প্রতীকী ছবি।
লকডাউনে কাজের অভাব। সেই সুযোগে গরিব মানুষের টাকার প্রয়োজনকে হাতিয়ার করে জাল বিস্তার করেছে অঙ্গ পাচারকারীরা। সম্প্রতি এ রকমই অঙ্গ পাচারচক্রের কথা জানাজানি হয়েছে অসমে। এর সঙ্গে জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে অসম পুলিশ। ধৃত ৩ জন অসমের ধর্মতুল গ্রামের। সেখানকার অন্তত এক ডজন ব্যক্তি অঙ্গপাচারকারীদের কাছে নিজেদের কিডনি বিক্রি করেছেন বা বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ।
দারিদ্র বা স্বল্প-সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ অধিকাংশ গ্রামবাসীকে বাধ্য করেছে তাঁদের কিডনি বিক্রি করতে। অতিমারিতে কাজের এবং অর্থের অভাবের জেরে গত এক বছরে এই প্রবণতা ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। অঙ্গ পাচারকারীদের ফাঁদে জড়িয়ে প্রস্তাবিত টাকা না পাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন অধিকাংশ গ্রামবাসী।
পেশায় রাজমিস্ত্রি সুমন দাস থাকেন মোরিগাঁও জেলার এক গ্রামে। তাঁর ছেলের হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা রয়েছে। অস্ত্রোপচার দরকার। কিন্তু টাকা নেই। তাই নিজের একটি কিডনি বিক্রি করতে রাজি হয়েছিলেন তিনি। ৫ লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও মাত্র দেড় লক্ষ টাকা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। টাকা পাননি। একটি কিডনি চলে গিয়েছে তাঁর। কমেছে কাজ করার ক্ষমতা। এ ভাবে প্রতারিত হয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘ছেলের হৃদ্যন্ত্রে ছিদ্র রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা ঠিক মতো করাতে পারলাম না। কিন্তু আমার শরীরও দুর্বল হয়ে গেল। এখন খুব ক্লান্ত লাগে।’’
সুমনের স্ত্রী এক সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার তিনটি সন্তান। রোজই টাকার জন্য তাগাদা দেয় ঋণ দেওয়া সংস্থার কর্মীরা। তাই আমরা ভেবেছিলাম, যদি মোটা টাকা পাওয়া যেত, সমস্যাগুলি মিটত।’’
একই অবস্থা কৃষ্ণা দাসের। তাঁর স্বামী বিশেষভাবে সক্ষম। সঙ্গে রয়েছে ঋণের বোঝা। তিনিই কিডনি বিক্রির ফাঁদে পা দিয়ে ঠকেছেন। কৃষ্ণা বলেছেন, ‘‘আমাকে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু ১ লক্ষেরও কম টাকা পেয়েছি।’’
৩ জনের গ্রেফতারির খবর ছ়ড়াতেই যাঁরা কিডনি বিক্রি করতে কলকাতা এসেছিলেন, তাঁরা সকলেই অসমে নিজেদের গ্রামে ফিরে গিয়েছেন। নীতু মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘‘প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা ইনস্টলমেন্ট দিতে হয়। কিন্তু দেড় বছর ধরে রোজগার নেই। এটা করব কী করব না, তা নিয়ে দ্বন্দ্বে ছিলাম। শেষমেশ কলকাতা থেকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে এসেছি।’’
তবে শুধু দেড় বছর নয়, গত প্রায় বছর পাঁচেক ধরেই অসমের বিভিন্ন গ্রামে সক্রিয় এই চক্র। তবে লকডাউনে বাড়বাড়ন্ত হয়েছে ওই চক্রের। ঘটনা নিয়ে মোরিগাঁও জেলার পুলিশ সুপার অপর্ণা নটরাজন বলেছেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে আমরা কয়েক জন কিডনিদাতাকে পেয়েছি। এখন আমরা মধ্যস্থতাকারী এবং গ্রহীতাদের খোঁজ চালাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy