সেতু বিপর্যয়ে স্বজন হারিয়ে শোকে পাথর মোরবীর বাসিন্দারা। ছবি পিটিআই।
ছুটির দিনে বাড়ির বাচ্চাদের নিয়ে জাদেজা পরিবারের দুই ঘরনি গুজরাতের মোরবীতে মেলডি মাতার মন্দিরে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে ওই ঝুলন্ত সেতুতে যাওয়ার জন্য বায়না জুড়ে দেয় বাচ্চারা। শেষে বাচ্চাদের মন রাখতে তাঁরা ওই ঝুলন্ত সেতুতে যান। আর সেখানে গিয়েই কাল হল! সন্ধ্যায় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল সেই সেতু। যার জেরে আর বাড়ি ফেরা হল না তাঁদের। রবিবার সন্ধ্যায় সেতু বিপর্যয়ে জাদেজা পরিবারের সাত সদস্যেরেই মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছে চার জন শিশু।
কাজের জন্য বাড়ির বাইরে ছিলেন ৩০ বছর বয়সি যুবক প্রতাপ সিংহ জাদেজা ও তাঁর ভাই প্রদ্যুমন। প্রতাপের স্ত্রী ও দুই সন্তান, এক বৌদি, প্রদ্যুমনের স্ত্রী ও তাঁর দুই সন্তানরা সেদিন ঝুলন্ত সেতুতে গিয়েছিলেন। সেতু বিপর্যয়ে তাঁদের সকলেরই মৃত্যু হয়েছে। প্রতাপের স্ত্রী নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। স্ত্রী-সন্তানদের হারিয়ে শোকে পাথর প্রতাপ ও তাঁর ভাই। তাঁদের গোটা পরিবারটাই যে শেষ হয়ে গেল। এই শোক কী ভাবে কাটিয়ে উঠবেন, তার তল খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা। জানা গিয়েছে, জামনগর জেলার বাসিন্দা জাদেজারা ছয় মাস আগেই মোরবীতে এসেছিলেন। তার পর সেখানে ঘর ভাড়া করে থাকছিলেন।
শুধু জাদেজা পরিবারই নয়, রবিবার সন্ধ্যায় মাচ্ছু নদীতে ওই সেতু ভেঙে আরও অনেক পরিবারই নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না কেউই। চারদিকে শুধুই হাহাকার। মোরবীর বাসিন্দা ৫২ বছর বয়সি তৈয়ব সুমরার শ্যালকের পরিবারেও বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে। তৈয়বের শ্যালকের ৩০ বছরের ছেলে ও তাঁর দুই নাতির প্রাণ কেড়েছে ওই ‘অভিশপ্ত’ সেতু। তৈয়বের কথায়, ‘‘আমার শ্যালকের পুত্র ও তার পরিবার ওই সেতুতে ঘুরতে গিয়েছিল। সেতু ভাঙার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছেলে ও নাতিদের খুঁজতে গিয়েছিল শ্যালক। তার পরই খারাপ খবর পেলাম। শুধু মাত্র ওর পুত্রবধূ বেঁচে রয়েছে।’’
রবিবার ওই সেতু বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েও অনেকে কোনও রকমে নিজেদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। সেতু ভেঙে পড়ার পর সাত বছর বয়সি নন্দন চৌহান ও তার বাবা নদীর তীরে কাদামাটির উপর পড়ে গিয়েছিল। নন্দন বর্তমানে মোরবীর একটি হাসপাতালের আইসিইউতে শয্যাশায়ী তার ডান হাত ভেঙে গিয়েছে। নন্দনের বাবাও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁরও হাত ভেঙেছে। নন্দনের কাকা সুরেশ তাতামিয়ার কথায়, ‘‘ওরা নদীর তীরে কাদামাটিতে পড়ে গিয়েছিল। ঈশ্বরের কৃপায় সকলকে উদ্ধার করা হয়েছে।’’
বরাতজোরে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন মেহুল রাওয়াল নামে ৪০ বছরের এক ব্যক্তিও। পরিবারের আট সদস্যকে নিয়ে রবিবার ওই সেতুতে ঘুরতে গিয়েছিলেন মেহুল। তবে তাঁরা সকলেই বেঁচে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সেতুতে সেদিন অস্বাভাবিক ভিড় হয়েছিল। অতিরিক্ত ভিড় হওয়ায় আমরা সেতুর অর্ধেক জায়গায় পৌঁছনোর পর ফেরার সিদ্ধান্ত নেই। যখন একেবারে সেতুর ধারে এসে পৌঁছই, তখনই ভেঙে পড়ে। তাই আমরা নদীর তীরে কাদামাটিতে পড়ে যাই।’’
তবে তাঁরা প্রাণে রক্ষা পেলেও সেই সন্ধ্যার বিভীষিকা ভুলতে পারছেন না। ঘটনার ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না উদ্ধারকারী দলের সদস্যরাও। এই ঘটনায় গভীর ভাবে মর্মাহত দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জীবনে এমন দুঃখ তিনি কমই পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেন নমো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy