পুরানা কিল্লা-র সঙ্গে মহাভারতের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন মিল খতিয়ে দেখতে চাইছে সর্বেক্ষণ।—ছবি সংগৃহীত।
দিল্লির ‘পুরানা কিল্লা’য় এ বার আবার অনুসন্ধানে নামতে চলেছে ভারতের পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ। গত বছরই এখানে সর্বেক্ষণের এক দফার অনুসন্ধান শেষ হয়েছে। তার পরে আবার কেন এমন তড়িঘড়ি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত? সর্বেক্ষণ থেকে তার কোনও উত্তর মেলেনি। তবে এক প্রাক্তন পুরাতত্ত্ববিদের কথায়, সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যায় রামমন্দির বানানোর নির্দেশ দেওয়ার পরে এ বার পুরানা কিল্লা-র সঙ্গে মহাভারতের সম্পর্কের যে কথা বারবার উঠেছে, তার পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন কতটা মেলে তা আবার খতিয়ে দেখতে চাইছে সর্বেক্ষণ।
ইতিহাসবিদ উপিন্দর সিংহ জানিয়েছেন, আবুল ফজ়ল তাঁর আইন-ই-আকবরি-তে উল্লেখ করেছিলেন যে, পাণ্ডবদের ইন্দ্রপ্রস্থ যেখানে ছিল, সেখানেই দিল্লির এই প্রাচীন দুর্গটি তৈরি করেছিলেন হুমায়ুন। পরে শের শাহ কেল্লাটির কলেবর বাড়ান। উনিশ শতকে পুরাতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার ই কানিংহ্যাম উল্লেখ করেছেন, যে এলাকায় এই কেল্লা দাঁড়িয়ে রয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দারা সেই জায়গাটিকে ইন্দ্রপাট বলে ডাকেন। অনেকেই মনে করেন, দিল্লির ১৮০৭ সালের একটি মানচিত্রে পুরানা কিল্লার কাছেই একটি জায়গার নাম ছিল ইন্দিপাট। ইন্দ্রপাট বা ইন্দিপাট-এর সঙ্গে প্রাচীন ইন্দ্রপ্রস্থের সম্পর্ক রয়েছে বলে দাবি অনেক ইতিহাসবিদের।
গত বছর এই এলাকায় উৎখনন করেছিলেন সর্বেক্ষণের পুরাতত্ত্ববিদ বসন্তকুমার স্বর্ণকর। তাঁর বক্তব্য, এই এলাকায় মৌর্য পূর্ব যুগ বা খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে জনবসতি রয়েছে। প্রবীণ পুরাতত্ত্ববিদ বি বি লাল দু’দফায় এখানে অনুসন্ধান করেছেন। তাঁর দাবি, এই এলাকায় জনবসতি ছিল খ্রিস্টের জন্মের এক হাজার বছর আগেও।
পুরাতাত্ত্বিকরা উৎখনন কেন্দ্র থেকে যে নানা ধরনের পাত্র বা কৌলাল এবং অন্য জিনিসপত্র পান, তা থেকে কেন্দ্রটিতে কত কাল আগে বসতি ছিল, তা আঁচ করার চেষ্টা করেন। দিল্লির এই কেল্লাটিতে চিত্রিত ধূসর রঙের মাটির পাত্র পাওয়া গিয়েছে। এমন ধরনের পাত্র যেখান থেকে পাওয়া যায়, সেই এলাকায় খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের পূর্বার্ধে বসতি ছিল বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে ভারততত্ত্ববিদ দীপক ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, ‘‘চিত্রিত ধূসর কৌলাল সংস্কৃতির বিকাশ লক্ষ্য করলে প্রচলিত মহাভারতে খাণ্ডবপ্রস্থের অর্থাৎ ইন্দ্রপ্রস্থের যে বর্ণনা আছে (আদি পর্ব ২২৬) অথবা স্ফটিক সোপান বা মণিরত্নযুক্ত সরোবর সহ ময়দানব রচিত যে পাণ্ডবসভার কথা আছে (সভাপর্ব ৩) ওই স্তরে তা অসঙ্গত ঠেকে।’’ যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের কথা স্মরণ করে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আসমুদ্র হিমাচল ভারতবর্ষের রাজাদের এক জায়গায় সমবেত হওয়ার প্রশ্নও ওই স্তরে ওঠে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy