ছবি: রয়টার্স।
কোভিডের তৃতীয় ঢেউ নিয়ে পূর্বাভাস ছিল আগেই। সেই ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সদ্য প্রকাশিত কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টেও এই আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে যে শিশুদের কো-মর্বিডিটি রয়েছে, তাদের চিন্তার কারণ বেশি বলে দাবি করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশেরই কো-মর্বিডিটি থাকে। কিন্তু বাকি শিশুরা কতটা সুরক্ষিত কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ে? বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, আগের দুই ঢেউয়ের থেকে তৃতীয় তরঙ্গে শিশুদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও শুধুমাত্র শিশুরাই আক্রান্ত হবে, এমনটা ভাবা ঠিক নয়।
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের নিয়ে আতঙ্কিত না হলেও চিন্তা বৃদ্ধির বেশ কিছু কারণ রয়েছে। দেশে এখনও শিশুদের টিকাকরণ শুরু হয়নি। তাই ছোটদের কোভিড-আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। অন্য দিকে, শিশুরা কোভিড-আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েও ওই রিপোর্টে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। শিশুদের চিকিৎসক এবং হাসপাতালের পরিকাঠামো বাড়াতে রাজ্য সরকারগুলি কী পদক্ষেপ করেছে সেটাও দেখার। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশের বেশ কিছু হাসপাতালে অক্সিজেন এবং শয্যার সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হলে মা-বাবাদের যাতে শিশুর চিকিৎসা করাতে হয়রানির শিকার না হতে হয় তার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি সেরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথম ঢেউয়ে কো-মর্বিডিটি আছে যাঁদের তাঁদের পাশাপাশি বয়স্করাও করোনা-আক্রান্ত হয়েছিলেন বেশি। দ্বিতীয় ঢেউয়ে মধ্যবয়স্করা বেশি কোভিড-আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে হেতু ওই দুই বয়সীদের কোভিড হয়ে গিয়েছে এবং সে তুলনায় শিশুদের কম হয়েছে, তাই তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যে সব এলাকায় বা যে বয়সীদের মধ্যে কোভিডের দুই ঢেউয়ে সংক্রমণ কম হয়েছে সেখানেই তৃতীয় ঢেউয়ের আঘাত জোরালো হবে। এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার কথা বলা হলেও, দেশের ৫০ শতাংশের বেশি শিশুর শরীরে কোভিডের অ্যান্টিবডি রয়েছে বলে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর চতুর্থ সেরো সার্ভে-তে উঠে এসেছে। আইসিএমআর-এর এপিডেমিয়োলজি অ্যান্ড কমিউনিকেবল ডিজিজের বিভাগীয় প্রধান সমীরণ পান্ডার কথায়, ‘‘অধিকাংশ শিশুর শরীরেই যে হেতু কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তাই এখন যাদের শরীরে অ্যান্টিবডি নেই তাদের নিয়েই বেশি আশঙ্কা। অ্যান্টিবডি থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ কোভিডে আক্রান্ত হয় তাদের রোগের ভয়াবহতাও হবে কম। তবে এই ঢেউয়ে শিশুরাই আক্রান্ত হবে এই ধারণার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।’’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের মতে, ‘‘টিকাকরণ না হওয়ায় ১৮ বছরের নীচে যাদের বয়স, তাদের কোভিড-আক্রান্তের আশঙ্কা থেকেই যায়। দেশের চতুর্থ সেরো সার্ভে অনুযায়ী, টিকা না দিয়েও যত সংখ্যক শিশুর শরীরে অ্যান্টিবডির হদিশ পাওয়া গিয়েছে সেই তুলনায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে অনেক কম শিশু। কারণ বড়দের থেকে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।’’
অন্য দিকে, শিশু চিকিৎসক প্রবীর ভৌমিকের আশঙ্কা, ‘‘৫০শতাংশের বেশি শিশুর শরীরে অ্যান্টিবডি থাকলেও মাথায় রাখতে হবে, দেশের বিশাল সংখ্যক শিশুর শরীরেই কোভিডের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি। তাই সেই সব শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি কোভিড নতুন কোনও রূপে আক্রমণ চালাতে পারে। সেই রূপের ভয়াবহতা এখনও আমরা জানি না।’’ সমীরণের মতোই রাজ্যের কোভিড মোকাবিলা দলের সদস্য শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষও মনে করেন, তৃতীয় ঢেউয়ে শুধু শিশুরা আক্রান্ত হবে এটা ভাবা উচিত নয়।
তবে পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম ঢেউয়ের থেকে বেশি শিশু দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত হয়েছে। একই ভাবে তৃতীয় ঢেউয়েও তুলনামূলক ভাবে আগের থেকে বেশি শিশু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy