প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
সপ্তাহ খানেক আগেই দল তাঁকে বহিষ্কার করেছে। হিমাচল প্রদেশে বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। টিকিট না পেয়ে সেই কৃপাল পরমার এখন নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোট ময়দানে। এ হেন কৃপালকে না কি খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোন করেছিলেন! সেই ফোনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য স্পষ্ট— ‘নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান’। ‘আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না’। ‘আপনার জীবনে আমার কোনও ভূমিকা থাকলে আপনি ভোট থেকে সরে দাঁড়ান’।
মোদীর সঙ্গে কৃপালের মোবাইল ফোনে কথোপকথনের এই ভিডিয়ো এখন হিমাচল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বিজেপি ওই ভিডিয়ো জাল বলেও দাবি করেনি। মোদীকে কেন এক জন নির্দল প্রার্থীকে ফোন করে সরে দাঁড়াতে বলতে হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীরা বলছেন, এ থেকেই স্পষ্ট হিমাচলে কতটা চাপে রয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হবে।
আগামী শনিবার হিমাচলে বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সাধারণত পাঁচ বছর অন্তর ওই রাজ্যে সরকার বদল হয়। স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষমতাসীন বিজেপি চাপের মুখে। কংগ্রেস হিমাচলের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাকে কাজে লাগাতে চাইছে। তার মধ্যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে টিকিট না পাওয়া একগুচ্ছ বিজেপি নেতা নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। অনেক আসনে তাঁরাই বিজেপি প্রার্থীর প্রধান প্রতিপক্ষ। কৃপাল তাঁদেরই একজন। হিমাচলের নেতা, বিজেপির জাতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক নেই। গত বছর তিনি সহ-সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। এ বার টিকিট না পেয়ে কাংড়া জেলার ফতেপুর থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। ফলে ফতেপুরের বিজেপি প্রার্থী তথা রাজ্যের বনমন্ত্রী রাকেশ পাঠানি বিপাকে পড়েছেন।
সূত্রের দাবি, বিজেপির রাজ্য নেতারা কৃপালকে বুঝিয়ে নিরস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। মোদী গত কাল হিমাচলে প্রচারে গিয়েছিলেন। সেখানেই কৃপালের বিষয়ে জানতে পেরে এক স্থানীয় বিজেপি নেতার ফোন থেকে কৃপালকে ফোন করেন। মোদী তাঁকে ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন। প্রশ্ন করেন, ‘আপনার জীবনে আমার কি কোনও ভূমিকা রয়েছে? থাকলে সরে দাঁড়ান।’ কৃপাল তাঁকে বলেন, ‘আপনার কথা আমার কাছে ভগবানের আদেশের মতো’। দু’দিন আগে ফোন এলে ভাল হত বলেও অনুযোগ করেন। সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, নড্ডা তাঁকে গত ১৫ বছর ধরে অপমান করছেন।মোদী শুনে বলেন, ‘সেটা আমিদেখে নেব।’
নির্দল প্রার্থীকে মোদীর ফোন নিয়ে আজ কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘মোদী নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তিনি প্রার্থীর উপরে চাপ তৈরি করছেন। ‘ইমোশনালি ব্ল্যাকমেল’-এর চেষ্টা করছেন। যাতে কৃপাল ভোটে না লড়েন। এটি প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা।’’ একই সঙ্গে, কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, মোদীর এই মরিয়া প্রচেষ্টা থেকেই স্পষ্ট, হিমাচলে বিজেপি চাপে রয়েছে।
পাঁচ বছর আগে, ২০১৭-র হিমাচলের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৬৮ আসনের বিধানসভায় ৪৪টি আসন জিতেছিল। কংগ্রেস পেয়েছিল ২১টি। কিন্তু তার আগের ভোটে কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৬টি আসন। বিজেপি পেয়েছিল ২৬টি। এ বার বিজেপির অন্তত ২১ জন বিক্ষুব্ধ নেতা নির্দল প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন। কয়েকজনকে নিরস্ত করা হয়েছে। বাকিদের ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সকলেই নেমে পড়েছেন বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদলের ধারা ও প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাকে উস্কে দিতে কংগ্রেস বলছে, পাঁচ বছরে হিমাচলের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর বলার মতো কোনও কাজই করেননি। তিনি এখন প্রধানমন্ত্রীর নামে ভোট চাইছেন।
পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটের প্রচারে বলেছিলেন, সব কেন্দ্রে আসলে তিনিই প্রার্থী। ঠিক একই সুরে মোদী হিমাচলে বলেছেন, কোন কেন্দ্রে কে প্রার্থী, তা ভোটারদের মনে রাখার দরকার নেই। পদ্মফুলে ভোট দিলেই মোদীকে ভোট দেওয়া হবে। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের মন্তব্য, “সংসদীয় বিতর্ক, সাংবাদিক সম্মেলন পরিত্যাগ করার পরে প্রধানমন্ত্রী এখন কেন্দ্র ভিত্তিক সংসদীয় গণতন্ত্রকেই খাটো করছেন। আমরা জানি, আরএসএস এবং তার ভক্তেরা বহু দিন ধরেই রাষ্ট্রপতিকেন্দ্রিক সরকারের ইচ্ছা পুষে রেখেছেন। রাষ্ট্রপতিকেন্দ্রিক সরকার সংখ্যাগুরুবাদকে প্রতিষ্ঠা করবে, বহুত্ববাদ শেষ হয়ে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy