Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Gujarat Assembly Election 2022

সতেরোর হার্দিকের সঙ্গে বাইশের হার্দিকের লড়াই

দু’হাজার সতেরোয় গুজরাত নির্বাচনে বিজেপি-র অন্যতম প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিলেন তিনি, যাঁকে ঘিরে গণউন্মাদনা টনক নড়িয়ে দিয়েছিল খোদ নরেন্দ্র মোদীর।

নিজের গ্রাম চন্দন নগরীতে ঢুকছেন হার্দিক। নিজস্ব চিত্র।

নিজের গ্রাম চন্দন নগরীতে ঢুকছেন হার্দিক। নিজস্ব চিত্র।

অগ্নি রায়
চন্দননগরী শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৪৭
Share: Save:

দুবলা পাতলা খাটিয়া কি এত দাপাদাপি সহ্য করতে পারে! হার্দিক পটেল তাঁর শৈশবের গ্রামে আসবেন বিকেল চারটের পরে আর দুপুর থেকেই বাক্স বাজিয়ে ওই খাটিয়ার উপর ‘চার্লি’-র রিহার্সাল চলছে। যাতে হার্দিক মূল ফটক দিয়ে গেটে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে অশ্বটি নাচতে শুরু করে গানের তালে তালে!

বারানগাঁও তালুকের এই ছোট্ট গ্রাম চন্দন নগরীতে ছোটবেলায় কাঠ দিয়ে ব্যাট তৈরি করে মাঠে পড়ে থাকতেন হার্দিক। ডুব মারতেন পুকুরে। দু’হাজার সতেরোয় গুজরাত নির্বাচনে বিজেপি-র অন্যতম প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিলেন তিনি, যাঁকে ঘিরে গণউন্মাদনা টনক নড়িয়ে দিয়েছিল খোদ নরেন্দ্র মোদীর। সেই পাটিদার আন্দোলনে আজ জল পড়েছে, হার্দিকও কংগ্রেস বদলে, সি ডি কেলেঙ্কারি সামলে, মান বাঁচাতে বিজেপি-তে যোগ দিয়ে নেই আর সেই দাপটে। নিজের সম্প্রদায়ের সঙ্গে ‘গদ্দারি’ করেছেন, এই অভিযোগ উঠছে। তবু এখনও তাঁকে দেখতে ভেঙে পড়ছে গ্রাম। এবং তিনি দিবারাত্রি সক্রিয়, চ্যালেঞ্জগুলির অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতে প্রতিপক্ষের দিকে।

চড়া সুরে গমগম করা গুজরাতি গানের কলি বিশেষ বোঝা যাচ্ছে না তবে প্রতি ছত্রে মোদী, শাহ আর হার্দিকের নাম ফিরে ফিরে আসছে। চার্লিও পা তুলে তুলে দেখাচ্ছে নাচ, যা নাকি এখানে আঞ্চলিক উৎসবের এক আবশ্যক অঙ্গ। গরবা নাচতে নাচতে চক্রাকারে এগিয়ে যাচ্ছেন এই গ্রাম এবং প্রতিবেশী গ্রামের মেয়েরা। ধুলো উড়িয়ে কনভয় নিয়ে ঢুকলেন হার্দিক, আর তার পরেই চার্লির পিঠে তাঁকে চড়িয়ে দেওয়া হল! সতেরোতে যে ভঙ্গিতে বিজেপি সরকারকে তুলোধোনা করতেন, এ বার সেই আগ্রাসী ভঙ্গিতেই তা করছেন কংগ্রেস এবং আপকে।

ভিড় কাটিয়ে স্থানীয় মন্দিরের চাতালে ধরা গেল হার্দিককে। “জানেন তো আমি ক্রিকেটের বড় ভক্ত। এই গ্রামে এলে পুরনো খেলাধুলোর দিনগুলো মনে পড়ে যায়। আর সেই স্পোর্টসম্যান স্পিরিটেই বলি, নতুন ইনিংস শুরু করেছি এ বছর। ভাল রান না করে ছাড়ব না। জাতীয় আঞ্চলিক এবং সামাজিক স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই আমার এই ইনিংস।” কিন্তু যে দলের বিরুদ্ধে তাঁর এত আন্দোলন, সেই নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি-তেই কেন যোগ দিলেন এই পাটিদার নেতা?

সরাসরি উত্তর না দিয়ে প্রথমে কংগ্রেসকে দুষলেন হার্দিক। “কংগ্রেসে ছিলাম। কিন্তু ওই দলের নেতা (রাহুল গান্ধী) খামখেয়ালি, নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। কখনও মাঠে আছেন, কখনও তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এ ভাবে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করা যায় না।” এর পরে তাঁর কথায়, “বছরের পর বছর আমাদের আন্দোলনের ফলেই তো সংরক্ষণের জন্য নতুন কোটা তৈরি হয়েছে। যার সুফল শুধুমাত্র পাটিদার নয়, রাজ্যের সব বর্ণের মানুষই পাবেন। এই সাফল্যের ভিতে দাঁড়িয়েই এ বার লড়ছি। প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে দেশজোড়া বিকাশের কাজ চলছে, আমি তাতে যোগ দিয়েছি। দেখা যাক, মানুষ কী বলেন। জিতলে এমনভাবে পাঁচ বছর কাজ করব, যাতে পরের বার মানুষের কাছে ভোট চাইতে না আসতে হয়।”

যেখানে দাঁড়িয়ে হার্দিকের সঙ্গে কথাবার্তা, পাশেই তাঁর চাচা কিরীট ভাই পটেলের বাড়ি। প্রশস্ত চাতালের এক কোণে তিনটি মোষ বাঁধা, অন্য দিকে খাটিয়া, বালিশ, হুঁকোয় এলিয়ে পড়ে মজলিশের ব্যবস্থা। “ও ছোটবেলা থেকেই নেতা। স্কুল, কলেজ, ক্রিকেট সবেতেই নেতৃত্ব দিতে দেখেছি। আর আজ বিজেপি-তে যোগ দিয়েছে বলে আমরা অবাক হচ্ছি না। কারণ, বিজেপি ওর রক্তে রয়েছে।” কিরীট বলছেন, “আমার বড় ভাই ভারত, জিপে আনন্দী বেনের সঙ্গে ঘুরে প্রচার করতেন। ওঁর ছাড়া আর কারও বসার অধিকার ছিল না। তাঁর ছেলে এই হার্দিক।” ভাতিজাকে নিয়ে গর্বিত চাচা বলছেন, “হার্দিকের লড়াইয়েই অনামত (সংরক্ষণ) পাওয়া গিয়েছে। আগে গোটা গুজরাত জুড়ে ওর প্রচার ছিল, এখন জায়গাটা একটু সীমিত হয়ে গিয়েছে মাত্র।”

এই ‘সীমিত’ জায়গাতেই অহোরাত্র দৌড়ে যাচ্ছেন হার্দিক। কংগ্রেস তো বলছেই, গোটা রাজ্য বলছে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র দায় নিয়ে এ বার হারবেন তিনি। বিজেপি-র ভিতরেও অন্তর্ঘাত রয়েছে, তাঁকে রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বহীন করে দেওয়ার।

লড়াইটা আসলে তাঁর নিজের অতীতের সঙ্গে বর্তমানের। সতেরোর হার্দিকের সঙ্গে বাইশের হার্দিক পটেলের।

অন্য বিষয়গুলি:

Gujarat Assembly Election 2022 Hardik Patel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE