প্রতীকী ছবি।
প্রয়োজন না থাকলেও প্রসূতির সিজার করা, আসন্নপ্রসবাকে ভর্তির বদলে অযথা রেফার, প্রসূতির সঙ্গে চিকিৎসক বা নার্সদের দুর্ব্যবহার, প্রসব চলাকালীন প্রসূতির আব্রু বা ব্যক্তিগত পরিসর বজায়ের বিন্দুমাত্র খেয়াল না-রাখা কিংবা প্রসবের সঙ্গে-সঙ্গে শিশুর নাড়ি কাটা—দেশ জুড়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারি হাসপাতালে এমন অনেক কিছুই চালু অভ্যাস। প্রসূতি কোন ক্ষেত্রে অস্বস্তি বা অসুবিধা বোধ করছেন, তা জিজ্ঞাসার কথা অধিকাংশ সরকারি পরিষেবাদাতা ভাবতে পারেন না।
তবে গত সপ্তাহে নতুন এক প্রকল্প চালু করে এই ধরনের নেতিবাচক কাজে রাশ টানার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মাতৃস্বাস্থ্য বিভাগের যুগ্ম কমিশনার দীনেশ বাসওয়াল ফোনে বলেন, ‘‘এই প্রথম কোনও স্বাস্থ্যপ্রকল্পে মহিলাদের সম্মান, গোপনীয়তা, অনুভব, পছন্দ এবং অধিকারের মতো বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। অনেক সমীক্ষা ও পর্যালোচনার পর দেখা গিয়েছে, এগুলি বজায় না-থাকলে মা ও শিশুর মৃত্যুহার কখনও কমতে পারে না। এবং ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি এক লক্ষে ৭০ জনে নিয়ে যাওয়া সরকারের লক্ষ্য।’’ প্রসঙ্গত, দেশে মাতৃমৃত্যুর হার ২০১৬ সালে ছিল প্রতি এক লাখ শিশু জন্মে ১৩০ জন।
নতুন এই প্রকল্পের নাম ‘সুরক্ষিত মাতৃত্ব আশ্বাসন’ বা সংক্ষেপে ‘সুমন’। দীনেশ বাসওয়ালের কথায়, ‘‘সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়ার ইতিবাচক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা হবে একেবারে নিখরচায়, এবং এতেই মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার কমবে।’’ এই প্রকল্পে গর্ভকালীন অবস্থা থেকে শুরু করে সন্তানের জন্মের পর ৬ মাস পর্যন্ত প্রসূতি ও সদ্যোজাতকে বিশেষ কিছু সুবিধার ‘গ্যারান্টি’ দেওয়া হচ্ছে। সব থেকে উল্লেখযোগ্য হল, প্রসূতি বা তাঁর বাড়ির লোক না-চাইলে সন্তানের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর নাড়ি কাটা যাবে না। জন্মের ৫-১০ মিনিট পর প্ল্যাসেন্টা বাইরে আসার পর নাড়ি কাটতে হবে। দীনেশ বলেন, ‘‘এর অন্যথা হলে তৎক্ষণাৎ অভিযোগ জানানোর জায়গা থাকবে, এবং সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘটনার তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা হবে।’’
এই প্রকল্পের প্রধান রূপকার নিওনেটোলজিস্ট অরুণ সিংহ ব্যাখ্যা করেন, প্রকৃতি মাতৃগর্ভ থেকে আগে শিশুকে বার করে। তার ৫-১০ মিনিট পর প্ল্যাসেন্টা বের হয়। প্ল্যাসেন্টা ও কর্ডের মাধ্যমে মাতৃগর্ভে থাকাকালীন শিশু অক্সিজেন পায়। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে নাড়িচ্ছেদ করলে কয়েক মুহূর্তের জন্য শিশুর মস্তিষ্কে অক্সিজেন যেতে সমস্যা হয়। কারণ, শিশু আচমকা নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে খাবি খায়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শিশুকে একটু ধাতস্থ করার পর নাড়ি কাটলে পরবর্তীকালে তার মানসিক বিকাশ অনেক ভাল হয়। সরকার সেই প্রক্রিয়াকেই এ বার স্বীকৃতি দিল।
দীনেশ বাসওয়াল জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করলে আসন্নপ্রসবাকে সম্পূর্ণ নিখরচায় গাড়ি করে বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। জরুরি পরিস্থিতিতে তাঁকে অন্যত্র রেফার করা হলে বাধ্যতামূলক ভাবে ১ ঘণ্টার মধ্যে রেফারাল হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফের গাড়িতেই তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে। প্রসূতির সঙ্গে কোনও দুর্ব্যবহার করা যাবে না। প্রসবকালীন সময়ে তিনি যেমন পরিবেশ, শয্যা এবং আড়াল চাইবেন, তা দিতে হবে। গান শুনতে চাইলে বা বাড়ির কাউকে পাশে রাখতে চাইলে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, মা ও সদ্যোজাতকে এই সব সুবিধা দেওয়ার জন্য যে পরিকাঠামো রাজ্যগুলিকে তৈরি করতে হবে, তার বিপুল টাকা কোথা থেকে আসবে? অরুণবাবুর বক্তব্য, ‘‘পরিকাঠামোর জন্য যে টাকা লাগবে, তা সংশ্লিষ্ট রাজ্য জানালেই জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন থেকে সেই টাকার ব্যবস্থা করবে কেন্দ্র।’’
অরুণবাবু এক সময়ে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের নিওনেটোলজি বিভাগের প্রধান ছিলেন। কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্তার সঙ্গে বিরোধের জেরে তিনি রাজ্য ছাড়েন। এখন তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনে ‘রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম’-এর জাতীয় উপদেষ্টা। কিছু দিন আগেই সদ্যোজাতদের মেধার বিকাশে তাঁর বর্ণিত প্রক্রিয়াকে স্বীকৃতি দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে সমস্ত রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে পাঠিয়েছিল। তার পরেই আবার চালু হল ‘সুমন।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy