হাথরসে নির্যাতিতার বাড়িতে এসপি কর্মীরা। ছবি পিটিআই।
রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বে সম্প্রতি তৃণমূলের প্রতিনিধি দল যখন হাথরসে বুল গড়হি গ্রামে পৌঁছয়, তাঁকে পর পর তিন বার ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছিলেন এসপি-র নেতা তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিংহ যাদব। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই গ্রামের ধারে কাছে দেখা যায়নি তাঁকে। কোনও শীর্ষ নেতাকেও নয়। জনা বিশেক মাঝারি মাপের এসপি কর্মী অবশ্য রুটিন ধর্না দিচ্ছেন, ব্যারিকেডের পাশে মহানিম গাছের ছায়ায়।
উত্তরপ্রদেশের দলিত নেত্রী মায়াবতী ঘটনাস্থলে বিএসপি-র কোনও নেতা-কর্মীকে পাঠানোরও প্রয়োজন মনে করেননি। তিনি যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে কিছু টুইট করে নিরাপদ বিরোধিতাটুকু সেরেছেন।
উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশের ক্ষুব্ধ দলিত মনে হাথরস কাণ্ডকে কেন্দ্র করে যে বিজেপি বিরোধিতার সূত্রপাত হয়েছে তাকে সংগঠিত করতে প্রধান বিরোধী দলগুলি নিষ্ক্রিয়। আর এই ফাঁকা বিরোধী পরিসরটিকে কাজে লাগাতে বাড়তি উদ্যোগী রাহুল গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা বঢ়রা। প্রিয়ঙ্কা যেখানে ব্যারিকেড টপকাচ্ছেন, রাহুল রাজ্য পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তিতে জড়িয়ে পড়ছেন, সেখানে এসপি-র ভূমিকা তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই নিস্প্রভ। আজ কৃষি সংক্রান্ত বিল নিয়ে পঞ্জাবে সভা করার পাশাপাশি রাহুল গোটা দিন নজর রেখেছেন হাথরসের দিকে। পঞ্জাবের মঞ্চ থেকে যোগী সরকারকে আক্রমণও করেছেন। সন্ধ্যায় টুইট করে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিংহের একটি মন্তব্যের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। সুরেন্দ্র আজ মন্তব্য করেন, ‘সংস্কারের (মহিলাদের) মাধ্যমে ধর্ষণ এড়ানো সম্ভব। মেয়েদের নীতিজ্ঞান শেখানো হোক।’ রাহুলের টুইট, “আরএসএস-র জঘন্য নারীবিদ্বেষী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। পুরুষেরা ধর্ষণ করে যাবে আর মেয়েদের নীতিজ্ঞান শিখতে হবে!” গোড়া থেকেই রাহুল এবং প্রিয়ঙ্কা হাথরস নিয়ে বিজেপি বিরোধিতার কৌশল হিসেবে, দলিত এবং নারী—এই দুই তাস ব্যবহার করছেন। আজ রাহুলের টুইট সেই কৌশলেরই অঙ্গ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
আরও পড়ুন: হাথরসে সভা ঠাকুরদের, পাশে বিজেপি
আরও পড়ুন: হাথরস স্টেশনে বসে বিবেকানন্দ, এগিয়ে এলেন স্টেশন মাস্টার...
অন্য দিকে আজ হাথরসে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে এসপি-র একটি প্রতিনিধি দল। আগে দলের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়ে, তাদের প্রতিনিধি দল নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে রওনা হয়েছিল। কিন্তু আগরার কাছে টোল প্লাজ়ায় তাদের আটকে দেওয়া হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে টুইট করে বলা হয়েছে, ‘‘এই বলপূর্বক আটকানোর বিষয়টি গণতন্ত্রকে হত্যা করা ছাড়া কিছুই নয়। সমাজবাদী পার্টি শোকসন্তপ্ত পরিবারের ন্যায়ের জন্য লড়াইয়ের পাশে রয়েছে।’’ পরে আবার টুইট করে জানানো হয়, ‘‘নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে এসপি-র প্রতিনিধি দল। হাথরসের প্রয়াত কন্যা যাতে বিচার পান তা দেখতে সমাজবাদীরা ন্যায়যুদ্ধ শুরু করেছেন।’’
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, মায়াবতী কৃষক বিল নিয়ে প্রায় সমস্ত বিরোধী দলের সংসদে সোচ্চার প্রতিবাদের সময়ও কার্যত নরেন্দ্র মোদী সরকারের পাশেই ছিলেন। সংসদে রাতভর ধর্নার সময়ে সমস্ত বিরোধী দলের নেতাদের ঘুরে ফিরে গাঁধী মূর্তির
তলায় আসতে দেখা গিয়েছে। উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি ছিল বিএসপি-র। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গত বছর মায়াবতীর পরিবারের বিরুদ্ধে পুরনো একটি দুর্নীতির মামলাকে জাগিয়ে তোলার পরেই মোদী সম্পর্কে নরম অবস্থান নেন মায়াবতী। সূত্রের মতে, মোদী সরকারের প্রতি মায়াবতীর বার্তা, ‘আমরা কেউ পরস্পরকে ঘাঁটাবো না।’ একই ভাবে এসপি-কেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে পরোক্ষ চাপ দেওয়া হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে, যদিও সেই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসেনি। আবার উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে কংগ্রেসের সঙ্গে সহাবস্থানে নিজেদের ভোট ব্যাঙ্কের ক্ষতি, এমনটাও মনে করেন অখিলেশ। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, কৃষি সংক্রান্ত বিল পাশ নিয়ে বিরোধীদের ধর্নায় অখিলেশ নিজে গিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু তিনি ডেরেক-কে এটাও বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিষয়টি পরিকল্পিত এবং বাস্তবায়িত হয়েছে বলেই তিনি রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy