Advertisement
E-Paper

শি-কে দক্ষিণী সংস্কৃতিতে স্বাগত ‘গৃহকর্তা’ মোদীর

মহাবলীপুরম বা মমল্লপুরমের সঙ্গে চিনের ঐতিহাসিক যোগাযোগের সূত্রেই এই শহরে উহান-পরবর্তী ঘরোয়া বৈঠকের মঞ্চ সাজিয়েছে ভারত।

মমল্লপুরমে মোদী ও চিনফিং। ছবি: পিটিআই।

মমল্লপুরমে মোদী ও চিনফিং। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:২১
Share
Save

দক্ষিণী সমাবেশ! নরেন্দ্র মোদী এবং শি চিনফিঙের ঘরোয়া আলোচনার আগের দিনে চেন্নাই থেকে মমল্লপুরম একটাই ‘থিম’। দক্ষিণ ভারত।

আজ ‘অতিথি’ চিনা প্রেসিডেন্টের জন্য ভারত সরকারের প্রতিটি আয়োজনেই রইল দক্ষিণী ছোঁয়া। বলা ভাল, তামিলনাড়ুর ছোঁয়া। সে চেন্নাই বিমানবন্দরে চিনফিংকে স্বাগত জানানো শিঙা আর ঢাকের বাদ্যিই হোক, বা তিনি বিমানবন্দর থেকে পাঁচতারা হোটেলে যাওয়ার সময়ে রাস্তার দু’ধারের শিল্পীদের নাচগানই হোক। সন্ধেয় মমল্লপুরমে ইউনেস্কো-স্বীকৃত ঐতিহাসিক স্থাপত্য-প্রাঙ্গনে তাঁরই সম্মানে ভরতনাট্যম ও কথাকলিতে সাজানো হল অনুষ্ঠান। নৈশভোজের টেবিলে এল একের পদ এক দক্ষিণী পদ।

সবেতেই দক্ষিণ। এমনকি নরেন্দ্র মোদীর পোশাকেও।

মাস তিনেক আগেই কেরলের গুরুভায়ুর মন্দিরে স্থানীয় কায়দায় ধুতি বা ‘মুন্ড’ পরে পুজো দিয়েছিলেন মোদী। আজ বিকেলে মমল্লপুরমের বিখ্যাত ভাস্কর্য ‘অর্জুনের তপস্যা’-র সামনে গাড়ি থেকে নামলেন ধুতি-শার্ট পরিহিত, উত্তরীয় কাঁধে প্রধানমন্ত্রী। গৃহকর্তার মতোই দাঁড়িয়ে রইলেন ‘অতিথি’-র অপেক্ষায়। একটু পরেই নিজের লিমুজিন থেকে নেমে পড়লেন সাদা শার্ট-কালো ট্রাউজার্সের চিনফিং। হাসিমুখে অনেক ক্ষণ ধরে করমর্দন হল, দোভাষীর মাধ্যমে কথাও। কথা বলতে বলতে লাল কার্পেট ধরে হাঁটা।

ঘণ্টা তিনেক আগে বিমানবন্দরেও লাল কার্পেটে হাঁটছিলেন চিনফিং। মাঝে মাঝে দাঁড়িয়েও পড়ছিলেন। দুপুর তখন প্রায় আড়াইটে। বিমান থেকে নামা মাত্রই তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল বনওয়ারিলাল পুরোহিত এবং মুখ্যমন্ত্রী ই পলানীস্বামী। টারম্যাকে দাঁড়ানো শিল্পীরা সেই মুহূর্তেই শুরু করে দিয়েছিলেন অনুষ্ঠান। গত দু’মাস ধরে যার মহড়া দিয়েছেন তাঁরা। ছাত্রছাত্রীদের হাতে-হাতে উড়ছিল ভারত ও চিনের পতাকা।

বাইরের রাস্তায় সাজানো তোরণ আর বিলবোর্ডে তখন তাঁর উদ্দেশেই স্বাগতবার্তা। যাবতীয় যান-চলাচল অবশ্য বন্ধ। পথচারীরা কেউ প্রেসিডেন্টের কনভয় দেখতে চাইলে তাঁদের দাঁড়াতে হচ্ছিল মেটাল ডিটেক্টর পেরিয়ে। বিমানবন্দর থেকে চিনফিঙের হোটেল বড়জোর দুই কিলোমিটার। যেখানে একটু বিশ্রাম করেই ৪টে নাগাদ তিনি রওনা হলেন মমল্লপুরম।

মহাবলীপুরম বা মমল্লপুরমের সঙ্গে চিনের ঐতিহাসিক যোগাযোগের সূত্রেই এই শহরে উহান-পরবর্তী ঘরোয়া বৈঠকের মঞ্চ সাজিয়েছে ভারত। আর চিনফিং সেখানে পৌঁছতেই মোদী নিজে প্রায় গাইডের ভূমিকা নিয়ে তাঁকে ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন পল্লব-স্থাপত্য। ‘অর্জুনের তপস্যা’ ও ‘ভগীরথের গঙ্গা আনা’-র মতো ভাস্কর্য দেখার পরে পাণ্ডবদের ‘পঞ্চ রথ’ মন্দির চত্বরে গিয়ে মিনিট পাঁচেক পাশাপাশি চেয়ারে বসেছেন দু’জনে। চিনফিঙের হাতে মোদী ধরিয়ে দিয়েছেন ডাব। কথার ফাঁকেই ডাবের জলে চুমুক দিয়েছেন দু’জনে।

এর পর বিখ্যাত শোর মন্দির। সেখানেও ‘গাইড’ মোদী। বেশ কৌতূহলী দেখাচ্ছিল চিনফিংকে। সন্ধে গড়িয়ে গিয়েছে তখন। মন্দিরের ঢিলছোড়া দূরত্বে বঙ্গোপসাগরের নীল জলে নামছে অন্ধকারের ছায়া। মোদী-চিনফিং গিয়ে বসলেন সাজানো মঞ্চের দর্শকাসনে। শুরু হল নৃত্যানুষ্ঠান। রামায়ণের গল্প। অনুষ্ঠান শেষের পরে পৌনে সাতটায় সেখানেই নৈশভোজ। থাক্কালি রসম, আর্চাভিত্তা সম্বর, কলাই কুরুমা, কাভানারাসি হালুয়ার মতো সেরা দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের আয়োজন। ছিল মালাবার চিংড়ি, মুরগির পদ কোরি কেম্পু, মাটন উলার্থিয়াডু। নৈশভোজের ফাঁকেও কথা বলেছেন দুই নেতা। চিনফিংকে মোদী উপহার দিয়েছেন তাঞ্জাভুরের চিত্রকলা আর নাচিয়ারকয়েলের শিল্পীদের তৈরি বিশাল প্রদীপ।

সাম্প্রতিক অতীতে মোদী দক্ষিণ ভারতে গেলেই ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান উঠেছে টুইটারে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু সেই সব টুইটে ‘মোদী ফিরে যান’ লেখার সঙ্গেই চিনা ভাষায় স্বাগত জানানো হয়েছে চিনফিংকে। কেন্দ্রের অবশ্য দাবি, ওই সমস্ত টুইটের নেপথ্যে রয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু তাদের সেই ‘চক্রান্ত’ ব্যর্থ। কারণ, ঘরোয়া আলোচনার মুখবন্ধটা আজ সেরেই ফেলেছেন মোদী-চিনফিং।

Naendra Modi Xi Jinping China

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}