প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
সবাই গব্বর সিংহ হয় না। সবাই পৌড়ী গঢ়ওয়ালের গব্বর সিংহ নেগি হয় না।
হবেই বা কী করে? এই নিয়ে চার বার কোনও না কোনও নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গে আটকে পড়লেন খনি শ্রমিক গব্বর! এ বারের বিপর্যয়টা ঘটার পরে গত দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বদ্ধ সুড়ঙ্গে তিনি সহকর্মীদের চাঙ্গা রেখেছিলেন। তাঁদের ধ্যান আর যোগব্যায়াম করিয়েছিলেন। ফোনে কথা বলেছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামীর সঙ্গে। সুড়ঙ্গের বাইরে থেকে উদ্বিগ্ন দাদা জয়মল সিংহ পাইপলাইন দিয়ে গব্বরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘তোরা যখন সবাই বেরোবি, তখন হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হওয়ার মতো ব্যাপার হবে না তো?’’ গব্বর দাদাকে বলেছিলেন, ‘‘এদের মধ্যে আমি সবচেয়ে সিনিয়র। সবার শেষে আমি বেরোব।’’
‘‘ভাই খুব সাহসী,’’ বলছেন গর্বিত জয়মল। আরও অনেকেই বলছেন গব্বরের কথা। যেমন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে গত রাতেই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গব্বর এবং তাঁর সহকর্মী সাবা আহমেদ যে ভাবে নেতার ভূমিকা নিয়ে সুড়ঙ্গে আটক বাকিদের সামলে রেখেছিলেন, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী আলাদা করে তাঁদের অভিনন্দন জানান। বলেন, সঙ্কটকালে গব্বরের এই নেতৃত্বের নজির বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে উঠে আসতে পারে।
সুড়ঙ্গে ধস নামার পরে প্রথম ১৮ ঘণ্টা বাইরের জগতের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল, বললেন আর এক শ্রমিক অখিলেশ সিংহ। দীপাবলির সকালে কাজ শেষ করে সুড়ঙ্গের বাইরে বেরোচ্ছিলেন অখিলেশ। ওই সময়ে তাঁর চোখের সামনেই ধস নেমে সুড়ঙ্গের মুখটা বন্ধ হয়ে যায়। অখিলেশ বলেন, ‘‘প্রচণ্ড আওয়াজে কানা তালা লেগে গেল। মুছে গেল বাইরের সঙ্গে সব যোগাযোগ। প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে আমরা একটা পাইপে জল ছেড়ে দিলাম। তখনই বাইরে সবাই বুঝল, আমরা আটকা পড়েছি। সেই পাইপ দিয়েই পরে অক্সিজেন পাঠানো হল। স্টিলের পাইপটা ঢোকার পরে দিনের বেলায় সেখান দিয়ে খাবার আসত। এখনও দিন পঁচিশেক সুড়ঙ্গে কাটিয়ে দেওয়ার মতো খাবার ছিল আমাদের কাছে।’’ আপাতত এক-দু’মাস কাজ থেকে সম্পূর্ণ ছুটি নেবেন অখিলেশ। তার পরে ঠিক করবেন ভবিষ্যৎ।
গর্বিত আর এক প্রধানমন্ত্রীও। সিল্কিয়ারায় উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পরে অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানেজ়ি এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘দুর্দান্ত কাজ করেছেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। অস্ট্রেলীয় অধ্যাপক আর্নল্ড ডিক্স মাঠে নেমে যে ভূমিকা পালন করেছেন, তাতে আমি গর্বিত।’ এ কথা জেনে গত কয়েক দিন সিল্কিয়ারা আঁকড়ে পড়ে থাকা সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ আর্নল্ডের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ধন্যবাদ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। দেখিয়ে দিতে পারলাম যে, আমরা শুধু ক্রিকেটটাই ভাল খেলি না— অন্য কাজও ভাল করি। এ বড় তৃপ্তির।’’
একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে আর্নল্ড বলেছেন, নতুন করে ধস নামা এড়াতে এক-এক কোপে মাত্র একশো মিলিমিটার করে ধ্বংসস্তূপ কাটতে হচ্ছিল। গোটা উদ্ধারকাজে একটি মানুষও জখম হননি। আর্নল্ডের মতে, তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার ও উদ্ধারকারী দলই তাঁর চোখে সেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy