মণিপুরে হিংসার প্রতিবাদ। ছবি: পিটিআই।
মণিপুরে চূড়াচাঁদপুর ও বিষ্ণুপুর জেলার সীমানা এলাকায় গত কাল রাতে দুই গোষ্ঠীর বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। রাত দশটা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল ছাড়ে। কিন্তু পরে আবার গুলির লড়াই শুরু হয়, চলে রবিবার ভোর পর্যন্ত। ঘটনায় এক মহিলা জখম হয়েছেন। আগুন লাগানো হয়েছে একটি স্কুল ও কয়েকটি পরিত্যক্ত বাড়িতে।
অন্য দিকে কাংপোকপিতে নারী নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই নারী নির্যাতনের আরও কয়েকটি অভিযোগ সামনে এনেছে কুকি যৌথ মঞ্চ আইটিএলএফ। তাদের দাবি, ৪ মে, ইম্ফলের লাম্ফেলে এক মহিলা পরিবার-সহ শিবিরে আশ্রয় নিতে যাওয়ার পথেই জনতা তাঁকে ঘিরে ধরে। মহিলা বাহিনী তাঁকে মারধর করে নগ্ন করে ফেলে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে দৌড়তে ও হাঁটতে বাধ্য করা হয়। মহিলারাই যুবকদের জোর করতে থাকেন, যেন তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। জেলাশাসকের দফতরের দরজায় থাকা পুলিশ তাঁকে কোনও সাহায্য করেনি। মাথায় কাঠের গুঁড়ির বাড়ি খেয়ে জ্ঞান হারান তিনি। তারপর কী হয়েছে জানেন না। জ্ঞান ফেরে হাসপাতালে। কয়েক টুকরো হওয়া খুলিতে জটিল অস্ত্রোপচার হয় এমস হাসপাতালে। জ্ঞান ফিরলে জানতে পারেন তাঁর স্বামী ও শাশুড়িকে খুন করা হয়েছে।
৪ মে, মণিপুর সরকারের অবর সচিব গৌজাভুং তাঁর ছেলে, পুত্রবধূ, মেয়ে ও মাসিকে নিয়ে গাড়িতে সিআরপি-র ত্রাণ শিবিরে পালিয়ে আসার সময়ে লাম্ফেলে আড়াইশো জন দুষ্কৃতী গাড়ি আক্রমণ করে আগুন লাগায়। নিষ্ঠুর ভাবে পিটিয়ে মারা হয় গৌজাভুং ও তাঁর ছেলেকে। পুত্রবধূ মাথা ও সারা শরীরে আঘাত নিয়ে আইসিইউতে ভর্তি।
৪ মে, দুই কুকি ছাত্রীকে নার্সিং কলেজ থেকে টেনে বার করেন মেইতেইরা। সে ক্ষেত্রেও মহিলারাই তাঁদের ধর্ষণ ও হত্যা করার জন্য সঙ্গী যুবকদের উপরে চাপ দিতে থাকেন বলে অভিযোগ। পরে হাসপাতালে জ্ঞান ফেরে তাঁদের।
৪ মে, চূড়াচাঁদপুরের শিবিরে গুলিতে জখম ৭ বছরের ছেলেকে নিয়ে ইম্ফলের দিকে আসা কুকি স্বামীর মেইতেই স্ত্রী ও তাঁর মেইতেই সঙ্গিনীকে অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়।
৬ মে, কাংপোকপিতে ৪৫ বছরের মহিলার মাথা ও হাত-পা কেটে পুড়িয়ে মারা হয়।
১৬ মে, ১৮ বছরের এক ছাত্রীকে ইম্ফলের রাস্তায় এটিএমের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায় মেইতেই যুবকেরা। পরে তাঁকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে বন্দুকধারীর দল। সুযোগ বুঝে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বাঁচান ওই তরুণী।
জোমি ছাত্র সংগঠনও ২৭ জন মহিলার কথা সামনে এনে দাবি করেছে, তাঁদের মধ্যে ৭ জনকে ধর্ষণ, ৮ জনকে থেঁতলে মারা, ২ জনকে পুড়িয়ে, ৩ জনকে গণপ্রহার ও ৫ জনকে গুলি করে মারা হয়েছে।
মেইতেইরাও পাল্টা কিছু ঘটনা প্রকাশ করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে ৪ মে কাকচিং জেলায় নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনীর সদস্য, প্রয়াত এস চূড়াচাঁদ সিংহের অশীতিপর স্ত্রীকে নিজের বাড়িতে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে কুকিরা। তাঁর আধপোড়া দেহ, চূড়াচাঁদের পোড়া মেডেল, শংসাপত্র, দেওয়ালে গুলির দাগের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।
এ দিন ফের হিংসা নিয়ে এন বীরেন সিংহের সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন বিজেপিরই কুকি বিধায়ক পাওলিয়েনলাল হাওকিপ। এক নিবন্ধে তাঁর দাবি, হিংসায় রাজ্য সরকারের মদত ছিল বলেই দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষকে ‘মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের’ চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। বীরেন দাবি করেছিলেন, পপির খেত ধ্বংস করার ফলেই গোলমাল শুরু হয়েছে।
এর মধ্যেই রবিবার ইম্ফল পৌঁছন দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল। তাঁর অভিযোগ, আগে তাঁকে স্বাগত জানালেও রাজ্য সরকার এখন তাঁকে জানায় আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি খারাপ, তাই তিনি যেন সফর স্থগিত রাখেন। তাঁর কথায়, “আমি মণিপুরে রাজনীতি করতে আসিনি। আমি জানি আমারও প্রাণের ভয় রয়েছে, তাও এসেছি। আমি এমন কিছু করব না যাতে রাজ্য সরকার কোনও রকম সমস্যায় পড়ে।” তাঁর কথায়, “আমি সকলকে বিশেষত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে আবেদন জানাচ্ছি, অবিলম্বে মণিপুরে আসুন। তিন মাস ধরে মণিপুর জ্বলছে। কিন্তু যাঁদের এখানে আসার কথা তাঁরা আসছেন না, নিজেদের কাজ করছেন না বলেই আমায় আসতে হয়েছে। ওঁরা এলেই আমি চলে যাব।” স্বাতী জানান, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া মহিলারা নিরাপত্তা পাচ্ছেন কি না, তাঁরা কেমন আছেন, কাউন্সেলিং পেয়েছেন কি না, কোথায় থাকছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কি না, তাঁরা আইনি সাহায্য পেয়েছেন কি না- সেই সব তিনি সরেজমিনে দেখতে এসেছেন। দেখা করবেন মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের সঙ্গে।
অসম তৃণমূলের বক্তব্য ‘‘মণিপুরের পূর্ব ইম্ফলে ১৮ বছরের তরুণীকে মহিলা বাহিনী সশস্ত্র হামলাকারীদের হাতে তুলে দেয়। পরে তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়। ঘটনার এত দিন পরে এ সব কথা সামনে আসছে। ফলে এমন কত বীভৎস ঘটনা চাপা পড়ে রয়েছে তা বোঝা কঠিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy