হাথরসের নির্যাতিতার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন বিশেষ তদন্তকারী দলের সদস্যরা। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
হাথরস গণধর্ষণ-খুন কাণ্ডের তদন্তে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট)-কে সাত দিনের সময়সীমা দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তার মেয়াদ শেষ হচ্ছিল আজ, বুধবার। কিন্তু তার আগেই সিটকে আরও ১০ দিন সময় দিলেন দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের অতিরিক্ত প্রধান সচিব এ কথা জানিয়েছেন। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, তদন্ত এখনও পুরো গুটিয়ে আনতে পারেনি তিন সদস্যের সিট। সেই কারণেই অতিরিক্ত ১০ দিন সময় মঞ্জুর।
হাথরস কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত এবং মামলা সরিয়ে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। হাথরসের নির্যাতিতার পরিবারের সুরক্ষার কী বন্দোবস্ত হয়েছে, তাঁরা আইনজীবী নিযুক্ত করতে পেরেছেন কি না, সে সব বিষয় উল্লেখ করে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী সপ্তাহে ফের এই নিয়ে শুনানি হবে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের বেঞ্চে। সিবিআই তদন্ত হবে কি না, তা নিয়ে ওই দিনই সিদ্ধান্ত জানাতে পারে শীর্ষ আদালত। পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, শীর্ষ আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কি না, বা দিল্লিতে মামলা স্থানান্তরিত হয় কি না, সে সব বিষয় দেখে নেওয়ার জন্যই অতিরিক্ত সময় দেওয়া হল সিটকে।
যদিও সরকারি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, তদন্ত অসম্পূর্ণ বলেই অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের অতিরিক্ত প্রধান সচিব অশ্বিনী কে অবস্থি বলেছেন, ‘‘সিটকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ যে সাত দিনের সময়সীমা দিয়েছিলেন, তার মেয়াদ আরও ১০ দিন বাড়ানো হল।’’
আরও পড়ুন: আমরা কোনও ভাবেই হাথরসের ঘটনা থেকে নজর ঘুরিয়ে নিচ্ছি না: প্রধান বিচারপতি
গত ১৪ সেপ্টেম্বর হাথরসের দলিত মহিলাকে গণধর্ষণ ও নৃশংস অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে উচ্চবর্ণের চার জনের বিরুদ্ধে। ২৯ সেপ্টেম্বর দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই মহিলার। তার পর ওই দিনই দিল্লি থেকে হাথরসে মৃতদেহ নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু পরিবারের হাতে না দিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের তদারকিতে রাত আড়াইটে নাগাদ দাহ করা হয় দেহ। গোটা পর্বে পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন ওঠে। অন্য দিকে তীব্র প্রতিবাদ-আন্দোলন শুরু হয় প্রায় গোটা দেশে। তার জেরে শেষ পর্যন্ত ৩০ সেপ্টেম্বর তিন সদস্যের বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রসচিব ভগবান স্বরূপ, ডিআইজি চন্দ্রপ্রকাশ এবং আইপিএস অফিসার পুনম— এর নেতৃত্বে গঠিত হয় সেই সিট। রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য সাত দিন সময়সীমা বেঁধে দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি সিবিআই তদন্তের সুপারিশও করেছিলেন যোগী।
আরও পড়ুন: ব্রেকিং: মাদক মামলায় জামিন পেলেন রিয়া, ভাই শৌভিকের আর্জি খারিজ
আরও পড়ুন: ‘ওই রকম মেয়েদের দেহ বাজরা ক্ষেতেই মেলে’, বিজেপি নেতার মন্তব্যে বিতর্ক
এই সাত দিনে যেখানে গণধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল, সেই জমি, দাহ করার জায়গা পরিদর্শন করেছেন টিমের সদস্যরা। ফরেন্সিক টিমকে সঙ্গে নিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নির্যাতিতা ও অভিযুক্তদের পরিবার এবং গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণও জোগাড় করেছেন তাঁরা। কার্যত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে দলের সদস্যদের হাবেভাবে বোঝা যাচ্ছিল। মঙ্গলবারও ঘটনাস্থল ও নির্যাতিতাকে দাহ করার জায়গা পরিদর্শনের পর তদন্ত কমিটির এক সদস্য ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ‘‘তদন্ত আগামিকালের (বুধবার) মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আশা করি রাজ্য সরকারকে আগামিকালই রিপোর্ট দিতে পারব। তবে কোনও কারণে তদন্ত শেষ না হলে আরও এক দিন বা দু’দিন সময় চাইব।’’ তার আগেই অবশ্য সরকারই বাড়িয়ে দিল সময়সীমা, এক-দু’দিন নয়, ১০ দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy