রসগোল্লা খেতে ইচ্ছা হয়েছিল তাঁর। কিন্তু কাছেপিঠে কোনও দোকানে রসগোল্লা না পেয়ে কিছুটা হতাশ হলেও হাল ছাড়েননি বিকাশ নামদেব। তিনি জানতেন, রসগোল্লা ভাল পাওয়া যায় কলকাতায়। দিল্লিতে রসগোল্লা পাননি তো কী হয়েছে, কলকাতা তো আছে! খেতে যখন ইচ্ছা হয়েছে, সাধপূরণ তো করতেই হবে, তা সে যত টাকা লাগুক না কেন। তাই দেরি না করে কলকাতায় যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট বুক করে ফেলেন বিকাশ।
দিল্লি থেকে বিমানে করে কলকাতায় চলে আসেন তিনি। তার পর মনমতো রসগোল্লা খান। সাধপূরণ করেন। রসগোল্লার স্বাদ মেটানোর পর বিকাশের আবার মনে হয় একটু দামি স্কচ খেতে হবে। তবে কলকাতা বা দিল্লিতে নয়। ভাল স্কচের জন্য গোয়া যাওয়ার মনস্থির করেন বিকাশ। কলকাতায় রসগোল্লার স্বাদ মিটিয়ে আবার গোয়ায় যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট বুক করেন।
কলকাতা থেকে ওই দিনই গোয়ায় উড়ে যান বিকাশ। সৈকতে বসে দামি স্কচ খান। সেই শখ পূরণ করে আবার গুজরাতের উদ্দেশে রওনা দেন বিকাশ। কিন্তু সেখানে তাঁর জন্য যে ওত পেতে বসে রয়েছে পুলিশ, সেটা আন্দাজ করতে পারেননি। বিমানবন্দরে নামতেই বিকাশকে গ্রেফতার করে বডোদরা পুলিশ।
আরও পড়ুন:
কিন্তু কে এই বিকাশ? রসগোল্লা খেতে ইচ্ছা হল বিমানে চেপে দিল্লি থেকে কলকাতায় উড়ে এলেন, আবার স্কচ খেতে গোয়ায় গেলেন তিনি! না, কোনও ব্যবসায়ী বা কোনও সংস্থার কর্ণধার নন বিকাশ। পুলিশ জানিয়েছে, বিকাশ এক জন চোর। ট্রেনে ট্রেনে ঘুরে ছিনতাই, চুরি করাই তাঁর কাজ। আদতে মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা হলেও তাঁর ‘কর্মস্থলের’ বিস্তৃতি গুজরাত, দিল্লি-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে। দ্বাদশ ফেল এই যুবক চুরিতে হাত পাকান স্কুল ছেড়ে দেওয়ার পর। প্রথমে ছোটখাটো চুরি করতেন। তার পর নিজের দল গড়ে তোলেন। মূলত ট্রেনই ছিল তাঁর চুরির জায়গা। অহমদাবাদ থেকে বরোদা এই পথে দূরপাল্লার ট্রেনগুলিতে চুরি করতেন বিকাশ। তার জন্য তিনি কখনও এসি থ্রি টিয়ার, কখনও টু টিয়ার কামরায় আসন বুক করতেন। রাতে যখন যাত্রীরা ঘুমিয়ে পড়তেন, তখন শুরু হত তাঁর ‘অপারেশন’। যাত্রীদের গয়না, মূল্যবান জিনিস চুরি করে চম্পট দিতেন।
চুরি করে যে টাকা আয় করতেন সেই টাকা দিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। দামি পোশাক, ঘড়ি, দামি গাড়ি কী নেই তাঁর কাছে। বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনায় বডোদরা পুলিশ খুঁজছিল বিকাশকে। কিন্তু একাধিক রাজ্যে তাঁর বিচরণ থাকায় সহজে নাগাল পাচ্ছিল না পুলিশ। অবশেষে বডোদরা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।