ছবি: সংগৃহীত।
জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদের পর উপত্যকার প্রথম নির্বাচনেই বড়সড় সাফল্য পেল ফারুক আবদুল্লার নেতৃত্বাধীন গুপকর জোট। উপত্যকার ২০টি জেলার প্রথম নির্বাচনে ১৩টিই দখল করল তারা। তবে জম্মুতে ভাল ফল করেছে বিজেপি। সেখানে ৬টি জেলায় জয়ী হয়েছে মোদী-শাহের দল। গুপকর জোটের সাফল্যের মাঝেও উপত্যকায় একক বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বিজেপি।
মঙ্গলবার থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরের জেলা উন্নয়ন পরিষদ (ডিডিসি)-এর ভোটগণনা শুরু হয়েছিল। প্রথম থেকেই তাতে এগিয়ে ছিল গুপকর জোট। বুধবার বেলা গড়াতে দেখা যায়, ১০০-রও বেশি আসন দখলে নিয়েছেন জোটের প্রার্থীরা। তবে একক বৃহত্তম দল হিসেবে বিজেপি পেয়েছে ৭৪টি আসন। অন্য দিকে, জোটের সমর্থনকারী কংগ্রেস ২৬টি আসন দখল করেছে।
বুধবার এই ফলাফল বার হতেই নিজেদের সাফল্যে সুর চড়িয়েছে জোট এবং বিজেপি নেতৃত্ব— দু’পক্ষই। জম্মুতে ভাল ফলের পর বিজেপি শিবিরে বলেছে, “উপত্যকায় পদ্ম ফুটল।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, “উপত্যকায় সাড়ে ৪ লক্ষ ভোট পেয়েছে বিজেপি। যা ন্যাশনাল কনফারেন্সে, পিডিপি এবং কংগ্রেসের মিলিত ভোটের থেকেও বেশি। একক বৃহত্তম দলও বিজেপি। সন্ত্রাসবাদী, চরমপন্থী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সজোরে একটা চড় কষিয়েছে জম্মু-কাশ্মীর।”
আরও পড়ুন: ‘বিজেপিকে ঝটকা দিতে পারেন আপনি’, মমতা-কৃষক নেতা ফের ফোনে কথা
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহেই অক্সফোর্ডের কোভিড টিকার অনুমোদন দিতে পারে ভারত
তবে এই ‘সাফল্য’-কে গেরুয়া শিবির বাড়িয়েচাড়িয়ে দেখছে বলে মত ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লার। কাশ্মীরের ফলাফল দেখে ভাল ফল করা জোটের নেতা ওমরের টুইট, ‘উপত্যকায় ৩টে আসনে জয়কে বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরার প্রলোভন রয়েছে বিজেপি-র কাছে, তা তো বুঝতে পারছি। তবে গুপকর জোট যে জম্মুতে ৩৫টিতে জয়ী/এগিয়ে রয়েছে, তা কেন খাটো করা হচ্ছে?’
গত ২৮ নভেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫ দিন ধরে আট দফায় ভোট হয়েছে ডিডিসি-র। ২০টি জেলার ২৮০টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে গুপকর জোট। বুধবার বিকেল পর্যন্ত তার ২টি আসন বাদে সবক’টির ফলাফলা ঘোষিত। এর মধ্যে প্রত্যাশা মতোই কাশ্মীরে ভাল প্রদর্শন জোটের। অন্য দিকে, জম্মুতে বেশির ভাগ আসন জিতেছে বিজেপি। কাশ্মীরে ৭২টি আসনে জয়লাভ করেছেন জোট-প্রার্থীরা। বিজেপি-র হাতে এসেছে ৩টি আসন। শ্রীনগর জেলার রাশ নির্দল প্রার্থীর দখলে এসেছে। জোট এবং বিজেপি প্রার্থীদের জয়ের মাঝে চমকপ্রদ সাফল্য নির্দল প্রার্থীদের। কংগ্রেস বা মেহবুবা মুফতির দল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)-র থেকেও বেশি সংখ্যক মোট ৪৯টি আসন দখল করেছেন তাঁরা।
জম্মুকে ৭১টি আসনে জয়ের মুখ দেখেছে বিজেপি। জম্মু ছাড়াও উধমপুর, সাম্বা, কাঠুয়া, রিয়াসি এবং ডোডা জেলার জয়ী হয়েছেন গেরুয়া শিবিরের প্রার্থীরা। অন্য দিকে, ন্য়াশনাল কনফারেন্স এবং কংগ্রেস জিতেছে ৪৫টি আসন। পুঞ্চ, রাজৌরি, কিস্তওয়ার এবং রামবান জেলায় জয়ী হয়েছেন এই দুই দলের প্রার্থীরা।
গত বছরের অগস্টে নরেন্দ্র মোদী সরকার সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ফারুক আবদুল্লা-মেহবুবা মুফতিরা। চলতি বছরের অক্টোবরে ফারুক আবদুল্লার নেতৃত্বে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্য়াদা ফেরানোর দাবিতে গুপকর জোট গঠন করেন ফারুক আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতিরা। তাতে ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিডিপি-সহ উপত্যকার দশটি দল জোট বাঁধে। ‘পিপলস অ্যালায়েন্স ফর গুপকর ডিক্লারেশন’ (পিএজিডি) নামের এই জোটকে সমর্থন করে কংগ্রেস। বুধবার ডিডিসি-র নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ্যে আসতে জোটের হয়ে ওমর আবদুল্লা সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, “২০১৯ নিয়ে তাঁদের মতামত কী, তা জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা এটি সমর্থন করেন না। বিজেপি-র প্রচারকে তাঁরা বিপুল ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।” যদিও বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের দাবি, “কাশ্মীরে বিশেষত, যে জায়গাগুলি ‘সন্ত্রাসের কেন্দ্র’ বলে পরিচিত, আগের থেকে বেশি ভোটদান হয়েছে। ওই জায়গায় ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার আগে যে সব নির্বাচন হয়েছে, তার থেকেও বেশি ভোটার মতদান করতে এগিয়ে এসেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy