মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থার আঞ্চলিক অধিকর্তা হয়ে আসার দু’বছরের মধ্যেই ১৭ হাজার কোটি টাকার মাদকচক্রের পর্দা ফাঁস করেছেন ওয়াংখেড়ে। ছবি: পিটিআই।
মুম্বইয়ে মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এনসিবি)-র আঞ্চলিক অধিকর্তা হয়ে এসেই একের পর এক মাদক চক্র ফাঁস করেছেন। বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকে মুম্বইয়ে মাদক মামলা বার বার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। আর সেই পর্দাফাঁসের নেপথ্যে যিনি ছিলেন, তিনি আর কেউ নন দুঁদে এনসিবি কর্তা সমীর ওয়াংখেড়ে। কিন্তু আরিয়ান-কাণ্ডে কি সমীর নিজেই জড়িয়ে পড়লেন ‘চক্রব্যূহে’? দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে পড়ে হয়ে গেলেন ‘বলির পাঁঠা’? সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাপ্রবাহ অন্তত তেমনই ইঙ্গিত করছে।
সুশান্তের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মাদক সংক্রান্ত মামলায় প্রবেশ এনসিবি-র। মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থার আঞ্চলিক অধিকর্তা হয়ে আসার দু’বছরের মধ্যেই ১৭ হাজার কোটি টাকার মাদকচক্রের পর্দা ফাঁস করেছেন ওয়াংখেড়ে। পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ থেকে শুরু করে অভিনেতা বিবেক ওবেরয় এবং পরিচালক রামগোপাল বর্মার মতো শীর্ষ বলিউড ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছেন। মাদক মামলায় অভিনেতা রিয়া চক্রবর্তীকে গ্রেফতারও করেছেন। সম্প্রতি তাঁর তালিকায় জুড়েছে শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খান। তাঁকেও মাদক মামলায় গ্রেফতার করেছেন ওয়াংখেড়ে। একের পর এক ‘হাই প্রোফাইল’ মাদকচক্র ধরতে ধরতে নিজেই কি এ বার ‘চক্রব্যূহে’ ফেঁসে গেলেন ওয়াংখেড়ে? সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ অন্তত তেমনই বলছে।
শাহরুখ-তনয় আরিয়ান খান গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠছিল। এই মামলায় সময় যত এগিয়েছে, ক্রমেই সেই স্বর আরও জোরালো হয়েছে। আর সেই আওয়াজ যত জোরালো হয়েছে, ওয়াংখেড়ের পায়ের তলার মাটি একটু একটু করে সরেছে। এখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ওয়াংখেড়েরই গ্রেফতারির দাবি জোরদার হতে শুরু করেছে।
আরিয়ান গ্রেফতার হওয়ার পর ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে যিনি প্রথম সরব হয়েছিলেন, তিনি আর কেউ নন, মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী তথা এনসিপি নেতা নবাব মালিক। সেই নবাবই এখন ওয়াংখেড়ের ‘ঘুম কেড়ে’ নিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, নবাবের জামাই সমীর খানকেও মাদক মামলায় গ্রেফতার করেছিলেন ওয়াংখেড়ে। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পর মাদক মামলায় তদন্ত করার সময় নবাবের জামাইকে গ্রেফতার করেন ওয়াংখেড়ে। আরিয়ান গ্রেফতার হওয়ার পরই সেই নবাব তাঁর জামাইয়ের প্রসঙ্গ তুলে দাবি করেছিলেন এটা ভুয়ো ঘটনা।
তাঁর জামাইকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন নবাব অভিযোগ তুলেছিলেন সেই ঘটনার পিছনে বিজেপি-র হাত রয়েছে। জামাইকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি বলেন, “আমার জামাইকে ফাঁসানো হয়েছে। এনসিবি যেটাকে ২০০ কেজি গাঁজা বলে দাবি করেছে, সেটা ছিল মাত্র সাড়ে ৭ গ্রাম। সিএ রিপোর্টেও দেখা গিয়েছে যে, উদ্ধার হওয়া বস্তু গাঁজা নয়, ভেষজ তামাক। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এটাই যে, এত বড় তদন্তকারী সংস্থা হওয়া সত্ত্বেও কী ভাবে তামাক আর গাঁজার পার্থক্য বুঝল না এনসিবি?”
অভিযোগের তির সেখানেই শেষ হয়নি। নবাবের আরও অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের হাতের পুতুল ওয়াংখেড়ে। তিনি শুধু ভুয়ো মামলায় ফাঁসান। এর পরই নবাব হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “ওয়াংখেড়েকে আমি চ্যালেঞ্জ করছি যে, এক বছরের মধ্যে ওঁর চাকরি যাবে। ওঁকে জেলে পাঠিয়ে তবেই জনতা শান্ত হবে। আমাদের কাছে ওঁর বিরুদ্ধে প্রতিটি ভুয়ো মামলার প্রমাণ আছে।”
আরিয়ান খান মামলা যখন চরম পর্যায়ে, ঠিক সেই সময়ই ওয়াংখেড়ের উপর নেমে এল ঘুষের অভিযোগ। যা গোটা মুম্বইয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে। অভিযোগ, আরিয়ানকে ছাড়ার জন্য নাকি ২৫ কোটি টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছে। এই মামলার দুই সাক্ষী স্বঘোষিত গোয়েন্দা কিরণ গোসাভি এবং তাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষী প্রভাকর সইল, যাঁরা ঘুষের অভিযোগ তুলেছেন ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে। তদন্তের মাঝে এই গুরুতর অভিযোগ ওঠার পরই ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে। যা সমীরকে একেবারে খাদের কিনারায় নিয়ে এসে ফেলেছে। তবে তাঁর পক্ষে গিয়েছে একটিই বিষয়। সেটি হচ্ছে, এই মামলার তদন্তকারী অফিসারপ হিসাবে তাঁকে বদলানো হয়নি।
এক দিকে যখন ঘুষের অভিযোগে বিদ্ধ হচ্ছেন, আইনের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে নিজেকে বাঁচাতে, ঠিক সেই সময়ই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের ডালি উপুড় করে দিয়েছেন মন্ত্রী নবাব। ওয়াংখেড়ের জন্ম শংসাপত্র, তাঁর জাত, বিয়ে এমনকি চাকরি নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ভুয়ো নথি দিয়ে চাকরি পেয়েছেন ওয়াংখেড়ে। জাতির শংসাপত্র জাল করে চাকরি জুটিয়েছেন। তাঁর বিয়ে এক জন মুসলিম মহিলার সঙ্গে হয়েছিল। সেই ছবিও প্রমাণ হিসেবে প্রকাশ্যে এনেছেন নবাব। অভিযোগের সাঁড়াশি আক্রমণে বিদ্ধ ওয়াংখেড়ের শেষ পরিণতি কী হয়, এখন সে দিকেই তাকিয়ে গোটা দেশ। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষের অভিযোগ কি আদৌ সত্যি? গ্রেফতার হতে পারেন কি তিনি? নাকি পুরোটাই আসলে বিজেপি বনাম শিবসেনার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, যেখানে বলির পাঁঠা হচ্ছেন সমীর? সব মিলিয়ে এক দিকে যখন খুশিতে মেতেছে ‘মন্নত’, তখন ‘বিষাদের’ ছায়া ওয়াংখেড়ে পরিবারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy