Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Toolkit

দিশার পর নিকিতা, শান্তনু, পর পর ‘দেশদ্রোহিতা’ মামলায় প্রশ্ন কমলা হ্যারিসের ভাইঝির

পরিবেশকর্মী দিশা রবি গ্রেফতার হন রবিবার। সোমবার ‘টুলকিট’ শেয়ার করার ‘অভিযোগে’ নিকিতা জেকবের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা দিল দিল্লি পুলিশ।

(বাঁ-দিক থেকে) দিশা রবির পর পুলিশের নজরে নিকিতা জেকবও। গ্রেটা থুনবার্গের ‘টুলকিট’ নেটমাধ্যমে শেয়ার করার অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সরব হলেন কমলা হ্যারিসের ভাইঝি।

(বাঁ-দিক থেকে) দিশা রবির পর পুলিশের নজরে নিকিতা জেকবও। গ্রেটা থুনবার্গের ‘টুলকিট’ নেটমাধ্যমে শেয়ার করার অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে সরব হলেন কমলা হ্যারিসের ভাইঝি। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১০:৫৮
Share: Save:

দিশা রবির পর নিকিতা জেকব। দিশাকে গ্রেফতার করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেটা থুনবার্গের ‘টুলকিট’ নেটমাধ্যমে শেয়ার করার ‘অভিযোগে’ সমাজকর্মী নিকিতা জেকবের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা দিল দিল্লি পুলিশ। অভিযোগ, নিকিতা ‘পলাতক’। দিল্লি পুলিশের সুপারিশেই দিল্লি আদালতে সোমবার পেশায় আইনজীবী নিকিতার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। একই ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে শান্তনু নামে আর এক সমাজকর্মীর বিরুদ্ধেও। দিশার মতোই নিকিতাও থুনবার্গের ‘টুলকিট’ শেয়ার করেছিলেন বলে অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়, দিল্লি পুলিশের অভিযোগ, যে সংস্থা ‘টুলকিট’ তৈরি করেছে, তারা নিকিতার সঙ্গে যোগাযোগও করেছে।

এরই মধ্যে পরিবেশ আন্দোলনকর্মী দিশা রবির মুক্তির দাবিতে সরব হলেন বেঙ্গালুরুর পড়ুয়া, সঙ্গীতশিল্পী-সহ রাজধানী দিল্লির বিশিষ্টদের একাংশ। দিশার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগও এনেছে দিল্লি পুলিশ। দিশার মুক্তি চেয়ে মুখ খুলেছেন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ভাইঝি মিনা হ্যারিসও। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন বার বার আন্দোলনকারীদেরই নিশানা করছে ভারত সরকার? দিল্লি পুলিশ তথা ভারত সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় একই জিজ্ঞাসা দিশার মুক্তির দাবিতে সরব বিশিষ্টদের। দিশার গ্রেফতারিকে গণতন্ত্রের উপর অপ্রত্যাশিত হামলা বলে আখ্যা দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল।

কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে গ্রেটা থুনবার্গের পোস্ট করা ‘টুলকিট’ নেটমাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার ইন্ডিয়া’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা দিশা। এর পর এর পর শনিবার দুপুরে ২১ বছরের দিশাকে তাঁর শহর বেঙ্গালুরু থেকে আটক করে দিল্লি পুলিশের সাইবার অপরাধদমন শাখা। দিল্লি পুলিশের অভিযোগ, গ্রেটার পোস্ট করা ‘টুলকিট’-টি সম্পাদনা করে তা শেয়ার করেছিলেন তিনি। দিশার বিরুদ্ধে ওই ‘টুলকিট’-এর প্রসারে ‘অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী’ হিসাবেও অভিযোগ এনেছে দিল্লি পুলিশ।

গ্রেফতারির পর রবিবার দিশাকে দিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্টে আনা হয়। শুনানির পর তাঁকে ৫ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারপতি। ওই শুনানিতে দিল্লি পুলিশের আরও অভিযোগ, ওই ‘টুলকিট’ তৈরির পিছনে খলিস্তানি আন্দোলনের সমর্থনকারীদের হাত রয়েছে। এবং প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে তা প্রসার ও প্রচারে বড়সড় ভূমিকা নিয়েছিলেন দিশা। তবে দিশার দাবি, ‘‘আমি ওই টুলকিটটি তৈরি করিনি। শুধুমাত্র কৃষকদের সমর্থন করতে চেয়েছিলাম। ৩ ফেব্রুয়ারি ওই টুলকিটের দু’লাইন সম্পাদনা করেছিলাম মাত্র।’’

বিক্ষোভকারী তথা দিশার আইনি পরামর্শদাতাদের দাবি, কোনও আইনজীবী ছাড়াই আদালতে পেশ করা হয়েছিল দিশাকে। এমনকি, কোন আদালতে তাঁকে পেশ করা হবে, তা নিয়েও পুরোপুরি অন্ধকারে ছিলেন তাঁরা। এ নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছেন দিশার আইনজীবী রেবেকা জন।

দিশার মুক্তি চেয়ে সরব মিনা হ্যারিস টুইটারে লিখেছেন, ‘ভারতীয় আধিকারিকেরা ২১ বছরের দিশা রবি নামে আরও এক জন তরুণ আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করেছে। কারণ, তিনি কৃষকদের বিক্ষোভের সমর্থনে নেটমাধ্যমে একটি টুলকিট শেয়ার করেছিলেন। কেন আন্দোলনকারীদের নিশানা করা হচ্ছে, তাঁদের চুপ করিয়ে দিচ্ছে সরকার, প্রশ্ন করুন’।

মিনা হ্যারিসের মতোই দিশার গ্রেফতারি নিয়ে টুইট করেছেন কেজরীবাল। সোমবার টুইটারে তিনি লিখেছেন, ’২১ বছরের দিশা রবির গ্রেফতারি গণতন্ত্রের উপর অপ্রত্যাশিত হামলা। আমাদের কৃষকদের সমর্থন করাটা অপরাধ নয়’।

দিশার গ্রেফাতারির খবর ছড়িয়ে পড়তেই তাঁর মুক্তির দাবিতে সরব পরিবেশ নিয়ে আন্দোলনরত একটি স্বেচ্ছাসেবীর সংগঠন, ‘কোয়ালিশন ফর এনভায়রনমেন্ট জাস্টিস ইন ইন্ডিয়া’-র সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বেঙ্গালুরুর পড়ুয়াদের একাংশও। মুক্তিকামীদের অভিযোগ, আইনের অনুশাসন ছাড়াই কার্যত বেআইনি ভাবে দিশাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ, গ্রেফতারির পর দিশাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সে বিষয়েও তাঁর মা-বাবাকে অন্ধকারে রেখেছে দিল্লি পুলিশ। দিশাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে দাবি তুলে বেঙ্গালুরুর পড়ুয়ারা একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভও করেন। বিক্ষোভরত পডুয়ারা পুলিশকর্মীদের হাতে চারাগাছও তুলে দেন। একই সঙ্গে একটি বিবৃতিও প্রকাশ করেছেন তাঁরা। তাতে স্বাক্ষর করেছেন সঙ্গীতশিল্পী টিএম কৃষ্ণ, অরুন্ধতী ঘোষ-সহ দিল্লির সংখ্যালঘু কমিশনের প্রাক্তন প্রধান এসি মাইকেল-সহ বহু বিশিষ্ট। ওই বিবৃতিতে দিল্লি পুলিশের আচরণকে ‘বিদ্বেষমূলক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তাঁরা। কোনও ব্যক্তিকে গ্রেফতারির জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিত নিয়মের তোয়াক্কা না করেই যে দিশাকে পাকড়াও করেছে দিল্লি পুলিশ, তা-ও দাবি করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, এতে সংবিধানের নীতিকেও লঙ্ঘন করেছে প্রশাসন। তাঁদের আরও অভিযোগ, আন্দোলনকারী-সাংবাদিকদের নিশানা করে সরকারের আসলে বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার ছিনিয়ে নিতে চাইছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy