য হয়েছেন নাজিয়ার আত্মীয়-বন্ধুরা। কিন্তু মহম্মদের মা অবিচল। বললেন, ‘‘ধর্মের নামে আমাদের মধ্যে বিভেদ করা হবে কেন? এটা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। আমি চাই, আমার সন্তানদের, এ দেশের সব শিশুর, ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকুক। সে জন্যই আমি সমাবেশে যাচ্ছিলাম। সে জন্যই ফের যাব।’’ তবে নাজিয়া জানিয়েছেন, এ বার আর কোনও সন্তান নিয়ে নয়, একাই যাবেন শাহিন বাগে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy