Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Ashoke Ganguly

তেলঙ্গানা পুলিশের এনকাউন্টারের তত্ত্বটাই বিশ্বাস করতে পারছি না

আইন প্রণেতারা আইনসভায় দাঁড়িয়ে বিচার বহির্ভূত হত্যার সপক্ষে কথা বলছেন, এটা ঠিক নয়। এটা মারাত্মক একটা ইঙ্গিত বহন করছে।

তেলঙ্গানা এনকাউন্টার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি। ছবি— এপি।

তেলঙ্গানা এনকাউন্টার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিচারপতি। ছবি— এপি।

অশোক গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৪:৫৬
Share: Save:

তেলঙ্গানার আজকের এই ঘটনা আমি সমর্থন করি না। আমি বলছি না, ওই চারজন যে কাজটা করেছেন তাঁরা খুব ভাল কাজ করেছেন। সেটাও জঘন্যতম অপরাধ। কিন্তু তার পাল্টা পুলিশের এ ধরনের কাজকে আমি কোনও ভাবে সমর্থন করি না। এটা সম্পূর্ণ ভাবে সংবিধান-বিরোধী, মানবতা-বিরোধী, মানবাধিকার-বিরোধী। সর্বোপরি আইনের যে শাসন আছে তারও বিরোধী।

আইন প্রণেতারা আইনসভায় দাঁড়িয়ে বিচার বহির্ভূত হত্যার সপক্ষে কথা বলছেন, এটা ঠিক নয়। এটা মারাত্মক একটা ইঙ্গিত বহন করছে। এর ফলে মানুষের আইন এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি যে বিশ্বাস রয়েছে, তা ভেঙে যাচ্ছে। সেই প্রতিষ্ঠান রক্ষা করার দায়িত্ব তাঁদের। পাশাপাশি আমাদের সবার তা রক্ষা করার দায়িত্ব।

আসলে মানুষের মধ্যে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। মানুষ কোনও কিছু হলেই সঙ্গে সঙ্গে ফল চায়। নির্ভয়ার মা তাঁর জায়গা থেকে হয়তো বলছেন, অপরাধী সাজা পায়নি। তবে সেটা পুরোপুরি ঠিক নয়। সাজা ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু তা এখনও কার্যকর হয়নি এটা ঠিক। কিন্তু তার কারণ আছে। অনেক পদ্ধতি মানতে হয়। তবে এটা ঠিক যে আমাদের বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা রয়েছে। সেখান থেকে মানুষ অস্থির হয়ে যান।

আরও পড়ুন: অনেকেই বলছেন সাবাশ, কেউ বলছেন অন্যায়, তেলঙ্গানা এনকাউন্টার নিয়ে তোলপাড় দেশ

এই দীর্ঘসূত্রিতার পিছনে রয়েছে সরকারের উদাসীনতা। সেই সঙ্গে গোটা বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরাও সেই দায় এড়াতে পারেন না। তাঁদের আরও সক্রিয় হতে হবে। মানুষকে বিচার পাওয়াতে হবে। এই প্রসঙ্গেই বলি, যে সমস্ত আইনজীবী কারণে অকারণে কর্মবিরতি পালন করার বা হরতাল করার কথা ভাবেন, তাঁদের সেই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। তাঁদেরকে বুঝতে হবে আইন প্রক্রিয়ার গুরুত্ব। সবাইকে সচেতন হতে হবে। তবেই এই দীর্ঘসূত্রিতা বন্ধ হবে।

এই যে ঘটনা ঘটল, তা তো সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক এবং অমানবিক। অপরাধ জঘন্যতম হলেও যে ভাবে তার প্রতিকার করা হল সেটা এক দমই সঠিক পথ নয়। রাষ্ট্র কখনও এ ধরনের হত্যাকে সহায়তা বা সমর্থন করতে পারে না। রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে যে, সরকার তৈরি হয়েছে সংবিধানের প্রতি আস্থাশীল হওয়ার শপথ নিয়ে। সরকার তৈরি হওয়ার পর আমি সব ভুলে গেলাম আর এ সব কাজে মদত দিলাম, এ চলতে পারে না।

আমার মতে এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। প্রথমত এ ধরনের অপরাধ রুখতে হবে। যদি কোনও ভাবে এ ধরনের জঘন্য অপরাধ ঘটেও তা হলে দ্রুত অপরাধীকে গ্রেফতার করতে হবে, সেই সঙ্গে খুব দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। আচ্ছা পুলিশ আজকের ঘটনা নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিচ্ছে তা কি আদৌ গ্রহণযোগ্য। আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। একদিকে চারজন নিরস্ত্র অপরাধী, অন্যদিকে এ ধরনের ঘটনা মোকাবিলা করার মতো অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত পুলিশ বাহিনী। অস্ত্র ব্যাবহারে যাঁদের প্রশিক্ষণ নেই তাঁরা পুলিশকে ওভারপাওয়ার করে পালাতে গেল এটা কোনও ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।

আরও পড়ুন: ভোররাতে বিতর্কিত এনকাউন্টার, তেলঙ্গানা ধর্ষণ-খুনের চার আসামীকে গুলি করে মারল পুলিশ

লেখক: সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE