জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব হয়েছে একবছর হতে চলল। অথচ উপত্যকার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)-র নেত্রী মেহবুবা মুফতিকে এখনও জন নিরাপত্তা আইনে (পিএসএ) বন্দি করে রাখা হয়েছে। এ বার তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। মেহবুবা মুফতিকে অবিলম্বে মু্ক্তি দিতে হবে বলে দাবি তুলেছেন তিনি।
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করার আগে, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে গত বছর ৫ অগস্ট মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লা-সহ কাশ্মীরের বহু রাজনীতিককে উপত্যকায় বন্দি করা হয়। তার পর যত সময় এগিয়েছে ওমর আবদুল্লা, সাজ্জাদ গনি লোনের মতো রাজনীতিকদের একে একে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মেহবুবাকে মুক্তি দেওয়া নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা তো দূর, বরং সম্প্রতি তাঁর বন্দিদশার মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে।
তা নিয়েই রবিবার কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নেন রাহুল গাঁধী। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘সরকার বেআইনি ভাবে রাজনীতিকদের বন্দি করে রাখায় দেশের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেহবুবা মুফতিকে মুক্তি দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়।’’
India’s democracy is damaged when GOI illegally detains political leaders.
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) August 2, 2020
It’s high time Mehbooba Mufti is released.
রাহুলের টুইট।
আরও পড়ুন: ফুটপাত থেকে আট মাসের শিশুকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা, দেহ মিলল পার্কের মধ্যে
শুক্রবার পিপলস কনফারেন্সের নেতা সাজ্জাদ গনি লোনকে মুক্তি দেয় জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন। তার পর একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়, জন নিরাপত্তা আইনে মেহবুবা মুফতির বন্দিদশা আরও তিন মাসের জন্য বাড়ানো হল। এই তিন মাস শ্রীনগরের গুপকার সাব জেলে রাখা হতে পারে তাঁকে।
চাইলে জন নিরাপত্তা আইনে কাউকে দু’বছর পর্যন্ত বন্দি করে রাখা যায়। সেই আইন প্রয়োগ করে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার মেহবুবার বন্দিদশার মেয়াদ বাড়ানো হল। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে উপত্যকার সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি। পিটিপির তরফে বলা হয়, ‘‘বিজেপির বোঝা উচিত যে এ ভাবে কাশ্মীরিদের দমিয়ে রাখা যাবে না।’’
মেহবুবা মুফতির বন্দিদশার মেয়াদ বাড়ানোর তীব্র সমালোচনা করে ন্যাশনাল কনফারেন্সও (এনসি)। দেশের আর কোথাও জন নিরাপত্তা আইনের অস্তিত্ব না থাকলেও, শুধুমাত্র কাশ্মীরে কেন এই আইনের প্রয়োগ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তারা। দলের নেতা ওমর আবদুল্লা টুইটারে লেখেন, ‘‘বেআইনি ভাবে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল সাজ্জাদ লোনকে। উনি মুক্তি পেয়েছেন শুনে ভাল লাগল। আরও অনেককেই বেআইনি ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আশাকরি তাঁদের মুক্তি দিতে খুব বেশি দেরি করবে না সরকার।’’
আরও পড়ুন: নজরে প্যাংগং, লাদাখে আজ ফের কোর কমান্ডার স্তরের বৈঠক
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরমও মেহবুবা মুফতির বন্দিদশার মেয়াদবৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ করেন। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘আইনের অপব্যবহার করে মেহবুবা মুফতির বন্দিদশার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এটা প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সংরক্ষিত সাংবিধানিক অধিকারের উপর আক্রমণ।’’
বিজেপির সঙ্গে জোট গড়েই ২০১৬-র ৪ এপ্রিল থেকে ২০১৮-র ১৯ জুন পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মেহবুবা মুফতি। নানা বিষয়ে মতবিরোধের জেরে সেই জোট ভেঙে যায় এবং উপত্যকায় রাজ্যপালের শাসন জারি হয়, তার পর গত বছর জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে পৃথক দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার।