প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই
মোরবীর মাচ্ছু সেতুর ধ্বংসাবশেষ আর ভয়ংকর নৈঃশব্দ্য থেকে উঠে এসে পাশেই নজরবাগ রাজবাড়ির চাতালে এসে দাঁড়িয়েছিলাম সে দিন। গুজরাতে দ্বিতীয় দফার ভোটের দিন তিনেক আগে। সেতু ভাঙার ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডির কারণে বিজেপির ভোট-ভাগ্য অনিশ্চিত, এমনটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক ছিল সে দিন এক জন বহিরাগতের কাছে। প্রশাসনের অবহেলা এবং আসল অপরাধীকে গ্রেফতার না করার অভিযোগ উঠেছিল ওই দুর্ঘটনার পরেই। সেই ভেবেই রাজবাড়ির চাতালে দাঁড়ানো অলস আড্ডায় গা ভাসিয়ে ভোটের আঁচ নেওয়ার চেষ্টা করে চমকেছিলাম খানিকটা। ভিড়ের বক্তব্য, যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে, কিন্তু জিতবে বিজেপিই! হ্যাঁ, এই নির্বাচনী ক্ষেত্রেও!
আজ ভোটের ফল বলছে, মোরবী আসন থেকে জিতেছেন বিজেপির প্রার্থী কান্তিলাল শিবলাল অমরুতিয়া, ৬০ শতাংশ ভোট পেয়ে! দুর্ঘটনার ঠিক পরেই বিজেপি তার পূর্ব-প্রস্তাবিত প্রার্থীকে সরিয়ে দিয়ে আঞ্চলিক আবেগের কথা মাথায় রেখে তড়িঘড়ি দাঁড় করায় পাঁচ বারের বিধায়ক এই অমরুতিয়াকে। তার কারণ, এই সেতু যে দিন ভেঙে পড়ে, সেই সন্ধ্যায় কান্তিলালের নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষকে উদ্ধার করার ছবি ভাইরাল হয়। ফলে আর দেরি না করে ক্ষত মেরামতিতে তাঁকেই বেছে নেন বিজেপি নেতৃত্ব।
এ ভাবেই আসন ধরে ধরে কৌশলের ছাপ স্পষ্ট বিজেপির ভোট-প্রস্তুতিতে। সেই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট যে, এ বার প্রকাশ্যে ঘোষণা বা প্রচার সে ভাবে না করলেও (অমিত শাহ এক বার গোধরার উল্লেখ করেছিলেন তাঁর প্রচারে) গুজরাত ভোটে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের লাভ বিলক্ষণ তুলতে পেরেছে মোদী-শাহের দল। গোধরায় গোটা দিন কাটিয়ে কুড়ি বছর আগের দগ্ধ রেল কামরার স্মৃতিকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা দেখেছি। দু’লাখেরও বেশি ভোটার সংখ্যার গোধরা সদরের বিধানসভা কেন্দ্রে মুসলিম সম্প্রদায় ৭০ হাজারের কাছাকাছি। সংখ্যার হিসাবে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা নগণ্য নন, বরং ভোট এককাট্টা হলে যে দিকে যাবেন, সে দিকেরই পাল্লা ভারী। গোধরার কার্যালয়ে বসে বিজেপির দলীয় সভাপতি দিলীপ দাসাদিয়া সে দিন বলেছিলেন, “গোধরায় যা ঘটেছে, তা বহু বছর মানুষ মনে রাখবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও তা ভুলবে না। প্রতিটি নির্বাচনে করসেবকদের ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া নিয়ে চর্চা এবং নিন্দা হবে, এটাই তো স্বাভাবিক।”
বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিবেচনা করার জন্য গুজরাত সরকার যে কমিটি গঠন করেছিল, তাতে ছিলেন সি কে রাউলজী। বলেছিলেন, ধর্ষণ যারা করেছে তারা সকলেই ব্রাহ্মণ এবং তাদের ভাল সংস্কার রয়েছে। গোধরায় তাঁকেই এ বার দাঁড় করিয়েছিল বিজেপি। রাউলজী তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের রাস্মিতাবেন চৌধুরিকে হারিয়েছেন ৩৫,১৯৮ ভোটে। গুজরাতের খেরা জেলায় অক্টোবর মাসে গরবা নাচের অনুষ্ঠানে সংখ্যালঘু এক যুবককে বেঁধে মারধর করা হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রবল আলোড়ন তৈরি হলেও ভোটের বাজারে লাভ বই ক্ষতি হয়নি বিজেপির। ওই জেলার ছ’টি নির্বাচনী কেন্দ্রেই হইহই করে জিতেছে তারা।
জিতেছেন বারানগাঁও থেকে বহু আলোচিত প্রার্থী হার্দিক পটেল। তিনি পাটিদার সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। গত ভোটে দলিত আন্দোলন করে বিজেপিকে চাপে ফেলে দেওয়া জিগ্নেশ মেবাণী এ বার কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়ে নামমাত্র (হাজার চারেক) ভোটে জিতেছেন। দীর্ঘ ক্ষণ পিছিয়ে ছিলেন বিজেপির মনিভাই বাঘেলার থেকে। গত বিধানসভায় বিজেপির ঘুম কেড়ে নেওয়া আর এক নেতা অল্পেশ ঠাকোর এ বার বিজেপির হয়েই গান্ধীনগর (দক্ষিণ) থেকে দাঁড়িয়েছিলেন। জিতেছেন তিনিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy