হাথরস গণধর্ষণ কাণ্ডে ক্রমেই চাপ বাড়ছে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের উপর। পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকায় বাড়ছে ক্ষোভ। রাতারাতি যে ভাবে পরিবারের অনুপস্থিতিতে কার্যত চুপিসারে দলিত মহিলার মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্নের মুখে যোগীর পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে এ বার ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। তদন্তে তিন সদস্যের প্যানেল গঠনের ঘোষণা করে জানালেন, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। যোগীর কথায়, ‘দোষীদের কড়া শাস্তি হওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেছেন নরেন্দ্র মোদী।
উত্তরপ্রদেশের হাথরসের ঘটনায় অনেকেরই মনে পড়ে গিয়েছে আট বছর আগে দিল্লির নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের কথা। হাথরসের দলিত মহিলাকে মাঠ থেকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। গণধর্ষণের পাশাপাশি তাঁর উপর চলে নৃশংস অত্যাচার। মুখমণ্ডলে একাধিক গভীর ক্ষত। জিভেও মিলেছে কামড়ের চিহ্ন। দুই পা এবং একটি হাতও অসাড় হয়ে গিয়েছিল নির্যাতিতার। ওই অবস্থায় ১৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর গতকাল মঙ্গলবার দিল্লির সফদর জং হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
তার পর থেকেই হাথরসের মহিলার পক্ষে জনমত তীব্র হচ্ছে। হাথরস-সহ বিভিন্ন প্রান্তে এ নিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও সরব প্রচুর মানুষ। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন ছিলই। হাথরসের ঘটনায় চাপ বেড়েছিল। তার উপর মঙ্গলবার রাতে মহিলার মৃতদেহ বাড়িতেও নিয়ে যাওয়া হয়নি। পরিবারের কাউকে শেষ দেখা দেখতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। পরিবারের সদস্যদের অনুপস্থিতিতেই পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মৃতদেহ। তা নিয়ে বিতর্ক আরও জোরদার হয়েছে।
#HathrasCase UP Police officials forcing grieving parents to cremate the body overnight saying “I’m from Rajasthan & in our culture we don’t keep the body for long. Baaki sab aap dekh lijiye”
— Tanushree Pandey (@TanushreePande) September 29, 2020
Mother is begging in front of the cops, please let me take the body home once, only once pic.twitter.com/aQjoTlvSvl
আরও পড়ুন: হাথরস ধর্ষিতার দেহ মধ্যরাতে জোর করে পুড়িয়ে দিল পুলিশ
এই পরিস্থিতিতেই ময়দানে নামলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, ‘দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ যদিও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও তা প্রধানমন্ত্রীর উক্তি হিসেবে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ। নিজে কার্যত সে কথা বলেননি। তবে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ভগবান স্বরূপের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। কমিটির অন্য দুই সদস্য— রাজ্যের ডিআইজি চন্দ্রপ্রকাশ এবং আইপিএস অফিসার পুনম। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: লাইভ বাবরি রায়: আদালতে হাজির ২৬ অভিযুক্ত, আডবাণী-জোশী-উমাদের ছাড়
হাথরস ধর্ষণ কাণ্ডে চার অভিযুক্ত ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু পুলিশ প্রথমে তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিতে চায়নি বলে অভিযোগ। পরে মহিলার বয়ান রেকর্ডের পরে ওই ধারা যুক্ত করে পুলিশ। ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবার-পরিজনরা। ধৃতরা চার জনই উচ্চবর্ণের। নির্যাতিতা মহিলা দলিত সম্প্রদায়ের। তাই জাতপাতের বিষয়টিও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। স্থানীয় নারীবাদী ও মানবাধিকার সংগঠনের একাংশ বলছেন, এটা ভারতের জর্জ ফ্লয়েড কাণ্ড। সব মিলিয়ে প্রবল চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত বিষয়টিতে কার্যত হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হলেন যোগী।