বুস্টার ডোজ়ের জন্য দীর্ঘ লাইন। উধাও দূরত্ব বিধি। সোমবার মধ্য কলকাতার এক টিকাকরণ কেন্দ্রে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
আপাতত ১০০ জন কোভিড আক্রান্তর মধ্যে ৫ থেকে ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হচ্ছে। কিন্তু এই ছবিটা খুব দ্রুত বদলে গিয়ে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সব রাজ্যকে সতর্ক করল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ আজ চিঠি লিখে রাজ্যগুলিকে পরামর্শ দিয়েছেন, পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্যগুলিতে ডাক্তারি ও নার্সিংয়ের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রছাত্রী, ইন্টার্নদের কাজে লাগানো হোক। পরিকাঠামো ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা— দুই-ই যে সীমিত, তা মাথায় রেখে ধাপে ধাপে প্রস্তুতি বাড়ানো হোক।
স্বাস্থ্যসচিব তাঁর চিঠিতে জানিয়েছেন, এখন ওমিক্রনই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, এ কথা ঠিক। কিন্তু ডেল্টা প্রজাতির ভাইরাসের উপস্থিতিও রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ডেল্টা প্রজাতির তুলনায় ওমিক্রন আপাত ভাবে কম ভয়ঙ্কর বলে মনে হলেও, একে কোনও ভাবেই ‘মাইল্ড’ বলা যাবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিজি নিজেই বলেছেন, “ওমিক্রনের ফলেও মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। মারাও যাচ্ছেন।” এই প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যসচিব রাজ্যগুলিকে সতর্ক করতে চিঠিতে লিখেছেন, “পরিস্থিতি প্রতি মুহূর্তে বদলাচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনও দ্রুত বদলে যেতে পারে।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের যুক্তি, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় প্রায় ২৫ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছিল। ফলে দিল্লি-সহ দেশের অধিকাংশ জায়গাতেই হাসপাতালের শয্যা, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটরের অভাব দেখা দিয়েছিল। সেই তুলনায় এখন অনেক কম রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে। আইসিইউ, অক্সিজেন বেড, অক্সিজেন, প্রয়োজনীয় ওষুধও যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। ওমিক্রনের ধাক্কায় দৈনিক নতুন সংক্রমিতর সংখ্যা দ্বিতীয় ঢেউয়ের তুলনায় অনেক বেশি হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ফলে হাসপাতাল পরিকাঠামোর উপরে চাপ পড়বেই। হাসপাতালের শয্যার চাহিদা দ্রুত বদলে যেতে পারে।
রাজ্যগুলিকে তাই অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা, সংক্রমিতদের মধ্যে কত জনের অক্সিজেন বেড, আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন পড়ছে, সে দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রের পরামর্শ, বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে কী ধরনের, কত বেড রয়েছে, তা-ও চিহ্নিত করা যেতে পারে। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলি যাতে চিকিৎসার জন্য যুক্তিসঙ্গত অঙ্কের বিল করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত টাকা আদায় রুখতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দিকেও নজর রাখার পরামর্শ নিয়েছে কেন্দ্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবারই কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ আমলাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে তিনি কঠোর ভাবে কন্টেনমেন্ট জ়োন ব্যবস্থা কার্যকর নির্দেশ দেন। ১৫-১৮ বছর বয়সিদের টিকাকরণ ও বয়স্কদের বুস্টার ডোজ় দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে নিয়ে শেষ করার নির্দেশ দেন।
দেশে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের সংখ্যা আনুমানিক ৭.৪০ কোটি। গত শুক্রবার পর্যন্ত তাদের ৩১ শতাংশ বা ২.৩৯ কোটিকে টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের টিকাকরণ অনেক আগে শুরু হলেও ৩৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কের দু’ডোজ় টিকাকরণ হওয়া বাকি। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, ১৮ বছরের কমবয়সি ও বয়স্কদের বুস্টার ডোজ় দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে টিকা নিতে বলার কর্মসূচি রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। এখনও টিকা নেননি‚ এমন প্রাপ্তবয়স্কদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও টিকা নিতে বলা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy