কোথাও কোথাও আবার বড় গাছও মাথা উঁচু করে রয়েছে। এতটাই নির্জন যে, ভরদুপুরেও গায়ে কাঁটা দিতে পারে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪:০৯
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৩
চারিদিক খাঁ খাঁ। সম্পূর্ণ জনমানবহীন। তার উপরে ঘন ঘাসের জঙ্গল ফুঁড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কংক্রিটের সারি। রড, ইট ইতিউতি পড়ে রয়েছে। কোথাও কোথাও আবার বড় গাছও মাথা উঁচু করে রয়েছে। এতটাই নির্জন যে, ভরদুপুরেও গায়ে কাঁটা দিতে পারে।
০২১৩
কোনও সিনেমার সেট নয়। এটা ভারতেরই এক শহর। গ্রেটার নয়ডা। উত্তরপ্রদেশের এই শহরের ভিতরেই যেন গজিয়ে উঠেছে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী আর এক শহর, ভুতুড়ে শহর।
০৩১৩
ভুতুড়ে কারণ, এখানে কোনও মানুষের বাস নেই। শুধু কংক্রিটের দেওয়াল আর জঙ্গল। আর এই পরিত্যক্ত কংক্রিটের জঙ্গলটা এতটাই বড় এলাকা জুড়ে রয়েছে যে, একে যে কোনও ছোটখাটো শহরের সঙ্গে তুলনা করা যায়। কিন্তু কী ভাবে তৈরি হল এই ‘ভুতুড়ে শহর’?
০৪১৩
এই আবাসনগুলির কাজ শুরু হয়েছিল এক সঙ্গে। আবাসনগিলুর কোনওটা ৬ বছরের পুরনো, কোনওটা ১০ বছরের পুরনো। কিন্তু কোনওটাই আর সম্পূর্ণ হয়নি।
০৫১৩
প্রকল্পগুলো সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই কাজ থেমে গিয়েছে। বেআইনি ভাবে আবাসন তৈরি করার জন্য কোনও বিল্ডারের জেল হয়েছে, তো কোনও বিল্ডার খরচ জোগাতে না পেরে মাঝ পথেই প্রকল্প ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।
০৬১৩
আম্রপালি ড্রিম ভ্যালি, এয়ারউইল, জেএনসি পার্ক, শিবালিক, আর্থ ইনফ্রা-র মতো প্রকল্পগুলোরই বর্তমানে এই হাল। সম্প্রতি যেমন উত্তরপ্রদেশের রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি আম্রপালি প্রকল্পের পরিত্যক্ত এমন ৪০টি আবাসন শনাক্ত করেছে।
০৭১৩
যেহেতু কোনও আবাসনের কাজই সম্পূর্ণ হয়নি, তাই ক্রেতারা ব্যবহার করতেও পারছেন না। তাও আবাসনগুলোর হস্তান্তর চেয়ে ক্রেতারা মামলা করেছেন। কিন্তু বেশির ভাগ মামলাই বিচারাধীন থাকায় লাভের সাভ কিছু হয়নি। কী ভাবে কী করা যায় তা দেখছে উত্তরপ্রদেশ রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি।
০৮১৩
উত্তরপ্রদেশের রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটির এক কর্মী বলবিন্দর কুমার বলেন, ‘‘ক্রেতাদের তথ্যের ভিত্তিতে কতগুলো এমন পরিত্যক্ত আবাসন রয়েছে তার হিসাব কষার কাজ চলছে। এরপর এই সব তথ্য যাচাই হবে। তার পরই ঠিক করা হবে যে আবাসনগুলোকে নিয়ে কী করা হবে।’’
০৯১৩
এখনও পর্যন্ত যা তথ্য সামনে উঠে এসেছে, তাতে এমন পরিত্যক্ত ১০০টা আবাসনের খোঁজ পেয়েছে উত্তরপ্রদেশ রিয়েল এস্টেট রেগুলেটরি অথরিটি।
১০১৩
সমস্যাটা আসলে অন্য জায়গায়। এই আবাসনগুলো তৈরির সময় গ্রেটার নয়ডা, নয়ডা এবং যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি বিল্ডিং ম্যাপে সম্মতি দিয়েছিল। কিন্তু এর মেয়াদ ছিল ৫ বছর।
১১১৩
আবাসনগুলোর কাজ এই ৫ বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ করতেই হত। তা সম্ভব না হলে আইনি পথে সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারত। আর যদি বিল্ডার সময়সীমা না বাড়ান, তা হলে ৫ বছর পর ম্যাপটাই বাতিল হয়ে যাবে। বাতিল হয়ে যাবে আবাসন তৈরির অনুমোদনও।
১২১৩
আইন অনুযায়ী বাতিল আবাসন হস্তান্তর হতে পারে না। আপাতত যে ১০০ আবাসন পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়েছে, তার সবগুলোরই বয়স ৫ বছর পেরিয়েছে। তাই ক্রেতারা তাঁদের ফ্ল্যাট কেনার সমস্ত নথি পেশ করলেও ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না।
১৩১৩
এই আবাসনগুলোর সম্পত্তি যাতে চুরি না হয় তার জন্য দু’জন নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। কিন্তু এত বড় এলাকা রক্ষীর পক্ষে দেখভাল করা সম্ভব নয়। তাই আবাসনগুলো দখল করেছে প্রকৃতি। ঘন জঙ্গলে ভরে গিয়েছে এলাকা। নানা প্রজাতির সাপ, শিয়াল, ইঁদুর, বেজির বাস এখন এই ভুতুড়ে শহরে।