ভি এস অচ্যুতানন্দনের পরিবারের সঙ্গে রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান। নিজস্ব চিত্র।
ভোর ৬টায় তিরুঅনন্তপুরমে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আবাসনে ফোন! রাজ্যপাল দেখা করতে আসতে চান! পরিবারের লোকজন আর কী-ই বা বলবেন। তার পরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দনের সঙ্গে দেখা করে গেলেন কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান।
কেরলের বাম সরকারের সঙ্গে রাজ্যপাল আরিফের সংঘাত এখন তুঙ্গে। সেই সময়েই বর্ষীয়ান সিপিএম নেতার বাড়িতে সাক্ষাৎ করে রাজ্যপাল বার্তা দিতে চাইলেন, রাজনৈতিক বিরোধের আবহেও তিনি সৌজন্য ভোলেননি! আর সিপিএমের অন্দরের রাজনীতিতে ভি এস যে হেতু বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের বিপরীত মেরুর বাসিন্দা বলে পরিচিত, তাই এই সাক্ষাৎ আরও গুঞ্জন ফেলেছে। সৌজন্য নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও শাসক সিপিএম অবশ্য মনে করছে, নানা কৌশলে রাজ্যপাল নিজের ‘অযৌক্তিক’ কাজকর্মকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন, জনমানসে ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
বাংলার রাজ্যপাল থাকাকালীন জগদীপ ধনখড় এক বার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে হঠাৎ সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। আরিফের কায়দাও অনেকটা এক! ভি এসের ৯৯তম জন্মদিন গিয়েছে এই মাসেই। অসুস্থ শরীরে এখন আর তাঁর বাইরে বেরোনো হয় না, বিছানাবন্দি হয়েই কার্যত দিন কাটে। ফোনেও বিশেষ কথা বলতে পারেন না। তাঁর বাড়িতে গিয়ে মঙ্গলবার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজ্যপাল আরিফ। ভি এসের স্ত্রী বসুমতী ও ছেলে অরুণ কুমারের সঙ্গে কথা বলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছেন। পরে রাজ্যপাল বলেছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতেই গিয়েছিলেন। অরুণও জানিয়েছেন, পরিবারের তরফে তাঁরা রাজ্যপালকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।
সৌজন্য সাক্ষাৎ সেরে রাজ্যপাল আরিফ কয়েক দিনের জন্য দিল্লি গিয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। তার আগে আরও দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে শো-কজ়ের চিঠি পাঠিয়েছেন। যে ৯ জন উপাচার্যকে পদ ছাড়ার নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন তিনি, তাঁদের মধ্যে এক জন অবসর নিয়েছেন। বাকিরা দ্বারস্থ হয়েছেন আদালতের। তার পরেই শুরু হয়েছে রাজভবন থেকে শো-কজ়ের চিঠি পাঠানো। রাজ্যের ৬ জন উপাচার্যকে সোমবারই চিঠি দেওয়া হয়েছিল, এর পরে দেওয়া হয়েছে বাকি দু’জনকে। রাজ্যপাল ব্যাখ্যা দিয়েছেন, আদালত উপাচার্যদের আপাতত পদে থাকতে দিয়েছে। এখন শো-কজ়ের জবাবের অপেক্ষা করা হবে। আচার্য হিসেবে তিনি সেই রাস্তাই তৈরি করতে চেয়েছেন, যাতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভুলে সম্মান খুইয়ে ওই উপাচার্যদের বিদায় নিতে না হয়!
পাল্টা খোঁচা দিতে ছাড়ছেন না মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নও। তাঁর মন্তব্য, ‘‘শিক্ষা ক্ষেত্রে কেরল ধারাবাহিক ভাবে উন্নতির পথে যাচ্ছে। কিছু লোক তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু রাজ্য সরকার বাধার ভয়ে মাথা নত করবে না বা পিছিয়ে আসবে না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক বিকল্পের প্রতি যাঁরা অসহিষ্ণু, তাঁরা নানা ছল বা কৌশল দেখাবেন! কিন্তু সরকার তার প্রয়াস থেকে সরবে না।’’ দিল্লি যাওয়ার আগে রাজ্যপাল আরিফ আবার পাল্টা কটাক্ষে বলে গিয়েছেন, ‘‘যাঁরা ছলের কথা বলছেন, তাঁদের কিন্তু জাদু দেখাতেও জানি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy