হাথরসে নির্যাতিতার বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ছবি: পিটিআই।
হাথরসে গণধর্ষিতা দলিত তরুণীর মৃত্যু নিয়ে সিবিআই তদন্ত হবে কি না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিচার প্রক্রিয়া চলার মধ্যেই বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিটের মেয়াদ আরও দশ দিন বাড়িয়ে দিল যোগী আদিত্যনাথের সরকার। নির্যাতিতার মৃত্যুর পরের দিন, অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর গড়া তিন সদস্যের সিটকে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল। রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (স্বরাষ্ট্র দফতর) অবনীশকুমার অবস্থি আজ জানিয়েছেন, সিটকে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করার জন্য অতিরিক্ত দশ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট কাল উত্তরপ্রদেশের থেকে জানতে চেয়েছিল, নির্যাতিতার পরিবার ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? এই পরিস্থিতিতে মৃতার বাড়িতে নিরাপত্তা বেড়েছে। দেহতল্লাশির জন্য প্রবেশ পথে বসেছে সিকিওরিটি গেট। যাঁরা ওই বাড়িতে যাচ্ছেন, তাঁদের বিস্তৃত পরিচয় জানাতে হচ্ছে। লাগানো হয়েছে পাঁচটি সিসি ক্যামেরা। পুলিশ আছে, তবু গ্রামে থাকতে ভয় পাচ্ছে নির্যাতিতার পরিবার। নির্যাতিতার বাবা একটি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁদের। গ্রামে তাঁরা নিরাপদ বোধ করছেন না। মৃতার ভাই জানান, গোটা গ্রাম তাঁদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে।
এরই মধ্যে আজ উত্তরপ্রদেশ পুলিশ দাবি করেছে, নির্যাতিতার সঙ্গে প্রধান অভিযুক্তের ফোনে যোগাযোগ ছিল। নির্যাতিতার নম্বর থেকে অভিযুক্ত সন্দীপের ফোনে গত বেশ কয়েক মাসে ১০৪ বার কথা হয়েছে, যার মধ্যে ৬২টি আউটগোয়িং এবং ৪২টি ইনকামিং কল। কিন্তু কথা হল, অভিযুক্তের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও ধর্ষণের মতো অপরাধ লঘু হয় না। অনেকে মনে করছেন, এই সব বিষয় সামনে এনে অভিযোগের গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা করছে পুলিশ।
আরও পড়ুন:হাথরসে যেতে চেয়ে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ সাংবাদিক
থেমে নেই বিজেপির স্থানীয় নেতারাও। ক’দিন আগেই বিজেপির প্রাক্তন বিধায়ক রাজবীর সিংহ পালোয়ানের বাড়িতে ঠাকুরদের সমাবেশ করে দলিত নেতা চন্দ্রশেখর আজাদকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘটনায় রাজবীর ও প্রায় ১০০ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়। এ বার রঞ্জিত শ্রীবাস্তব নামে বিজেপির এক নেতার মন্তব্য ঘিরে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। রঞ্জিত বারাবাঁকী পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন, বর্তমানে তাঁর স্ত্রী ওই পদে রয়েছেন। একটি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, রঞ্জিতের নামে অপরাধের ৪৪টি মামলা ঝুলছে। গত কাল রাতে একটি চ্যানেলে তিনি বলেন, ‘‘ওই তরুণীর সঙ্গে এক অভিযুক্তের সম্পর্ক ছিল। তরুণীই নিশ্চয় অভিযুক্তকে খেতে দেখা করতে বলেছিল।’’ বিজেপি নেতা আরও বলেন, ‘‘এই ধরনের মেয়েরা আখ অথবা বাজরার খেতে কিংবা জঙ্গলে মারা যায়। ওদের দেহ কেন ধান কিংবা গমের খেতে পাওয়া যায় না?’’ বিজেপি নেতা বোঝাতে চান, ধান-গমের খেতের উচ্চতা কম। আখ খেতের উচ্চতা বেশি হওয়ায় লুকিয়ে থাকা সম্ভব। হাথরসের অভিযুক্তদের নির্দোষ হিসেবে তুলে ধরে রঞ্জিত দাবি করেন, সিবিআই চার্জশিট না-দেওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের ছেড়ে দেওয়া হোক। কারণ, তাদের উপরে ‘মানসিক নির্যাতন’ চলছে। অভিযুক্তদের যৌবন হারিয়ে গেলে কে তা ফেরাবে— সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। এই মন্তব্য নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা বলেছেন, ‘‘উনি কোনও দলেরই নেতা হওয়ার যোগ্য নন।’’ বিজেপি নেতাকে নোটিস পাঠিয়েছে কমিশন। এ দিকে, উত্তরপ্রদেশের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বিমলা বাথান হাথরসের ঘটনা নিয়ে নীরব কেন, সেই প্রশ্ন তুলে তাঁকে সরানোর দাবি তুলেছে আপ।
কংগ্রেস এ দিন হাইকোর্ট কিংবা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির নজরদারিতে হাথরসের ঘটনার তদন্তের দাবি তুলেছে। দলের বক্তব্য, নিজেদের হাতে থাকা সিবিআই তদন্তের করানোর কথা বলে বিজেপি সরকার মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা বন্ধ করুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy