Advertisement
E-Paper

দলকে হারিয়ে, নিজে হেরে প্রশ্নের মুখে কেজরীওয়াল, পঞ্জাবের আপ সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়েও জল্পনা শুরু

অণ্ণা হজারের লোকপাল আন্দোলনের সঙ্গী কেজরীওয়াল ২০১২ সালের নভেম্বরে আপ গড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে শামিল হয়েছিলেন। এই প্রথম বার ক্ষমতা হারানোর অভিজ্ঞতা হল তাঁর।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:২৪
Share
Save

চার মাস আগে হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের আশায় জল ঢেলে দিয়েছিলেন আম আদমি পার্টি (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল। বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে নিশ্চিত করেছিলেন সে রাজ্যে টানা তিন বার বিজেপির ক্ষমতায় আসা। এ বার দিল্লিতে আপের ‘হ্যাটট্রিক’ রুখে তার প্রতিশোধ নিল কংগ্রেস। আর সেই সঙ্গে চাপে পড়ে গেল দিল্লির পড়শি রাজ্য পঞ্জাবের আপ সরকারও।

অণ্ণা হজারের লোকপাল আন্দোলনের সঙ্গী কেজরীওয়াল ২০১২ সালের নভেম্বরে আপ গড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে শামিল হন। তার পরে দিল্লি এবং পঞ্জাবের বিধানসভা ভোটে জিতে ক্ষমতা দখল করেছে তাঁর দল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতের বিধানসভা ভোটে ১৩ শতাংশ ভোট পেয়ে চমক দিয়েছে। পেয়েছে ‘জাতীয় দল’-এর তকমাও। কিন্তু এই প্রথম বার ক্ষমতা হারানোর স্বাদ পেলেন কেজরী। সেই সঙ্গে তিন বারের জেতা নয়াদিল্লি আসনে এল ব্যক্তিগত পরাজয়ের ধাক্কাও। এই বিপর্যয় সামলে আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতে তিনি প্রাসঙ্গিক থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়েই দানা বেঁধেছে জল্পনা।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

দিল্লিতে কেন বিজেপির উত্থান

দেশের রাজধানীতে এ বারের বিধানসভা ভোটে আপ সরকারের বিরুদ্ধে গত ১০ বছরের প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়ার সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে বিজেপি। ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর দল সাড়ে ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এ বার তা প্রায় ৪৬ শতাংশ হয়েছে। কংগ্রেসের ভোটও ২ শতাংশ বেড়েছে। আর আপের সাড়ে ৫৩ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে সাড়ে ৪৩ শতাংশ।

অষ্টম বেতন কমিশন, কেন্দ্রীয় বাজেটে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করছাড়ের ঘোষণা যে শেষ প্রহরে মোদীর দলের পালে হাওয়া জুগিয়েছে, ভোটের ফলাফলে তা স্পষ্ট। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের কয়েক লক্ষ কর্মচারী (যাঁরা দিল্লিতে পরিচিত ‘বাবু’ বলে) দিল্লির ভোটার। রয়েছেন বহু সেনাকর্মীও। মনে করা হচ্ছে, তাঁদের ভোট একচেটিয়া ভাবে পেয়েছে বিজেপি। অতীতে প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘রেউড়ি’ বলে খয়রাতির রাজনীতির বিরোধিতা করলেও দিল্লি দখলের দৌড়ে আপ এবং কংগ্রেসের মতোই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডারের ধাঁচে মহিলাদের হাতে নগদ তুলে দেওয়ার মতো জনমোহিনী ঘোষণা করেছিল পদ্মশিবির। এর পাশাপাশি, বিধানসভা ভোটের জোড়া ‘সঙ্কল্পপত্রে’ (নির্বাচনী ইস্তাহার) ঝুপড়িবাসীদের হাতে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেওয়া, সরকারি স্কুলে কেজি (কিন্ডার গার্টেন) থেকে পিজি (পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন) পর্যন্ত নিখরচায় গরিব পড়ুয়াদের পড়ার ব্যবস্থা, পিছিয়ে-থাকা সমাজের পড়ুয়াদের মাসিক হাজার টাকার বৃত্তি, চাকরির পরীক্ষার্থীদের ১৫ হাজার টাকা এককালীন সাহায্য, অটোচালকদের জন্য বিনামূল্যে বিমার প্রতিশ্রুতি এ বার বিজেপির জয়ের অন্যতম ‘অনুঘটক’ হয়েছে। পাশাপাশি, অমিত শাহের ‘বুথ লেভেল ম্যানেজমেন্ট’ কৌশল সংগঠিত ভাবে ইভিএম পর্যন্ত টেনে এনেছে প্রতিষ্ঠানবিরোধী ভোটকে।

দোষারোপের রাজনীতির ইতি

গত ১০ বছরে দিল্লির বায়ুদূষণ থেকে সরকারি পরিষেবায় ঘাটতি— সমস্ত বিষয়েই কেন্দ্র এবং পড়শি রাজ্য উত্তরপ্রদেশ-হরিয়ানার উপর দায় চাপিয়েছেন কেজরী। আমলা বদল, পুরবোর্ড গঠন নিয়ে প্রকাশ্যে সংঘাতে জড়িয়েছেন উপ রাজ্যপালের সঙ্গে। এ বারের ভোটে আপের সেই দোষারোপের কৌশল কাজ করেনি। বরং মোদী-শাহদের ‘ডবল ইঞ্জিন’ উন্নয়নের আবেদনে সাড়া মিলেছে। ভোটের আগে আপ প্রধান হরিয়ানার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে যমুনার জলে বিষ মেশানোর অভিযোগ তোলার পর সমাজমাধ্যমে তাঁকে বিদ্রুপ করার ঢল নেমেছিল।

দিল্লির ভোটে এ বারেও খয়রাতিতেই ভরসা রেখেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেজরী। মূলত নিম্নমধ্যবিত্ত, গরিব, ঝুপড়িবাসীদের সমর্থন পেয়ে থাকে আপ। সেই ভোট পেতে এ বার বিজেপি বিপুল অর্থ ঢালছে বলে ভোটের আগে আপ নেতৃত্ব অভিযোগ তুলেছিলেন। এ বিষয়ে কেজরী স্বয়ং মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারকে নিশানা করেছিলেন। চলতি মাসে অবসরের পর রাজীবকে অন্য কোনও ‘লোভনীয় পদে’ পুনর্বাসন দেওয়া হবে বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারকে নিশানা করার রাজনীতি ‘ব্যুমেরাং’ হয়েছে আপের কাছে।

দিল্লির বিভিন্ন বস্তিতে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক ‘পূর্বাঞ্চলী’ (বিহার ও পূর্ব উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা) ভোটাররা গত এক দশক ধরে আপকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু এ বার মোদীর মুখে প্রতিটি সভায় পূর্বাঞ্চলীদের স্বার্থরক্ষার অঙ্গীকার পরিস্থিতি বদলে দিয়েছিল। এমনকি, শাহের মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে বস্তিবাসীদের উপর জুলুমবাজির অভিযোগেও সাড়া মেলেনি।

ফিকে হয়েছে কেজরীর ভাবমূর্তি

স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির কথা বলে অণ্ণা হজারের লোকপাল আন্দোলনের সঙ্গী কেজরী ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু আবগারি মামলায় গ্রেফতারির পরে তা ফিকে হয়ে গিয়েছিল অনেকটাই। ‘জেল কা জবাব ভোট সে’ স্লোগান ভোটারদের মনে দাগ কাটতে পারেনি। বরং জেলে বসে সরকার চালানোর নজির নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। শেষ পর্যন্ত ভোটের পাঁচ মাস আগে ইস্তফা দিয়ে আতিশী মার্লেনার হাতে মুখ্যমন্ত্রিত্ব তুলে দিতে হয়েছিল আপের প্রতিষ্ঠাতা-প্রধানকে। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বিপুল সরকারি খরচে কেজরীর ‘শিসমহল নির্মাণ’ নিয়ে মোদীর পাশাপাশি ‘ইন্ডিয়া’র শরিক কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীও কটাক্ষ করেছিলেন। গোটাটাই ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে কেজরী দাবি করলেও দিল্লিবাসী ভরসা রাখেননি তাঁর সেই সাফাইয়ের উপর। এই আবহে দিল্লির হারের জেরে ‘ইন্ডিয়া’য় কেজরীর প্রভাব কমবে বলে মনে করছেন অনেকেই। সে ক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধী রাজনীতির সেই শূন্যস্থান পূরণে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই হয়ে উঠতে পারেন বিকল্প।

ইঙ্গিত ছিল লোকসভা ভোটেই

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হন মোদী। দিল্লির সাতটি আসনেই জিতেছিল বিজেপি। ঠিক তার পরের বছরেই দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে কিন্তু বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল আপ। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট এবং ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটেও দেখা গিয়েছিল একই সমীকরণ। কিন্তু ওই চারটি ভোটেই বিজেপি, আপ এবং কংগ্রেস পৃথক ভাবে লড়েছিল।

গত বছরের লোকসভা ভোটে বিজেপিকে হারাতে আসন সমঝোতা করেছিল আপ এবং কংগ্রেস। কিন্তু তাতে ফল বদলায়নি। লোকসভা ভোটের হিসেব অনুযায়ী দিল্লির ৭০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি ৫২ এবং আপ-কংগ্রেস জোট ১৮টিতে এগিয়ে ছিল। বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল ৫৬ শতাংশের বেশি ভোট। ‘ইন্ডিয়া’র প্রায় ৪১ শতাংশ। মোটের উপর বিধানসভা ভোটের ফলেও তেমনই সমর্থন দেখা গিয়েছে। অর্থাৎ, গত দু’বারের মতো এ বার আর লোকসভা এবং বিধানসভায় আলাদা অঙ্ক মেনে ভোট দেয়নি দিল্লি।

কী হবে পঞ্জাবে

বিধানসভা ভোটের এক সপ্তাহ আগে ‘রহস্যজনক’ গাড়ি থেকে নগদ আট লক্ষ টাকা এবং মাদক উদ্ধারের ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক তরজা ছড়িয়েছিল দিল্লিতে। কারণ, টাকা ও মাদকের সঙ্গে সেই গাড়ি থেকে আপের প্রচারপত্র মিলেছিল বলেও দিল্লি পুলিশ দাবি করে। গাড়িটি আটক করা হয়েছিল পঞ্জাব ভবনের সামনে থেকে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশনও ছিল পঞ্জাবের। সে সময়ই পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভাগবন্ত মান অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর সরকার ফেলার ‘চক্রান্ত’ করছে বিজেপি। দিল্লিতে আতিশী সরকারের পতনের পরে কেজরী-ঘনিষ্ঠ মানের ভবিষ্যৎ ঘিরে তাই তৈরি হয়েছে জল্পনা এবং সংশয়।

পরিষদীয় পাটিগণিতের হিসেবে অবশ্য মান সরকারের কোনও সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। ১১৭ আসনের পঞ্জাব বিধানসভায় আপ একাই ৯৩। বিজেপি মাত্র দুই। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের ১৬ এবং বিজেপির প্রাক্তন সহযোগী শিরোমণি অকালি দলের তিন জয়ী বিধায়ক রয়েছেন। কিন্তু এ-ও সত্যি যে, অতীতে অরুণাচল প্রদেশের মতো রাজ্যে ‘শূন্য’ থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের ‘জাদু’ দেখিয়েছে মোদী-শাহের দল। তা ছাড়া, গত কয়েক বছরে অমরিন্দর সিংহ, সুনীল ঝাখরের মতো ‘প্রভাবশালী’ কংগ্রেস নেতাদের দলে টেনে সে রাজ্যে অনেকটাই শক্তিবৃদ্ধি ঘটেছে পদ্মের। দিল্লিতে এ বারের ভোটের আগে টিকিট না পেয়ে আট জন আপ বিধায়ককে একযোগে বিজেপিতে যেতে দেখা গিয়েছে। ২০২৭ সালের গোড়ায় উত্তরপ্রদেশের সঙ্গেই পঞ্জাবে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। কংগ্রেসের ‘হাত’ ছেড়ে কি সেই ভোটে কেজরী-মানের পাশে দাঁড়াবেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব? দিল্লির সঙ্গেই উত্তরপ্রদেশের মিল্কিপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে হয়েছিল বুধবার। ২০২২ সালে সমাজবাদী পার্টির জেতা ওই আসনও এ বার ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি।

Delhi Assembly Election 2025 Delhi Election Results 2025 Delhi AAP Aam Aadmi Party Arvind Kejriwal Atishi Marlena Bhagwant Mann Punjab Punjab CM

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।