দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে থিকথিকে ভিড় এগিয়ে চলেছে ত্রিবেণী সঙ্গমের দিকে। লক্ষ্য জলে ডুব দেওয়া। যে রাস্তায় গাড়ি চলছে, সেই রাস্তাতেই হেঁটে চলেছেন কাতারে কাতারে মানুষ। গাড়ির হর্ন, ধোঁয়া-ধুলো মিশে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যে শ্বাস নেওয়াই কষ্টকর! ওই পথেই কেউ উঠছেন ভ্যান রিকশায়, কেউ ঠেলাগাড়িতে, কেউ লরির মাথায়। এমন মোটরবাইক চোখে পড়ে না যাতে তিন জনের কম যাত্রী রয়েছেন। এই অবস্থাতেই কখনও মোটরবাইকের চাকা চলে যাচ্ছে পথচারীর পায়ের উপর দিয়ে, কখনও গাড়ি ধাক্কা মারছে সামনের ভিড়ে!
কে বলবে ‘শাহি স্নানের’ লক্ষ্যে এমন ভিড়ের মধ্যেই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩০ জনের। ওই ঘটনার ২৪ দিন পরে শুক্রবার ইলাহাবাদের প্রয়াগে এসে মনে হচ্ছে, মৃত্যুর পরেও পরিস্থিতির বদল হল কই? গঙ্গা, যমুনা এবং অন্তঃসলিলা সরস্বতী— তিন নদীর সঙ্গমের দিকে এগিয়ে চলার পথে চোখে পড়ল, বহু জায়গাতেই কার্যত দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ। ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে 'সঙ্গম ট্যুরিস্ট পুলিশ থানার' এক অফিসার বললেন, ‘‘কাকে কী বলব? গাড়ি, মোটরবাইক-চালক, পথচারী কথা শুনতে নারাজ।’’
যদিও পুরনো ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পুলিশের এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর) কঠোর ভাবে বলবৎ করা হচ্ছে বলে দাবি করলেন কুম্ভের ‘ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের’ দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার অমিত কুমার। তিনি জানান, প্রয়াগরাজ এলাকাকে পৃথক জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মোট ৫৬টি থানা ভাগ করে ২৭৫০টি ক্যামেরায় নজরদারি চালানো হচ্ছে ৪০টি স্নানঘাট সংলগ্ন এলাকায়। এর মধ্যে ২৫০টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ক্যামেরা রয়েছে। কাজ করছে ১৪টি ড্রোন। আরও তিনটি এমনই কেন্দ্রে ৪০০ জন কর্মী এই ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছেন। অমিত বলেন, ‘‘প্রযুক্তির মাধ্যমে কোন সময়ে স্নানঘাটের দিকে কত লোক আসছেন, কত লোক ঘাট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, কতগুলি গাড়ি এই এলাকায় ঢুকছে, সেই হিসাব রাখার পাশাপাশি দেখা হচ্ছে পথ নির্দেশ ভেঙে কোনও গাড়ি বা পথচারীর দল এগোচ্ছে কি না। আগুন এবং ধোঁয়া দেখা গেলেও দ্রুত জানান দেওয়ার মতো প্রযুক্তি কাজ করছে।’’
তবে এর পরেও পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। দু’বার তাঁবুতে আগুন লেগেছে। পুলিশ সুপারের মন্তব্য, ‘‘এ পর্যন্ত ৫৮ কোটি লোক স্নান-সহ নানা কারণে এখানে এসেছেন। এর মধ্যেই কয়েকটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তবে এ বার আমরা যা শিখলাম এবং যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হল, তাতে ভবিষ্যতে আরও ভাল কুম্ভস্নানের আয়োজন করা যাবে।’’
কিন্তু মৃত্যুর ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার আগেই কেন তৎপর হওয়া যায়নি? স্পষ্ট উত্তর মেলে না।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)