(বাঁ দিক থেকে) লালুপ্রসাদ যাদব, রাবড়ী দেবী, কল্পনা সোরেন এবং হেমন্ত সোরেন। —পিটিআই এবং ফাইল চিত্র।
লালু-রাবড়ী মডেল বাস্তবায়িত হল না ঝাড়খণ্ডে। পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন না হেমন্ত সোরেনের স্ত্রী কল্পনা সোরেন। শাসক শিবির সূত্রের খবর, পরিবর্তে ঝাড়়খণ্ডে জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি জোটের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন চম্পাই সোরেন। যদিও এখনও রাজ্যপাল তাঁকে ডাকেননি। সূত্রের দাবি, চার দলীয় বিধায়কের আপত্তিতেই নিজের স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী করতে পারেননি হেমন্ত।
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তথা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) প্রধান হেমন্ত সোরেনের একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে গত দু’দিন ধরে সেই রাজ্যের রাজনীতিতে আলোচ্য হয়ে উঠেছিল লালু-রাবড়ী মডেল। পশুখাদ্য দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পরে ১৯৯৭ সালে লালুপ্রসাদ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন। সকলকে হতচকিত করে রাবড়ী দেবীকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন তিনি। জমি দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে তিনিও গ্রেফতার হতে পারেন, এমন সম্ভাবনা জোরালো হতেই শোনা যায়, স্ত্রী কল্পনা মুখ্যমন্ত্রী করতে পারেন হেমন্ত। নিতে পারেন লালুর পন্থা। এমন মনে হওয়ার কারণ হল, মঙ্গলবার রাতে তাঁর রাঁচীর বাসভবনে শাসক জোটের বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন হেমন্ত। বিধায়ক না হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রী কল্পনা হাজির ছিলেন সেখানে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে দাবি, সেই বৈঠকে বিধায়কদের কাছে হেমন্ত জানতে চান, কাকে মুখ্যমন্ত্রী করা যেতে পারে? কল্পনা না কি চম্পাইকে? যদিও সেই বৈঠকের নির্যাস প্রকাশ্যে আসেনি। লালু-রাবড়ী মডেল নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে হেমন্ত বলেছিলেন ‘‘খুব শীঘ্রই আপনাদের সব বলব।’’ শাসক জোটে শামিল কংগ্রেসের দুই বিধায়ক অম্বা প্রসাদ এবং দীপিকা পাণ্ডেও মুখ্যমন্ত্রী বদলের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্ত সেই জল্পনায় জল-বাতাস দিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তিনি দাবি করেছিলেন, ‘‘চলতি মাসে জেএমএম বিধায়ক সরফরাজ আহমেদ বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন। খুব তাড়াতাড়ি হেমন্ত সোরেনও পদত্যাগ করবেন এবং তাঁর স্ত্রী পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন।’’ নিশিকান্তের ইঙ্গিত, সরফরাজের ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে জিতিয়ে আনা হতে পারে হেমন্তের স্ত্রীকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ চেয়ে সরবও হয়েছিল বিজেপি। বুধবার জমি দুর্নীতি মামলায় হেমন্ত গ্রেফতার হওয়ার পর ঝাড়খণ্ডের শাসক শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্পনা নয়, চম্পাই হতে চলেছেন রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী। যদিও এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ভাবে বা প্রকাশ্যে কেউ কিছুই বলেননি। তবে জেএমএমের একটি সূত্রের দাবি, রাজ্যে লালু-রাবড়ী মডেল বাস্তবায়িত না হওয়ার নেপথ্যে রয়েছেন চার বিধায়ক। তাঁরা কল্পনার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া আটকে দিয়েছেন। সেই ‘বিদ্রোহী’ গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন হেমন্তেরই বৌদি তথা জেএমএম বিধায়ক সীতা সোরেন।
দুমকা জেলার জামা কেন্দ্রের তিন বারের বিধায়ক সীতা জেএমএম প্রতিষ্ঠাতা শিবু সোরেনের জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রয়াত দুর্গা সোরেনের স্ত্রী। হেমন্ত সক্রিয় রাজনীতিতে আসার আগে দুর্গাই ছিলেন শিবুর রাজনৈতিক সহকারী। বিধানসভাতেও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালে দুর্গার মৃত্যুর পরে সক্রিয় রাজনীতিতে এসেছিলেন সীতা। রাজনীতিতে আসা ইস্তক বহুবার হেমন্তের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছেন তিনি। জেএমএম সূত্রের খবর, মন্ত্রী না করায় দীর্ঘ দিন ধরেই ক্ষুব্ধ সীতা। যদিও দলীয় সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার রাতের বৈঠকে তিনি ছিলেন না। ছিলেন না প্রভাবশালী বিধায়ক চামরা লিন্ডাও। মূলত তাঁদের আপত্তিতেই মুখ্যমন্ত্রী হওয়া হল না কল্পনার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy