২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী তাহাউর রানাকে আমেরিকা থেকে ভারতে নিয়ে আসছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। বুধবারই আমেরিকা পৌঁছোয় এনআইএ। বৃহস্পতিবার এনআইএ-র হাতে রানাকে তুলে দেয় আমেরিকা। তাঁকে বিশেষ বিমানে দিল্লিতে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। ইন্ডিয়া টুডে-র প্রতিবেদন বলছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে দিল্লির পালম বিমানবন্দরে রানাকে নিয়ে নামার সম্ভাবনা ওই বিমানের।
২৬/১১-র অন্যতম এই চক্রীকে কড়া নিরাপত্তায় বিমানবন্দর থেকে নিয়ে যাওয়া হবে বলে সূত্রের খবর। ইন্ডিয়া টুডে-র প্রতিবেদন বলছে, পালম বিমানবন্দর থেকে রানাকে এনআইএ-র সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হবে। তার জন্য বিমানবন্দরকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিমানবন্দর থেকে গুলিনিরোধক গাড়িতে করে এনআইএ-র সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হবে মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রীকে।
শুধু তা-ই নয়, ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া রানার যাত্রাপথে যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না ঘটে, তার জন্য সোয়াট (স্পেশাল ওয়েপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিস) কমান্ডোও মোতায়েন করা হয়েছে। গুলিনিরোধ গাড়ি ছাড়াও ওই কনভয়ে থাকবে সাঁজোয়া গাড়ি। একটি ‘মার্কসম্যান’ গাড়ি সর্ব ক্ষণের জন্য মোতায়েন থাকবে। এটি উচ্চমাত্রার নিরাপত্তাজনিত সাঁজোয়া গাড়ি। এই গাড়িটি যে কোনও রকমে হামলা ঠেকাতে সক্ষম।
এনআইএ-র সদর দফতরে আঁটসাঁট করা হয়েছে নিরাপত্তা। ওই চত্বরে সাধারণ মানুষের যাতায়াত আপাত ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এনআইএ-র সদর দফতরের কাছে জওহরলাল নেহরু মেট্রো স্টেশনের ২ নম্বর গেট। নিরাপত্তার স্বার্থে সেই গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, আমেরিকা থেকে ভারতে যে বিশেষ বিমানে রানাকে নিয়ে আসা হচ্ছে, সেটির যাত্রাপথে নজরদারি চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল এবং বিশেষ নিরাপত্তাবাহিনী। আমেরিকার সঙ্গে যৌথ ভাবে এই যাত্রাপথের নজরদারি চালাচ্ছেন ভারতের গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, গ্রেফতারের ১৬ বছর পর রানাকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে আমেরিকা। সূত্রের খবর, তাঁকে নিয়ে ভারতে বিমান নামার পরই গ্রেফতার করবে এনআইএ। তার পর তাঁকে ভার্চুয়ালি আদালতে পেশ করা হবে। নেওয়া হতে পারে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে। সূত্রের খবর, রানাকে প্রাথমিক ভাবে তিহাড় জেলে রাখা হবে। রানাকে ভারতের প্রত্যর্পণের পুরো প্রক্রিয়াটি নজর রেখেছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। এ ছাড়া এনআইএ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকেরাও বিষয়টিতে যুক্ত ছিলেন।
৬৪ বছরের রানা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক ডেভিড কোলম্যানের সঙ্গে এক ব্যবসার সূত্রে আলাপ হয় রানার। ২০০৮ সালে মুম্বই বিস্ফোরণের স্থান নির্বাচন করেছিলেন ডেভিড। ওই বছর ২৬ নভেম্বর পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর মদতে লশকর-এ-ত্যায়বা মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটায়। সেই ঘটনায় ১৬৬ জন নিহত হয়েছিলেন। জখম হন আরও অনেকে। ২০০৯ সালে শিকাগোয় ধরা পড়েন ডেভিড। তদন্তে জানা যায়, রানার সাহায্যেই ভারতে এসেছিলেন ডেভিড। জঙ্গিরা কোন পথে এ দেশে ঢুকে হামলা চালাবে তাঁর রোডম্যাপ তৈরি করেছিলেন। পরে আমেরিকায় গ্রেফতার হন রানা। এর পরই তাঁকে দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হয় ভারত।